– সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
ইসলাম হচ্ছে ওহী বিশিষ্ট সুশৃঙ্খলিত এবং আদর্শিক ধর্ম। অর্থাৎ পবিত্র কুরআন এবং রাসূলের জীবনাদর্শ (হাদীস ও সুন্নাহ) এই দুই মিলিয়েই হচ্ছে পরিপূর্ণ ইসলাম। পবিত্র কুরআনকে অনুসরণ করতে হলে অবশ্যই রাসূল সা. এর জীবনাচরণকে নিজের জীবনে প্রতিফলিত করাতে হবে। রাসুলুল্লাহর পরিপূর্ণ জীবনাচরণই হচ্ছে ইসলামের মডেল।
রাসুলুল্লাহর (সা:) ভালোবাসা এবং জীবনাদর্শ ব্যতীত কোনো মুসলিম দাবিদার পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না। কেউ নিজেকে মুসলিম দাবি করে ইসলামের আচার অনুষ্ঠান পালন করতে চাইলে ; অবশ্যই তার ইবাদত ও আমলে রাসুলুল্লাহর নির্দেশিকা থাকতে হবে। রাসূল(সা:) যা যা তাঁর উম্মতের জন্য নির্দেশ এবং নিষেধ করে গেছেন ; তা ব্যতিরেকে কেউ নতুন কিছু (সওয়াবের আশায়) পালন করলে তা কখনোই আল্লাহ মেনে নিবেন না। এটাই বিদআত। আল্লাহ্ সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়ে বলেন,
“রাসূল তোমাদের যা দেন তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক।” (সুরা হাশর – ৭)
অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ (সা:) তাঁর জীবনে যা যা তাঁর সাহাবীদের (রা:) করতে বলেছেন এবং যা যা করতে নিষেধ করেছেন তা আমাদের মেনে চলতে হবে। আর রাসূলকে মেনে চলাটাই হচ্ছে সম্পূর্ণ ইসলাম। যারা রাসূলকে আদর্শরূপে গ্রহণ করতে পারবে তারাই হচ্ছে আল্লাহর পরীক্ষায় কৃতকার্য। আল্লাহ বলেন,
“আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর তাকওয়া অবলম্বন করে, তারাই কৃতকার্য।”(সুরা নুর – ৫২)
এই আয়াতে সুন্দরভাবে বলা হয়েছে, আল্লাহ এবং রাসূলের (সা:) আনুগত্য তথা অনুসরণ যারা করবে তারাই আল্লাহর কাছে কৃতকার্য।
আল্লাহর বানী পবিত্র কুরআনের পর, ইসলামে অনুকরণীয় এবং অনুসরণীয় একমাত্র ব্যক্তি হচ্ছে রাসূল (সা:)। সুতরাং আমরা যা-ই ইসলামের নামে পালন করি না কেন, তা রাসূলের আদর্শে সমর্থিত হতে হবে। আল্লাহ বলেন,
” নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহর জীবনের মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ; যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের আশা রাখে এবং আল্লাহকে বেশি স্মরণ করে।’ (সুরা আহযাব : আয়াত ২১)
অর্থাৎ আমাদেরকে ইবাদত, আমল এবং জীবনযাপনে পরিপূর্ণভাবে রাসূলকে অনুসরণ করতে হবে। আমাদের ইবাদতসমূহ যদি রাসূলের (সা:) সহীহ্ সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত না হয়, তবে তা কখনোই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। রাসূলের সহীহ্ সুন্নাহ ছাড়া নিজের খেয়াল-খুশি (প্রবৃত্তির অনুসরণ) বা অন্যের অনুসরণ অথবা পূর্বপুরুষদের অনুসরণ কখনোই ইসলাম সমর্থন করে না। এমন করলে সেটা হবে প্রবৃত্তির অনুসরণ। আল্লাহ বলেন,
” অতঃপর তারা যদি (হে রাসূল) আপনার কথায় সাড়া না দেয়, তবে জানবেন, তারা শুধু নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। আল্লাহর হেদায়েতের পরিবর্তে যে ব্যক্তি নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তার চাইতে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? নিশ্চয় আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ দেখান না। [সুরা কাসাস: ৫০]
সুতরাং এই আয়াতে সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, রাসূলের নির্দেশিত পথ ছাড়া নিজের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করা যাবে না। যে-ই নিজের খেয়াল -খুশির তথা প্রবৃত্তির অনুসরণ করবে সে ই হবে পথভ্রষ্ট। আল্লাহ্ কখনোই জালেমকে সঠিক পথ দেখান না। আর সকল পথভ্রষ্টের শেষ ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম।
সেইসাথে আল্লাহকে ভালোবাসা ছাড়া কেউ কখনোই ঈমানদার হতে পারে না। আর আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে পূর্বশর্ত হিসাবে আল্লাহ নিজেই ঘোষণা করছেন,
‘(হে রাসূল! আপনি) বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ কর; তাহলেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল দয়ালু।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৩১)
এই আয়াতে কত সুন্দর করে আল্লাহ বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিচ্ছেন যে, তাঁর ভালোবাসার পূর্বশর্তই হচ্ছে তাঁর রাসূলকে অনুসরণ। প্রতিটি মুসলিমের জীবন হতে হবে রাসূলের অনুসরণে তাঁর আদর্শে পরিপূর্ণ। হোক সেটা ইবাদত, আমল কিংবা দৈনন্দিন জীবনযাপন। সুতরাং রাসূলের অনুসরণ বিহীন জীবন সেটা মরুভূমির ন্যায়। যে ব্যক্তির জীবনে রাসূলের অনুসরণ নেই সে ব্যক্তি কখনোই ঈমানদার হতে পারে না।
সুতরাং নিজেদের মুসলিম দাবি করলে অবশ্যই আমাদের জীবনযাপনে রাসূলের ভালোবাসা ও তাঁর কর্মকাণ্ডের ছায়া থাকতে হবে। যারা নিজেদের জীবনে রাসূল (সা:) কে প্রাধান্য দিতে পেরেছেন তারাই সত্যিকারের প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে।
একটি ভ্রান্তির অবসান:
আমাদের সমাজে নামধারী অনেকে মুসলিম আছে। যাদের ঈমান, আকীদা, আচার, আচরণে, ইবাদত, আমলে কোথাও রাসূলের আদর্শ নেই। অর্থাৎ তাদের ঈমান এবং আমল গুলো নিজেদের খেয়াল – খুশি বা অন্যের শেখানো পদ্ধতিতে পরিচালিত। যা রাসুলুল্লাহর (সা:) আনিত ইসলাম ধর্মের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। আমাদের উপমহাদেশে যে ইসলাম পালন করা হয় তা হচ্ছে সুফিবাদী ইসলাম।
সুফিবাদ এমন একটি মতবাদ যা ইসলাম থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইসলামে যেকোনো ইবাদত বা আমল ইসলামের চালাতে হলে অবশ্যই কুরআন এবং রাসূলের সুন্নাহ দ্বারা সরাসরি স্বীকৃত হতে হবে। আজ উপমহাদেশে ইসলামের নামে সুফিবাদীরা যা কিছু পালন করছে, তার স্বীকৃতি রাসূলের আদর্শে নেই। রাসুলুল্লাহর আদর্শে যা থাকবে না তা কখনোই ইসলাম নয়।
সুতরাং আজ ইবাদত ও আমলের নামে সুফিবাদীরা নতুন নতুন যেসব বিদআত সৃষ্টি করেছে তা কখনোই প্রকৃত ইসলাম নয়। আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল (সা:) কখনোই এইসব মেনে নিবেন না। রাসূল (সা.) বলেন,
‘যে এমন ইবাদাত করল যাতে আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই, তা পরিত্যাজ্য হিসাবে গণ্য হবে। ’ (মুসলিম, হাদিস নং : ৪৫৯০)
রাসূল (সা:) আরো বলেন-
“নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম কথা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব, সর্বোত্তম পদ্ধতি হচ্ছে রাসুলুল্লাহ (সা:) এর পদ্ধতি। আর নিকৃষ্ট কাজ হচ্ছে শরীয়াতে নতুন কিছু সৃষ্টি করা, এবং প্রত্যেক নতুন সৃষ্টি ( বিদ’আত) হচ্ছে ভ্রষ্টতা। (মুসলিম-৭৬৮)
অন্য হাদীসে এসেছে,
“যে আমার সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে সে আমার দলভুক্ত নয়”। (বুখারীঃ ৫০৬৩)
এইসব হাদীস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে রাসূল (সা:) নির্দেশ দিচ্ছেন যে, কেউ নিজের মতো বা অন্যের দেখানো কোনো নতুন ইবাদত পালন করলো ; যে ইবাদতের কোনো নির্দেশনা রাসূল বা তাঁর সাহাবীগণ (রা:) করেননি। সেইসব ইবাদত গ্রহণযোগ্য নয় বরং পরিত্যাজ্য।
ঈমান আকিদাসহ যেকোনো ইবাদত ও আমল তখনই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। যখন তা আল্লাহর রাসূলের অনুসরণে এবং অনুকরণে পালন করা হবে। প্রবৃত্তির অনুসরণ, পূর্বপুরুষদের অনুসরণ বা অধিকাংশের অনুসরণ কখনোই ইসলাম নয়। অতএব নিজেদের পরিপূর্ণ ঈমানদার দাবি করতে চাইলে অবশ্যই রাসুলুল্লাহ অনুসরণ, আনুগত্য এবং অনুকরণ করতে হবে। সুতরাং রাসূলের (সা:) আদর্শ এবং অনুসরণই হচ্ছে পরিপূর্ণ ইসলাম।