আব্দুল্লাহ আল-ফারুক
সাইয়্যেদুনা ইবরাহিম আলাইহিস সালাম জন্মগ্রহণ করেছিলেন আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ১৯০০ সালে। অর্থাৎ সাইয়্যেদুনা ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মের প্রায় দুই হাজার বছর আগে।
তিনি যেই এলাকায় জন্মগ্রহণ করেছেন এবং বড় হয়েছেন, সে এলাকার নাম— কুথা। ঐতিহাসিক বাবেল নগরী থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে এ নগরীর অবস্থান। এখানে পাষণ্ড নমরুদ ও তার দলবল তাঁকে অগ্নিকুণ্ডে পুড়ে মারার ধিকৃত কাণ্ড ঘটাতে চেয়েছিল। কিন্তু আল্লাহর বিস্ময়কর কুদরতে তিনি এই দুর্ঘটনার কবল থেকে নিরাপদে বেঁচে আসতে সমর্থ হন।
এ ঘটনার পর তিনি এ নগরী থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন অঞ্চল হয়ে চলে আসেন ফিলিস্তিনে। বাকি জীবন তিনি এখানেই অতিবাহিত করে মহান আল্লাহর দ্বীন প্রচার করেন।
আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্মগ্রহণ করেছেন ৫৭০ ঈসাব্দে। অর্থাৎ ইবরাহিম আলাইহিস সালামের আড়াই হাজার বছর পর।
৬৩৬ ঈসাব্দে সাইয়্যেদুনা উমর ফারুক রাদি.-এর শাসনামলে কাদিসিয়্যা বিজয়ের পর সাইয়্যেদুনা সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদি.-এর নির্দেশে সাইয়্যেদুনা যাহরাহ ইবনে হাভিয়্যাহ রাদি. কুথা নগরীর ওপর আক্রমণ করেন। সেখানকার গভর্নর শাহরিয়ারকে হত্যার মাধ্যমে তারা নগরীর ওপর বিজয় পতাকা উড্ডীন করেন।
সা’দ রাদি. বাবেল থেকে কুথা নগরীতে এসে পুরো শহর পর্যবেক্ষণ করেন। এখানে এসে তিনি সাইয়্যেদুনা ইবরাহিম আলাইহিস সালামের ওপর দরুদ পাঠ করে এ আয়াত তিলাওয়াত করেন,
{وَتِلْكَ الأيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ النَّاسِ}
আর এ দিনগুলোকে আমি মানুষের মধ্যে পালাক্রমে আবর্তন ঘটিয়ে থাকি। [সূরা আলে ইমরান : ৩/১৪০]
তাহলে দেখুন, যেই নগরীতে আল্লাহর মহান বন্ধু ইবরাহিম আলাইহিস সালামের সঙ্গে অসভ্য আচরণ হয়েছিল, প্রাণঘাতী অপকর্ম হয়েছিল, সেই অত্যাচারী শক্তির পতন হয়েছিল ঘটনার কমপক্ষে ২৫০০ বছর পর।
আর আজ আমরা কোনো জুলুম ঘটলেই সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর কুদরতি বিচার চেয়ে বসি। না এলে হতোদ্যম হয়ে যাই। আশার ফানুস নিভিয়ে বিরস বদনে কাঁদতে শুরু করি।
এটা ঠিক নয়। মুমিন কখনো হতাশ হতে পারে না। মুমিনকে অবশ্যই ইতিবাচক হতে হবে। আসলে মুমিন বান্দার জীবনে ঈমান যতক্ষণ আছে বুকের ভেতর, তার হারানোর কিছু নেই। আমাদের জান-মালও আল্লাহ কিনেই নিয়েছেন জান্নাতের বিনিময়ে। এ কথা আল্লাহ বলে দিয়েছেন পবিত্র কুরআনে। তাই ঈমানের উপর অটল থেকে এর দাবিগুলো পূরণ করে যাওয়াই আমাদের দায়িত্ব। বিপদ মুসিবত যতই আসুক, জয়-পরাজয়ের হিসাব-নিকাশের সাথে আমাদের প্রতিদান কখনও বাড়বে বৈ কমবে না কোনো দিন।
আসুন, আমরা মহান নবীদের জীবন থেকে ধৈর্যের সবক নিই।