আবদুল্লাহ তালহা
ইসলামপূর্ব জাহেলি যুগের বিখ্যাত কবি খানসা। ভাইয়ের মৃত্যুতে যিনি শোককাব্য রচনা করে আরবি সাহিত্যের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।
এক সময় ইসলামের আলোক-ধন্য হলেন কবি খানসা। তিনি হয়ে উঠলেন ‘হযরত খানসা রাদিয়াল্লাহু আনহা’। হৃদয়ের গভীরে দ্বীনে ইসলামের প্রতি প্রগ্রাঢ় মমতা বাসা বাঁধল তাঁর। সেই প্রেম-ভালোবাসার অনন্য প্রকাশ ঘটালেন ঐতিহাসিক কাদেসিয়ার যুদ্ধে।
তাঁর ছিল কয়েকজন সন্তান। সবাই ছিলেন যুবক। তারা ছিলেন স্বামীহীন খানসার একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু খানসা রা. আজ কাদেসিয়া প্রান্তরে দ্বীনের জন্য তাঁর ভালোবাসা ও ত্যাগের নজরানা পেশ করবেন।
যুদ্ধের শুরুলগ্নে সন্তানদের উদ্দেশ্যে খানসা রা. বললেন, তোমরা স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেছো। স্বেচ্ছায় হিজরত করেছো। তোমরা যেমন একই পিতার সন্তান, তেমনি অভিন্ন মায়ের সন্তান। আমি তোমাদের পিতার সাথে কখনো খেয়ানত করিনি। তোমাদের মামাদের অপমানের সম্মুখিন করিনি। তোমাদের বংশপরিচয় বদলাইনি।
তোমরা অবিচলতার সাথে দাঁড়াবে। আল্লাহকে ভয় করবে। তাহলে তোমরা সফলকাম হবে। যখন তোমরা দেখবে যুদ্ধ ভয়ালরূপ ধারণ করেছে তখন তোমরা গভীরে প্রবেশ করবে। নির্ভীকচিত্তে লড়াই করে যাবে। তাহলে তোমরা হয়তো গনিমত লাভ করবে আর আখেরাতের জীবনে সম্মান-মর্যাদা লাভ করবে।
হে পুত্ররা! তোমরা মৃত্যু তালাশ করো, অমর জীবন লাভে ধন্য হবে।
মায়ের কথায় উদ্দিপ্ত হয়ে সন্তানরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লেন।
যুদ্ধ শেষ হলো। ফিরতি কাফেলাকে হযরত খানসা (রা.) তাঁর সন্তানদের হালত জিজ্ঞেস করছিলেন। একজন বলল, আপনার সবগুলো পুত্রই শহিদ হযে গেছে। হযরত খানসা জিজ্ঞেস করলেন, আঘাত কি তাদের বুকে লেগেছিল, না পিঠে?
লোকটি বলল, বুকে।
তখন হযরত খানসা বললেন, আল্লাহর শোকর! তিনি আমার সন্তানদেরকে তাঁর রাস্তায় মৃত্যুদান করে আমাকে মর্যাদাবান করেছেন। আমি আল্লাহর কাছে আশা করি তিনি কাল কেয়ামতের ময়দানে আমাদের সবাইকে তাঁর রহমতের ছায়ায় রাখবেন।