চলতি বিশ্ব ইজতেমায় সৌদি আরব থেকে আগত বিশিষ্ট আলেম ও দায়ী শায়েখ গাসসান বলেছেন, তাবলীগ জামাতের প্রবর্তক, জগদ্বিখ্যাত দায়ী হযরত মাওলানা ইলিয়াস রাহিমাহুল্লাহুর রেখে যাওয়া উসুল ও তারতীব অনুসরণ করে আমাদেরকে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করতে হবে। তাঁর রেখে যাওয়া নিয়ম পদ্ধতি অনুসরণ করা হলেই কেবল এই মেহনত আমাদের জন্য উপকারী হবে অন্যথায় এই মেহনত থেকে কোন ফায়দা হাসিল করা সম্ভব নয়।
আজ শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বাদ জুমআ বয়ানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, মাওলানা ইলিয়াস রাহিমাহুল্লাহ আজীবন দ্বীনের ফিকির করেছেন। উনার দিলে আল্লাহ্ তাআ’লা এত পরিমান দ্বীনের ফিকির ঢেলেছিলেন যে, তিনি প্রায় রাতেই ঠিকমতো ঘুমাতে পারতেন না। ঘরের ভিতর পায়চারি করতেন আর ভাবতেন দ্বীন আজ ইয়াতীম হয়ে গেছে, দ্বীন মুসলমানের কাছে অপরিচিত হয়ে গেছে, দ্বীন থেকে মুসলমান আজ দূরে সরে গেছে। এমতাবস্থায় কি করা যায় এ উম্মতের জন্য!
একসময় মাওলানা ইলিয়াস রাহিমাহুল্লাহ্ হিন্দুস্থান থেকে হিজরত করে মদীনা গেলেন এই আশায় যে, আল্লাহ্ যদি এ উম্মতের ব্যাপারে আমাকে রাহবারি করেন! মদীনা যাওয়ার পর তিনি বিভিন্ন লাইনে অনেক মুজাহাদা করেছেন। অবশেষে একসময় আল্লাহ্ তাআ’লা তার দিলে দাওয়াতের মেহনতের এই নকশাকে খুললেন। এরপর তিনি এই মেহনত শুরু করেন। এই মেহনতের উসুলগুলো পবিত্র কুরআন ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সীরাত থেকে নেওয়া হয়েছে।
মাওলানা ইলিয়াস রাহিমাহুল্লাহ্ এই কাজ শুরু করার পর আল্লাহ্ তাআ’লা এই কাজের বরকত সারা বিশ্বে পৌঁছে দেন এবং এই কাজের বরকতে অসংখ্য অগণিত মানুষ হেদায়েত পেতে লাগলো। তাই যতদিন এই মেহনত মাওলানা ইলিয়াস রাহিমাহুল্লাহুর রেখে যাওয়া উসুল ও তারতীব মত করা হবে ততদিন আমরা এর থেকে উপকৃত হবো অন্যথায় এই মেহনত আমাদের কোন উপকারে আসবেনা।
তিনি আরো বলেন, এই কাজ মাওলানা ইলিয়াস রাহিমাহুল্লাহুর জামানায় শুরু হয়েছে এরপর মাওলানা ইনামুল হাসান রাহিমাহুল্লাহুর জামানায় আল্লাহ্ তা’আলা এ কাজকে বিশ্বের আনাচে কানাচে পৌঁছে দিয়েছেন।
মেহমান বলেন, আমরা বিশ বছর মাওলানা ইনামুল হাসান রাহিমাহুল্লাহুর সোহবত (সংস্পর্শ) পেয়েছি। তিনি বড় আল্লাহ্ ওয়ালা, পরহেজগার ও বুজুর্গ ছিলেন। তিনি দ্বীন ও দাওয়াতের ব্যাপারে খুব ফিকিরবান ছিলেন। তিনি একবার আমাদের বললেন, দেখ দ্বীন শুধু একটা জিনিসের নাম নয় বরং এর মধ্যে আরো অনেক বিষয় রয়েছে। দ্বীনের দাওয়াতের মেহনতের সাথে সাথে ইনফেরাদি (ব্যক্তিগত) আমলেরও এহতেমাম করতে হবে। তেলাওয়াত, তাসবিহাত ইত্যাদি আমলগুলো নিয়মিত গুরুত্ব সহকারে পুরা করতে হবে। এছাড়াও তাওয়াজু বা নম্রতা হাসিল করার জন্য দ্বীনের ছোটখাটো কাজেরও আঞ্জাম দিতে হবে। মাওলানা ইলিয়াস রাহিমাহুল্লাহ্ এবং মাওলানা সাঈদ খান সাহেব রাহিমাহুল্লাহ্ প্রমুখ বুজুর্গানে দ্বীন তাওয়াজু হাসিল করার জন্য প্রায় সময়ই টয়লেট পরিষ্কার করতেন। তাওয়াজু হলো বান্দার গুণ আর এর বিপরীতে তাকাব্বুরি বা বড়ত্ব হলো মহান আল্লাহ তা’আলার চাদর। আল্লাহ্ তাআলার চাদর নিয়ে যদি কেউ টানাটানি করে তাহলে আল্লাহ্ তার থেকে বদলা নিবেন।
শায়খ গাসসান আরো বলেন, হযরত আদম আলাইহিস সালামের পক্ষ থেকে একটি ভুল হয়ে গেলে তিনি তাওয়াজু এখতিয়ার করলেন এবং বললেন, হে আমার রব, আমি নিজের উপর জুলুম করেছি। এরপর আল্লাহ তা’আলা আদম আলাইহিস সালামের ভুলকে ক্ষমা করে দিলেন।
অপরদিকে ইবলিশ আদম আলাইহিস সালামকে সেজদা না করে ভুল করার পরওসে অহংকার করলো এবং বললো, আমি আগুনের তৈরি আর আদম মাটির তৈরি। ফলশ্রুতিতে ইবলিশ তার তাকাব্বুরি ও অহংকারের কারনে অভিশপ্ত ও বিতাড়িত হলো। এজন্য ভাই, আমাদেরকে সর্বাবস্থায় অহংকার থেকে বেঁচে তাওয়াজু এখতিয়ার করা উচিৎ।
পরিশেষে তিনি আলেম উলামাদের সাথে থেকে, তাদের অনুসরণ করে আজীবন দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনত করার জন্য এবং নগদ আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার জন্য উপস্থিত সকলকে উদ্বুদ্ধ করেন।