সন্তান ভূমিষ্ঠের পর পিতা-মাতার করণীয় ৬টি সুন্নত

রকিব মুহাম্মাদ


পৃথিবীজুড়ে মুসলমানদের ঘরে ঘরে প্রতিদিন আগমন হচ্ছে নতুন মেহমান ও নতুন সন্তানের। কিন্তু আমরা কজন আছি যারা এ সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের সূচনা লগ্নে ইসলামি আদর্শের অনুশীলন করি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাতলানো সব সুন্নতগুলো পালন করি! পরিতাপের বিষয়, আমরা অনেকেই তা করি না। এর কারণ, সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে আমাদের উদাসীনতা। তবে এটাও ঠিক যে, ইচ্ছা থাকা সত্বেও অনেকে না-জানার কারণে তা করতে সক্ষম হন না। চলুন সুন্নত ৬টি সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-

১. নবজাতকের কানে আযান দেওয়া

হযরত আবু রাফে রা. তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, “আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আলীর পুত্র হাসানের কানে নামাযের আযানের মত আযান দিতে দেখেছি, যখন ফাতেমা (রাযি:) তাকে জন্ম দেন।” হাদীসটিকে আবু দাউদ এবং তিরমিযী বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী সহীহ বলেছেন। (তিরমিযী, হাদীস নং- ১৫৫৩)

সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই আযান দিতে হবে। যেন তার কানে আল্লাহর মহত্বের প্রথম আওয়াজ প্রবেশ করে এবং শয়তান দূরে চলে যায়।

২.তাহনীক করা

খেজুর চিবিয়ে পানির মত করে শিশুর মুখে দেয়া যেন এর কিছুটা তার পেটে প্রবেশ করে। এটাকেই তাহনীক বলা হয়। তবে খেজুর না পাওয়া গেলে অন্য যে কোন মিষ্টি দ্রব্য যেমন মধু বা অন্য কিছু দ্বারাও এভাবে তাহনীক করা যায়। তাহনীক করা সুন্নত এবং তা নেককার ব্যক্তি কর্তৃক হওয়া বাঞ্ছনীয়।

আবু মুসা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- “আমার ছেলে সন্তান হলে আমি তাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট নিয়ে আসি, তিনি তার নাম রাখেন ইব্রাহীম এবং খেজুর দ্বারা তাহনীক করেন এবং তার জন্য বরকতের করেন, তার পর সন্তানকেকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেন।”  (বুখারী-হাদীস নং৫৪৬৭, মুসলিম- হাদিস নং ২১৪৫)

৩. প্রথম দিনে নবজাতকের নাম নির্ধারণ

বাচ্চার নাম যেমন জন্মের সপ্তম দিন অর্থাৎ আক্বীক্বার দিন নির্ধারণ করা সুন্নত তেমন প্রথম দিনেও নাম রাখা বৈধ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “রাতে আমার পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে, আমি আমার পিতার নামে তার নাম ইব্রাহীম রেখেছি”। (বুখারী- হাদীস নং ১৩০৩, মুসলিম- হাদীস নং ২৩১৫)

৪. সপ্তম দিনে আকীকা করা

আকীকা করা সুন্নতে মুআক্কাদাহ। তাই যে ব্যক্তি আকীকা করার সামর্থ্য রাখে, সে যেন অবশ্যই আকীকা করে। আর যার সামর্থ্য নেই তার উপর আকীকা জরুরী নয়।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “নবজাতকের আকীকা আছে। তাই তোমরা তার পক্ষ হতে কুরবানী করো এবং তার মাথার চুল পরিষ্কার কর। (বুখারী, আকীকা, নং৫৪৭১)

তিনি আরও বলেন: “প্রত্যেক বাচ্চা তার আকীকার বিনিময়ে বন্ধক থাকে, সপ্তম দিনে তার পক্ষ হতে জবাই করা হবে এবং তার মাথা মুণ্ডন করা হবে এবং নাম রাখা হবে”। (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং৩১৬৫, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ)

৫. নবজাতকের মাথা মুণ্ডন এবং চুলের ওজন বরাবর রৌপ্য দান করা

জন্মগ্রহণের সপ্তম দিনে যেমন আকীকা করা সুন্নত, তেমনি সেদিন নবজাতকের মা কর্তৃক সন্তানের চুলগুলো মুণ্ডন করা ও চুলের ওজন বরাবর রৌপ্য সদকা করাও সুন্নত। আলী রা. বলেন, “আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাসানের পক্ষ হতে ছাগল আকীকা করেন এবং ফাতেমা রাযি. কে বলেন- তার মাথা মুণ্ডন করো এবং চুলের ওজন বরাবর রৌপ্য সদকা করো”। (তিরমিযী, অধ্যায়, আযাহী, হাদীস নং ১৫১৯)

৬. খতনা করা

খতনা করা প্রকৃতিগত বিষয়, যা ইসলাম সমর্থন করেছে এবং তা গুরুত্বের সাথে পালন করেছে। তাই ফুকাহাদের মধ্যে ইমাম শাফেয়ী, মালিক ও আহমদ রহ. এই আমলকে ওয়াজিব বলেছেন।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “পাঁচটি বিষয় স্বভাবগত, খতনা করা, নাভির নিচের চুল পরিষ্কার করা, মোচ কর্তন করা, নখ কর্তন করা এবং বগলের লোম ছিঁড়ে ফেলা”। (বুখারী, হাদিস নং ৫৮৯১, মুসলিম, অধ্যায়, ত্বাহারাহ )

খতনা করার নির্দিষ্ট কোন সময় সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়, তবে উলামায়ে কেরামের মতে সাবালক হওয়ার পূর্বে তা করে নেয়া উচিত।

(দ্য ইসলামিক ইনফরমেশন ডটকম অবলম্বনে লিখেছেন রকিব মুহাম্মাদ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *