মুহাম্মদ ত্বহা হুসাইন: তাবলিগ জামাতের পথচলার এখনও একটি শতাব্দী পার হয়নি। অথচ এই অল্প সময়ের ব্যবধানে তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম পৌঁছে গেছে পৃথিবীর আনাচে-কানাচে।
বিশ্ব মানচিত্রে এমন দেশ তো নয়ই; বরং এমন ভূখণ্ড পাওয়া দুষ্কর যেখানে ঈমানী এই নীরব আন্দোলন পৌঁছে যায়নি। এতো বিস্তৃত এবং এতে দ্রুত প্রসার লাভ করা কোনো আন্দোলনের নজির বিশ্বের ইতিহাসে দুর্লভ।
এই সংক্ষিপ্ত সময়ের পথচলার এই ‘ঈমানী তাহরীক’ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিখ্যাত আলেম, মনীষীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, তাদের সোহবত-পরামর্শ লাভে ধন্য হয়েছে। তারা স্বীয় ক্ষেত্রে কাজ করে গেলেও এই ঈমানী তাহরীকের ব্যাপারে তাদের রয়েছে প্রায় ঐক্যবদ্ধ একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি।
আমরা কিতাব ও পত্র-পত্রিকা ঘেঁটে সংক্ষিপ্তাকারে তাঁদের কিছু কথা তুলে ধরতে প্রয়াস পাব বলে আশা রাখি।
১. হাকীমুল উম্মত হযরত আশরাফ আলী থানবী রহ. (১২৮০-১৩৬২ হিজরী)
[বিংশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, মহান সংস্কারক, দেড় হাজারের অধিক গ্রন্থ প্রণেতা]
তিনি কোনো এক প্রসঙ্গে তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা হযরত ইলিয়াস রহ.কে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘দলীলের প্রয়োজন নেই। দলীল-প্রমাণ তো কোনো কিছুর যাচাই-বাছাই ও সত্যতা প্রমাণের জন্য পেশ করা হয়।
আমিতো বাস্তব ময়দানের আমল থেকেই এই মেহনতের ওপর পূর্ণ আশ্বস্ত। এখন আর কোনো দলীলের প্রয়োজন নেই। হে ইলিয়াস! মাশাআল্লাহ! তুমি তো আমার নিরাশাকে আশায় পরিণত করেছ। বদলে দিয়েছ আমার হতাশা।’ (হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ. আওর উনকী দীনী দাওয়াত, ১২৫-১২৬)
২. শায়খ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ বিন বায
[সৌদী আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতী, ইসলামী জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার প্রাজ্ঞ পণ্ডিত, বিগত শতাব্দীর বরেণ্য ইসলামী ব্যক্তিত্ব]
‘এই জামাতের মধ্যে অনেক উত্তম কাজ রয়েছে। তাদের কর্মকাণ্ডে রয়েছে প্রচণ্ড উদ্যম-উদ্দীপনা। তাদের ধৈর্য-সবরও অতুলনীয়। তারা তাদের দাওয়াত ও মজলিসগুলোতে নামায, যিকির, ইলম অর্জন এবং এই পথে বের হওয়ার কথা বলে।
এর দ্বারা নামাযে অমনোযোগী, শরাবখোর মুসলমানদের অনেক উপকার হয়, তারা সৎপথে ফিরে আসে। ইসলামের সহীহ আকীদা-বিশ্বাসে সমৃদ্ধ আলেমরা এই পথে এগিয়ে এসে তাদেরকে ইলম শিক্ষা ও হেদায়াতের পথে আনতে চেষ্টা করতে পারেন।’ (জামাআতুত তাবলিগ ৪৩১-৪৩৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত বিন বায রহ. সাক্ষাৎকার অবলম্বনে।
৩. মুহাদ্দিসে আসর হযরত মাওলানা ইউসুফ বিন্নুরী রহ. (১৯০৮-১৯৭৭)
[বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস। তিরমিযি শরীফের অদ্বিতীয় ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘মাআরিফুস সুনান’ -এর লেখক। জামেয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া বিননূরী টাউন করাচীর প্রতিষ্ঠাতা। করাচী থেকে প্রকাশিত মাসিক বাইয়িনাতের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক]
‘আল্লাহর কাছে কোনো বান্দার মাকবুলিয়াতের ধারণা পাওয়া যায় তার কাজের মাধ্যমে। যেমন মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস রহ. এর মাকবুলিয়াত তো তার এই কাজেই সুস্পষ্ট। সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কিয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মতের একটি জামাত সবসময় সত্যের ওপর সু-প্রতিষ্ঠিত থাকবে।’ (তিরমিযি, হাদীস ২১৯২)
আমার কাছে একথা নিশ্চিত প্রমাণিত, এই যুগে তাবলিগ জামাতই হাদীসে বর্ণিত সেই জামাত। পৃথিবীর এমন কোন ভূখণ্ড নেই, যেখানে এই মহৎ জামাতের কদম পড়েনি। মস্কো, ফিনল্যান্ড, স্পেন থেকে শুরু করে চীন ও জাপান পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া এই কাফেলার দাওয়াত আম্বিয়ায়ে কেরামের দাওয়াতের পদ্ধতির সাথে খুবই সাদৃশ্যপূর্ণ।
লোকজন তাদের কাছে আসবে, দীন শিখবে- তাঁরা সেই অপেক্ষা করে না। বরং অলি-গলিতে গিয়ে, হাট-বাজারে পৌঁছে প্রত্যেককে দীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়। মুখের কথায়, আদর্শ চরিত্রের কারিশমা ও নিজেদের আমলের সৌন্দর্য দিয়ে তারা মানুষকে আহবান করে। নিজেদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত ইসলামী আদর্শের একটি জীবন্ত নমুনা পেশ করে তারা দাওয়াত দেয়। তাই এর প্রভাবও হয় সুদূরপ্রসারী।’ (১৯৭৮ ইংরেজীর ‘বাইয়িনাত’ পত্রিকার জানুয়ারী-ফেব্র“য়ারির বিশেষ সংখ্যা ৩৭৮-৩৯১)
৪. শায়খ মুহাম্মদ ইবরাহীম তুয়াইজিরি
[সৌদী আরবের বিশিষ্ট আলেম, রাবেতা আলমে ইসলামী’র কিসমুল জালিয়াত’ -এর প্রধান সমন্বয়ক]
আমি ঈমান-ইয়াকিনের এই দাওয়াতের বিভিন্ন ইজতেমা দেখেছি। কাছে থেকে তাদের কার্যক্রম নিরীক্ষা করেছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ইলমের নূর এবং ঈমানের আলো এখান থেকেই অর্জিত হয়। আমি কুরআন এর আগে শত শত বার পড়েছি। তাফসীর অধ্যয়ন করেছি। কিন্তু দাওয়াতের এই ময়দানে আমি কুরআনের এমন অসংখ্য আয়াতের অর্থ বুঝেছি, যা এর পূর্বে অনুধাবন করতে পারিনি।
ঈমান-আকীদা এবং আল্লাহর মুহাব্বত-প্রেম উদ্বুদ্ধকরণে এর চাইতে কার্যকরী কোনো দাওয়াত আমি দেখিনি। আল্লাহর কসম, সত্যের প্রতি এই আমার সরল অভিব্যক্তি।’ (লিসানুদ দাওয়াহ ১০-১১)
৫. আল্লামা সাইয়েদ সুলাইমান নাদভী রহ.
[ভারত উপমহাদেশে জন্ম নেয়া বিশিষ্ট ইসলামী দার্শনিক, ইতিহাসবিদ, ‘সিরাতুন্নবী’ ‘সীরাতে সাইয়েদা আয়েশা রা.’ সহ সীরাত ও ইতিহাস বিষয়ক অসংখ্য মৌলিক গ্রন্থ তাঁর অমর সৃষ্টি।]
‘হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ইলিয়াস আওর উনকী দীনী দাওয়াতে’ কিতাবে ভুমিকা লিখতে গিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘এই কিতাবের সামনের পৃষ্ঠাগুলোতে যে দায়ীয়ে হক ও দাওয়াতে হক্বের বর্ণনা আসছে, আমি স্বচক্ষে তার চেহারার প্রতিটি রূপ দেখেছি।
সামনে এবং অগোচরের সব কার্যক্রম দেখেছি, শুনেছি। ইসলামে দাওয়াত ও তাবলিগের প্রথম ধারার উসূলের সাথে এই দাওয়াত সর্বাধিক নিকটবর্তী।
হিকমতের সাথে দাওয়াতে ও তাবলিগ আমর বিন মারুফ ও নাহি আনিল মুনকার ইসলামের মেরুদণ্ড। এর ওপরই ইসলামের ভিত্তি ও শক্তি, ইসলামের প্রসার ও সফলতা। আজকের এই যুগে তার প্রয়োজন খুব বেশি।
এই সময়ে অমুসলিমকে মুসলমান বানানোর চাইতে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো, মুসলমানকে মুসলমান বানানো। নামের মুসলিমকে কাজের মুসিলম এবং ‘কাওমী’ মুসলিমকে ‘দীনী’ মুসলিমে রূপান্তর করা।
সত্য হলো, বর্তমান যুগের মুসলমানদের অবস্থা দেখে কুরআন পাকের এই আহবান- হে মুসলমানরা! মুসলমান হও।’ -এর আওয়াজ খুব জোরে শোরে বুলন্দ করতে হবে। শহরে-নগরে, পাড়ায়-মহল্লায়, জনে-জনে গিয়ে মুসলমানদেরকে সঠিক অর্থে মুসলমান বানানোর কাজ করতে হবে। আর এ পথে লক্ষ্য অর্জনে জান-মাল ও প্রিয় সম্পদকে কুরবান করে দিতে হবে।
প্রত্যেক বাধা অতিক্রম করতে দুর্জেয় শক্তি সাহস অর্জন করতে হবে। জান-মাল দিয়ে, চেষ্টা-সাধনা দিয়ে সম্ভাব্য সকল উপায়ে এই পথে কদম বাড়াতে হবে। নিজের মধ্যে সৃষ্টি করতে হবে সেই ‘জুনুনী কাইফিয়াত’ যা বিনে অতীতে না দুনিয়ার লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে, না দীনের।’ [ভূমিকা হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস আওর উনকী দীনী দাওয়াত : ২৫-২৬]
৬. ড. শায়খ মুহাম্মদ বকর ইসমাইল
[মিসরের বিশিষ্ট আলেম, মুহাক্কিক। জামেয়াতুল আযহারের ‘তাফসীর’ ও ‘শরীয়াহ’ ফ্যাকালিটির অধ্যাপক]
এই জামাতটি তাবলিগ জামাত নামে প্রসিদ্ধ। বাস্তব অর্থে নামের সাথে তাদের কাজের যথার্থ মিল রয়েছে। এই জামাতটিকে আমি কাছ থেকে দেখেছি। তাদের সাথে জামাতেও বের হয়েছি।
তাদের মধ্যে আমি এমন কোন কিছুই খুঁজে পাইনি, যা কুরআন ও সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক। বরং আমি তাদের কাছ থেকে এমন অনেক কিছু শিখেছি, পেয়েছি, যা অন্য কোথাও পাইনি।’ (তাহকীকুল মাকাল : পৃ-৩২)
৭. শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ উছাইমিন রহ.
[সৌদী আরবের প্রখ্যাত আলেম। ফিকহ ও ফতোয়ায় পারদর্শী ব্যক্তিত্ব]
আমার মতে, এই জামাতে অনেক উত্তম আমল রয়েছে। এই দাওয়াতের প্রভাবও খুবই সুদূরপ্রসারী। এর চাইতে দ্রুত ও বেশি প্রভাব সৃষ্টিকারী কোনো জামাত নেই। কত কাফের তাদের দাওয়াত দ্বারা ঈমান এনেছে! কত গুনাহগার এর দ্বারা মুত্তাকী ও মুমিন বান্দায় পরিণত হয়েছে।
এতো সকলের সামনে সুস্পষ্ট। আর ছয়টি গুণ যার কথা তাবলিগ জামাতের ভাইয়েরা বলে থাকে। নিঃসন্দেহে তা সুন্দর ও উত্তম গুণাবলী। তবে এই জামাতে ইলমের চর্চা আরো বাড়ানো উচিত বলে আমি মনে করি। (জামাআতুত তাবলিগ : ৪৩৫-৪৩৭)
৮. মাওলানা মানযুর নুমানী রহ.
[ভারতের প্রখ্যাত আলেম, ইসলামী চিন্তাবিদ ও লেখক। উর্দু মাসিক ‘আল-ফুরকান’ এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। ‘ইসলাম কিয়া হ্যায়’ ‘কুরআন আপছে কিয়া ক্যাহতা হ্যায়’ ইত্যাদি তার অমর রচনা, যেগুলো পৃথিবীর প্রায় পনেরোর অধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে।]
হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ. এই শতাব্দীতে থেকেও প্রথম যুগের সমৃদ্ধ ভাণ্ডারের একটি দু®প্রাপ্য মুক্তা। আর তার দাওয়াত হলো ইসলামের সেই প্রথম যুগের একটি হীরক খণ্ড। নির্ভেজাল দীনী মুজাহাদার এটি একটি নতুন যুগের সূচনা। যা ছিল দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত।
যারা হিম্মত করে এই কাজে এগিয়ে আসবে তাদের সৌভাগ্যের কোনো তুলনা নেই। শুধু প্রয়োজন হবে সময় আর আল্লাহর দেয়া ‘তাকতে’র। কিন্তু এই ‘সওদা’ তো এমন, তার কাছে ‘জান’ ও ‘সস্তা’। (ভূমিকা- হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস আওর উনকী দীনী দাওয়াত)
৯. মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ লুধিয়ানবী রহ.
[পাকিস্তানের করাচীর জামেয়াতুল উলূম বিন্নুরী টাউনের সাবেক মুহাদ্দিস। বিশিষ্ট লেখক ও গ্রন্থ প্রণেতা]
‘কোনো আন্দোলনের হক-বাতিল বা সত্য-মিথ্যা নিরূপণের দুটি মৌলিক উপায়। ওই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতার নির্ভরযোগ্যতা আর তাঁর দাওয়াতের ফলাফলের বাস্তবতা। কুরআন মজীদে এই দুটি উপায়ের কথা বলা হয়েছে।
তাবলিগ জামাতের এই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা শাহ মুহাম্মদ ইলিয়াস সে যুগের অন্যতম আল্লাহর ওলী। আকাবিরদের নিকট তিনি ছিলেন আস্থাভাজন। তাঁর ইলম, আমল ও দৈনন্দিন জীবন-যাপন ছিল আল্লাহর রাসূল সা. সুন্নাহর ধাঁচে গড়া। আর তাঁর মাধ্যমে দাওয়াত ও তাবলিগের সংস্কারের যে কাজ আল্লাহ নিয়েছেন, তা ছিল সকল আকাবিরের নিকট পছন্দনীয়।
আর তার সত্যতার ব্যাপারে সকলেই একমত। এগুলো এ কথার সুদৃঢ় আলামত যে, এই আন্দোলন ভালোই ভালো, আল্লাহর কাছেও মাকবুল। (শাখছিয়াত ২/১০৮-১১০)
১০. হযরত মাওলানা জাস্টিস মুহাম্মাদ তকী উসমানী
[পাকিস্তানের দারুল উলূম করাচী-র শায়খুল হাদীস, পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্টের শরীয়া আপিল বেঞ্চের সাবেক বিচারপতি। ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং বিষয়ে রয়েছে তার সরব পদচারণা। ইংরেজী, আরবী ও উর্দুতে কুরআন-হাদীসসহ সমসাময়িক বিষয়ের ওপর শতাধিক গ্রন্থ ও প্রবন্ধ রচয়িতা।]
আজকে পৃথিবীতে এমন কোনো মুসলমান আছে কি যে, হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস রহ. সম্পর্কে জানে না। আল্লাহ পাক তাবলিগ ও দীনের দাওয়াতের জযবাকে তার অন্তরে আগুনের মত জ্বালিয়ে দিয়েছেন। যেখানেই বসতেন, শুধু দীনের কথা বলতেন; দীনের দাওয়াত পৌঁছে দিতেন। (ইসলাহী খুতুবাত : ৮/৫২)
১১. হযরত মাওলানা আশেক ইলাহী বুলন্দশহরী রহ.
[মদীনা মুনাওওয়ারা অভিবাসী বিখ্যাত উপমহাদেশীয় আলেমে দীন। বহু গ্রন্থ প্রণেতা। দা‘য়ী ও মুবাল্লিগ]
হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস রহ. এর কবরকে আল্লাহ নূর দিয়ে ভরে দিন, যিনি বস্তি নিজামউদ্দীনে তাবলিগী কাজকে জামাতবদ্ধভাবে চালু করেছেন। এর ফলে কুরআন ও হাদীসে তাবলিগের হুকুমটিও পালিত হচ্ছে, অন্যদিকে এর ফলে সকলের দীনের একটি ‘আমলী নকশা’ও এসে গেছে।
এই জামাতের মূল কাজই হলো, কিছু মানুষ একত্রে থাকবে, কেউ শিখবে আর কেউ শিখাবে। আর এভাবে সমাজ ও সামাজিক কর্মকাণ্ড বদদীনী মুক্ত হবে। (ছেহ্ বাতে : ৩)
১২. শায়খ সালেহ বিন আলী সুয়াইমান
[সৌদী সরকারের দাওয়াহ, ইরশাদ ইফতা ও ইসলামী গবেষণা বিভাগের বিশেষ প্রতিনিধি, বিশিষ্ট সৌদী আলেম]
এটি এমন একটি মুবারক জামাত, যারা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের বাসিন্দা হলেও সকলের একই সুরত, একই স্বভাব, একই কথা আর একটিই লক্ষ্য। যেন তারা সকলেই একই বাবার অনেক সন্তান। অথবা আপনি বলতে পারেন, আল্লাহ তাআলা একটি হৃদয় সৃষ্টি করেছেন আর তা তাদের সকলের মাঝে বণ্টন করে দিয়েছেন।
তাদের সকলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একটিই, দীনকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরা, মুসলমানদের সংশোধন করা আর অমুসলিমদেরকে আল্লাহর রাস্তা বাতলে দেয়া। এমন মানুষগুলোর ব্যাপারে শায়েখ আব্দুল মজীদ যিনদানী কতই না সুন্দর বলেছেন, তাঁরা তো আসমানের মাখলুক, যারা যমীনে বিচরণ করছে। (তাবলিগী জামাআত, পৃ-২৩)
এছাড়াও শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ দুজন মনীষী লেখক তো তাবলিগ জামাতের ওপর স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেছেন। একজন হলেন সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী। তাঁর রচিত বই ‘হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ইলিয়াস আওর উনকী দীনী দাওয়াত’।
আরেকজন মাওলানা ওয়াহিদউদ্দীন খান। তার বইয়ের নাম ‘তাবলিগী তাহরীক’ উভয়টি উর্দু ভাষায় লেখা। তবে বাংলা অনুবাদও এখন বাজারে।