রাসূল সা. কি নারীলোভী ছিলেন? বহুবিবাহ সম্পর্কে নাস্তিকদের অপবাদের জবাব

মুফতি লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

সুরা নিসা ২৪-২৫ এবং আহযাব ৩৭, ৫০-৫২ আয়াতগুলোতে রাসূল সঃ এর বৈবাহিক জীবনের আলোচনা রয়েছে। একজন বিধর্মী উক্ত আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে বলেছে রাসূল সঃ নারীলোলুপ (নাউযুবিল্লাহ)। আমরা উক্ত আয়াতগুলোর তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাখ্যা এবং উপযুক্ত জবাব লিপিবদ্ধ করছি,

প্রথমেই আসুন আমরা উক্ত আয়াতগুলো দেখে নেই।

وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ النِّسَاءِ إِلَّا مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ۖ كِتَابَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ ۚ وَأُحِلَّ لَكُم مَّا وَرَاءَ ذَٰلِكُمْ أَن تَبْتَغُوا بِأَمْوَالِكُم مُّحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَافِحِينَ ۚ فَمَا اسْتَمْتَعْتُم بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً ۚ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَاضَيْتُم بِهِ مِن بَعْدِ الْفَرِيضَةِ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا [٤:٢٤]

এবং নারীদের মধ্যে তাদের ছাড়া সকল সধবা স্ত্রীলোক তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ; তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক হয়ে যায়-এটা তোমাদের জন্য আল্লাহর হুকুম। এদেরকে ছাড়া তোমাদের জন্যে সব নারী হালাল করা হয়েছে, শর্ত এই যে, তোমরা তাদেরকে স্বীয় অর্থের বিনিময়ে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য-ব্যভিচারের জন্য নয়। অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা ভোগ করবে,তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর। তোমাদের কোন গোনাহ হবে না যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিজ্ঞ, রহস্যবিদ। {সূরা নিসা-২৪]

এ আয়াতে যে বিধান বর্ণিত হয়েছে। তা শুধু রাসূল সা: এর জন্য খাস নয়। এটি সকলের জন্যই প্রযোজ্য।

এখানে কাকে কাকে বিবাহ করতে পারবে? তা বর্ণনা করা হয়েছে।

যিনা ব্যভিচারের দরজা বন্ধ করার জন্য উক্ত আয়াতে কারিমায় মোহর দিয়ে বিবাহ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই সাথে পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, বিবাহ করবে। যিনা বা ব্যভিচার করার জন্য অর্থ দিয়ে তাদের সাথে সহবাস করবে না।

وَمَن لَّمْ يَسْتَطِعْ مِنكُمْ طَوْلًا أَن يَنكِحَ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ فَمِن مَّا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُم مِّن فَتَيَاتِكُمُ الْمُؤْمِنَاتِ ۚ وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِإِيمَانِكُم ۚ بَعْضُكُم مِّن بَعْضٍ ۚ فَانكِحُوهُنَّ بِإِذْنِ أَهْلِهِنَّ وَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ مُحْصَنَاتٍ غَيْرَ مُسَافِحَاتٍ وَلَا مُتَّخِذَاتِ أَخْدَانٍ ۚ فَإِذَا أُحْصِنَّ فَإِنْ أَتَيْنَ بِفَاحِشَةٍ فَعَلَيْهِنَّ نِصْفُ مَا عَلَى الْمُحْصَنَاتِ مِنَ الْعَذَابِ ۚ ذَٰلِكَ لِمَنْ خَشِيَ الْعَنَتَ مِنكُمْ ۚ وَأَن تَصْبِرُوا خَيْرٌ لَّكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ [٤:٢٥]

আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি স্বাধীন মুসলমান নারীকে বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে না, সে তোমাদের অধিকারভুক্ত মুসলিম ক্রীতদাসীদেরকে বিয়ে করবে। আল্লাহ তোমাদের ঈমান সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞাত রয়েছেন। তোমরা পরস্পর এক, অতএব, তাদেরকে তাদের মালিকের অনুমতিক্রমে বিয়ে কর এবং নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর এমতাবস্থায় যে, তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে-ব্যভিচারিণী কিংবা উপ-পতি গ্রহণকারিণী হবে না। অতঃপর যখন তারা বিবাহ বন্ধনে এসে যায়, তখন যদি কোন অশ্লীল কাজ করে, তবে তাদেরকে স্বাধীন নারীদের অর্ধেক শাস্তি ভোগ করতে হবে। এ ব্যবস্থা তাদের জন্যে, তোমাদের মধ্যে যারা ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার ব্যাপারে ভয় করে। আর যদি সবর কর, তবে তা তোমাদের জন্যে উত্তম। আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়। [সূরা নিসা-২৫]

এ দু’টি আয়াতে কারিমায় যে বিধান বর্ণিত হয়েছে। তা শুধু রাসূল সা: এর জন্য খাস নয়। এটি সকলের জন্যই প্রযোজ্য।

এখানে কাকে কাকে বিবাহ করতে পারবে? তা বর্ণনা করা হয়েছে।

যিনা ব্যভিচারের দরজা বন্ধ করার জন্য উক্ত আয়াতে কারিমায় মোহর দিয়ে বিবাহ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই সাথে পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, বিবাহ করবে। যিনা বা ব্যভিচার করার জন্য অর্থ দিয়ে তাদের সাথে সহবাস করবে না।

বিয়ের পর যদি যিনা বা এজাতীয় পাপের কাজ করে থাকে, তাহলে তাদের শাস্তি ভোগ করতে হবে।

সেই সাথে বিবাহ করার সামর্থ্য না থাকলে ধৈর্যধারণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তাহলে আমরা কয়েকটি জিনিস পাচ্ছি। যথা-

সামর্থ্য থাকলে বিবাহ করবে।

বিয়ে করার সময় স্ত্রীকে মোহর দিতে হবে।

বিয়ের পর যিনা করলে সে শাস্তিযোগ্য পাপ করল।

বিয়ের সমর্থ না থাকলে ধৈর্য ধর, এর দ্বারা ব্যক্তি পুণ্য পাবে।

এই হল সূরা নিসার ২৪ ও ২৫ নং আয়াতের সারনির্যাস।

এখানে নারীলুলোপতার কী রইল?

যদি এখানে যার সাথে ইচ্ছে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের অনুমতি থাকতো, যদি বিয়ের পরও কারো সাথে যিনায় লিপ্ত হলে গোনাহ না হতো, যদি বিয়ে সামর্থ্য না থাকলে যিনা করার অনুমতি প্রদান করা হতো, তাহলেই কেবল নারীলুলোপতার অপবাদ আরোপ করা যেত।

কিন্তু এসব জঘন্য আয়াতে বলা হয়নি।

বরং যারা নাস্তিক। তারা যার সাথে ইচ্ছে তার সাথে যিনায় লিপ্ত হওয়া, মোহর ছাড়াই শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া এবং বিয়ের সামর্থ্য না থাকলেও নারীদের সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতে প্রলুব্ধ করে থাকে। কারণ তাদের কাছে বিয়ের কোন বিধান নেই। মোহরের কোন বিধান নেই। গোনাহের কোন ভয় নেই।

তাই নাস্তিকদের থিউরি হল, নারীলুলোপতার থিউরি। নারী স্বাধীনতার নামে নারীদের ভোগ করার মানসিকতা।

সেখানে রাসূল সা: এর উপর নাজিলকৃত কুরআনের শালীন ও সভ্য বিধানকে মিথ্যা অপবাদ দেবার অর্থ কি?

এবার আমরা সূরা আহযাবের আয়াতগুলো দেখি!

وَإِذْ تَقُولُ لِلَّذِي أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَأَنْعَمْتَ عَلَيْهِ أَمْسِكْ عَلَيْكَ زَوْجَكَ وَاتَّقِ اللَّهَ وَتُخْفِي فِي نَفْسِكَ مَا اللَّهُ مُبْدِيهِ وَتَخْشَى النَّاسَ وَاللَّهُ أَحَقُّ أَن تَخْشَاهُ ۖ فَلَمَّا قَضَىٰ زَيْدٌ مِّنْهَا وَطَرًا زَوَّجْنَاكَهَا لِكَيْ لَا يَكُونَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ حَرَجٌ فِي أَزْوَاجِ أَدْعِيَائِهِمْ إِذَا قَضَوْا مِنْهُنَّ وَطَرًا ۚ وَكَانَ أَمْرُ اللَّهِ مَفْعُولًا [٣٣:٣٧]

আল্লাহ যাকে অনুগ্রহ করেছেন;আপনিও যাকে অনুগ্রহ করেছেন;তাকে যখন আপনি বলেছিলেন,তোমার স্ত্রীকে তোমার কাছেই থাকতে দাও এবং আল্লাহকে ভয় কর। আপনি অন্তরে এমন বিষয় গোপন করছিলেন,যা আল্লাহ পাক প্রকাশ করে দেবেন আপনি লোকনিন্দার ভয় করেছিলেন অথচ আল্লাহকেই অধিক ভয় করা উচিত। অতঃপর যায়েদ যখন যয়নবের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করল,তখন আমি তাকে আপনার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করলাম যাতে মুমিনদের পোষ্যপুত্ররা তাদের স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সেসব স্ত্রীকে বিবাহ করার ব্যাপারে মুমিনদের কোন অসুবিধা না থাকে। আল্লাহর নির্দেশ কার্যে পরিণত হয়েই থাকে। [সূরা আহযাব ৩৩: ৩৭]

উক্ত আয়াতে কারীমায় আরবে প্রচলিত একটি কুসংস্কারকে সমূলে উৎপাটনের কথা এসেছে। আরবের মাঝে জাহেলী প্রথা ছিল যে, পোষ্যপুত্র নিজের ঔরসজাত পুত্রের মতই।

পোষ্যপুত্রও ঔরসজাত সন্তানের মত মিরাছ পায়। তার সাথে লালনপালনকারী মায়ের পর্দা নেই।

সেই সাথে পোষ্য পুত্র যাকে বিবাহ করে, সে তাকে তালাক দিলে তার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে আর পোষ্যকারী পিতা বিবাহ করতে পারে না।

জাহেলী যুগে প্রচলিত উক্ত প্রথাটি সে যুগের মানুষের মন মগজে ঢুকে গিয়েছিল। এর উল্টো বিষয়কে কেউ মানতেই চাইতো না। তাই আল্লাহ তাআলা চাইলেন রাসূল সা: এর মাধ্যমেই এ কুসংস্কারের মূলোৎপাটন করতে।

ঘটনার সংক্ষেপ হল, যয়নব বিনতে জাহাশ রা: রাসূল সা: এর ফুফাতো বোন ছিলেন। রাসূল সা: তার আযাদকৃত গোলাম যায়েদ বিন হারেছা রা: এর সাথে যয়নবের বিবাহ দেন।

আরবে বংশ গৌরব খুবই প্রচলিত ছিল। সেখানে ভাল বংশের কোন মেয়েকে গোলাম বা আযাদকৃত গোলামের কাছে বিবাহ দেয়াকে খুবই অপছন্দ করা হতো।

এ কারণে প্রথমে যয়নব রা: ও তার পরিবার এ সম্বন্ধে রাজি ছিলেন না।

তখন আয়াত সূরা আহযাবের আলোচ্য আয়াতের আগের আয়াত:

وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ ۗ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِينًا [٣٣:٣٦]

আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট তায় পতিত হয়। [সূরা আহযাব ৩৩: ৩৬]

এ আয়াত নাজিল হবার পর যয়নব রা: ও তার পরিবার আল্লাহর ভয়ে উক্ত বিয়েতে রাজি হয়ে যান।

কিন্তু পরিবারে মিল ছিল না। হযরত যায়েদের সাথে যয়নব রা: এর বিলকুল বনিবনা হচ্ছিল না। প্রায়ই কথা কাটাকাটিও বিবাদ হতো।

ফলে যায়েদ রা: রাসূল সা: এর কাছে তালাকের অনুমতি প্রদানের জন্য আবেদন করতেন।

কিন্তু আল্লাহর রাসূল সা: তালাক দিতে বারণ করেন। কারণ বিয়ের পর তালাক প্রদান করা অনুত্তম কাজ।

কিন্তু হযরত যায়েদের পক্ষে এ সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

ইতোমধ্যে আল্লাহ তাআলা রাসূল সা: কে অহীর মাধ্যমে জানিয়ে দেন যে, যায়েদ এ বিবাহ বন্ধন টিকিয়ে রাখতে পারবে না। বরং সে তালাক দিবেই। আর এরপর যয়নবের মনকে খুশি করতে খোদ রাসূল সা: কেই তাকে বিবাহ করতে হবে।

এটাই আল্লাহর ফায়সালা। যা অহীর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দেন।

কিন্তু রাসূল সা: উক্ত বিষয়টিকে প্রকাশ করতে আরবের মুশরিকদের অপপ্রচার ও বিভ্রান্তির ভয় পাচ্ছিলেন। কারণ, আরবে পোষ্যপুত্রের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে বিবাহ করাকে অবৈধ মনে করা হয়। খুবই অশোভন মনে করা হয়। অথচ এটি মোটেও অশোভন কিছু ছিল না।

লোক লজ্জার ভয়ে রাসূল সা: উক্ত বিষয়টিকে জনসম্মুখে বলতে ভয় পাচ্ছিলেন। তাই তা মনের মাঝেই গোপন করে রাখেন।

এরই মাঝে একদিন যায়েদ বিন হারেছা এসে জানান যে, তিনি স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিয়েছেন। তখন রাসূল সা: চুপ করে রইলেন।

যখন যয়নবের ইদ্দত সম্পন্ন হয়ে যায়, তখন রাসূল সা: হযরত যায়েদের মাধ্যমেই হযরত যয়নব রা: এর কাছে বিবাহের প্রস্তাব পাঠান।

সেসময় সুরা আহযাবের এ ৩৭ নং আয়াত নাজিল হয়। যাতে আল্লাহ তাআলা পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিলেন যে, পোষ্যপুত্রের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে বিবাহ করা এটি সম্পূর্ণই বৈধ। এতে দোষের কিছু নেই। আর যায়েদ যয়নবকে তালাক দিবে, পোষ্যপুত্রের তালাকপ্রাপ্তাকেই রাসূল সা: এর বিবাহ করতে হবে, একথা আল্লাহর বিধান হওয়ার পরও রাসূল সা: লোকলজ্জার ভয়ে তা প্রকাশ করতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। অথচ আল্লাহ তাআলাই অধিক ভয় পাবার যোগ্য।

অবশেষে অহীর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তা প্রকাশ করে দিলেন। সেই সাথে আল্লাহ তাআলা নিজেই রাসূল সা: ও যয়নব রা: এর বিবাহে আসমানে সম্পন্ন করে দিলেন। [ঈষৎ সংক্ষেপিত: সিরাতুল মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, উর্দু-৩/২৯৫-২৯৯, ইদ্রিস কান্ধলবী রহঃ কৃত]

তাহলে এ আয়াতে কি পেলাম?

পোষ্যপুত্রের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে বিবাহ করার কুপ্রথা বিলুপ্তকরণের জন্য রাসূল সা: আল্লাহর নির্দেশে বিবাহ করলেন।

তো এখানে নারী ললুপতার কি নিদর্শন খুঁজে পেল নাস্তিক ভাইটা। তা আমাদের কিছুই বুঝে আসছে না।

এবার সূরা আহযাবের ৫০ নং আয়াত দেখে নেই:

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَحْلَلْنَا لَكَ أَزْوَاجَكَ اللَّاتِي آتَيْتَ أُجُورَهُنَّ وَمَا مَلَكَتْ يَمِينُكَ مِمَّا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَيْكَ وَبَنَاتِ عَمِّكَ وَبَنَاتِ عَمَّاتِكَ وَبَنَاتِ خَالِكَ وَبَنَاتِ خَالَاتِكَ اللَّاتِي هَاجَرْنَ مَعَكَ وَامْرَأَةً مُّؤْمِنَةً إِن وَهَبَتْ نَفْسَهَا لِلنَّبِيِّ إِنْ أَرَادَ النَّبِيُّ أَن يَسْتَنكِحَهَا خَالِصَةً لَّكَ مِن دُونِ الْمُؤْمِنِينَ ۗ قَدْ عَلِمْنَا مَا فَرَضْنَا عَلَيْهِمْ فِي أَزْوَاجِهِمْ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ لِكَيْلَا يَكُونَ عَلَيْكَ حَرَجٌ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا [٣٣:٥٠]

হে নবী! আপনার জন্য আপনার স্ত্রীগণকে হালাল করেছি,যাদেরকে আপনি মোহরানা প্রদান করেন। আর দাসীদেরকে হালাল করেছি,যাদেরকে আল্লাহ আপনার করায়ত্ত করে দেন এবং বিবাহের জন্য বৈধ করেছি আপনার চাচাতো ভগ্নি,ফুফাতো ভগ্নি,মামাতো ভগ্নি,খালাতো ভগ্নিকে যারা আপনার সাথে হিজরত করেছে। কোন মুমিন নারী যদি নিজেকে নবীর কাছে সমর্পণ করে,নবী তাকে বিবাহ করতে চাইলে সেও হালাল। এটা বিশেষ করে আপনারই জন্য-অন্য মুমিনদের জন্য নয়। আপনার অসুবিধা দূরীকরণের উদ্দেশে। মুমিনগণের স্ত্রী ও দাসীদের ব্যাপারে যা নির্ধারিত করেছি আমার জানা আছে। আল্লাহ ক্ষমাশীল,দয়ালু। [সূরা আহযাব ৩৩: ৫০]

উপরোক্ত আয়াতে কারীমা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রাসূল সা: এর সম্পর্কে কয়েকটি বিশেষ নেয়ামতের কথা উল্লেখ করেছেন।

চারের অধিক স্ত্রী হলেও রাসূল সা: যদি তাদের মোহরানা আদায় করে দেন, তাহলে তিনি বিয়ে করতে পারবেন।

রাসূল সা: এর মালিকানাধীন নারীও রাসূল সা: এর জন্য বৈধ।

যদিও এটি সকল মুসলিমের জন্য বৈধ। পার্থক্য শুধু রাসূল সা: এর মৃত্যুর পর উক্ত মালিকানাধীন নারীর কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ নয়।

রাসূল সা: এর হিজরত করেছেন এমন চাচাত, ফুফাতো, মামাতো ও খালাতো বোনকে বিবাহ করাও রাসূল সা: এর জায়েজ।

দেনমোহর ছাড়াই বিয়ে করার জন্য কোন নারী রাসূল সা: এর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে আহবান করলে রাসূল সা: তাকে বিবাহ করতে পারেন।

সাধারণ মুসলমানদের জন্য ইহুদী খৃষ্টান তথা কিতাবী মহিলাদের বিবাহ করা বৈধ হলেও রাসূল সা: এর জন্য তা বৈধ নয়। বরং নারী মুসলিম হতে হবে।

উক্ত ৫টি বিধানের মাঝে রাসূল সা: এর জন্য খাস করে দু’টি অতিরিক্ত শর্ত রয়েছে। যা সাধারণ মুসলিমদের জন্য নেই।

যথা-

খালাতো, ফুফাতো, মামাতো ও চাচাতো বোনকে বিবাহ করা জায়েজ। কিন্তু রাসূল সা: এর জন্য শর্ত হল, তাদের হিজরতে করতে হবে। নতুবা বিবাহ করা যাবে না।

তাহলে এখানে রাসূল সা: এর জন্য তা অসুবিধারই কারণ হচ্ছে উক্ত শর্ত।

সবার জন্য কিতাবী মহিলাদের আমভাবে বিবাহ বৈধ থাকলেও রাসূল সা: এর জন্য ইসলাম গ্রহণ না করলে তা বৈধ নয়।

বাকি বাহ্যিকভাবে উক্ত আয়াতে রাসূল সা: এর জন্য সুবিধা কেবল পাওয়া যায়, দু’টি বিষয়ে। যথা-

কোন নারী মোহর ছাড়া বিবাহ করতে আবেদন জানালে নবীজী সা: মোহর ছাড়াই বিয়ে করতে পারবেন।

যা অন্য কেউ পারবে না। সবার জন্যই মোহর আবশ্যক। এটি শুধুই রাসূল সা: এর বৈশিষ্ট্য।

চারের অধিক বিবাহ করার সুযোগ।

এ দু’টি বিষয়ের মাঝে রাসূল সা: কে বিশেষ সুযোগ দেয়া হয়েছে। বাকি বিধানগুলোর ক্ষেত্রে মূলত সুযোগ নয়। বরং কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

তো আল্লাহর দেয়া এসব নির্দেশনাবলীর ক্ষেত্রে কিভাবে নারীলোলুপতা অপবাদ আরোপ করা হচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।

আর রাসূল সা: কে কেন একাধিক বিবাহের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে তার ব্যাখ্যা সামনে আসছে ইনশাআল্লাহ।

এবার আমরা সূরা আহযাবের ৫২ নং আয়াত দেখি:

لَّا يَحِلُّ لَكَ النِّسَاءُ مِن بَعْدُ وَلَا أَن تَبَدَّلَ بِهِنَّ مِنْ أَزْوَاجٍ وَلَوْ أَعْجَبَكَ حُسْنُهُنَّ إِلَّا مَا مَلَكَتْ يَمِينُكَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ رَّقِيبًا [٣٣:٥٢]

এরপর আপনার জন্যে কোন নারী হালাল নয় এবং তাদের পরিবর্তে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করাও হালাল নয় যদিও তাদের রূপলাবণ্য আপনাকে মুগ্ধ করে, তবে দাসীর ব্যাপার ভিন্ন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ের উপর সজাগ নজর রাখেন। [সূরা আহযাব ৩৩: ৫২]

উক্ত আয়াতে কারীমায় সূরা আহযাবের ৫০ ও ৫১ নং আয়াতে বর্ণিত রাসূল সা: এর বিবাহ সংশ্লিষ্ট যেসব মেয়েদের কথা বর্ণিত হয়েছে, তাদের ছাড়া আর কাউকে বিবাহ করা যাবে না মর্মে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এর মাধ্যমে এতদসংশ্লিষ্ট বিধানকে পরিপূর্ণভাবে বিবৃত করা হল।

এখানে এসে নাস্তিকরা প্রশ্ন করতে পারেন দু’টি। যথা-

রাসূল সা: কে একাধিক বিবাহ করার অনুমতি প্রদান করা হল কেন?

তিনি কি নারী লোভী ছিলেন? [নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক]

১ম অভিযোগের জবাব

রাসূল সা: একজন সাধারণ ব্যক্তি ছিলেন না। তিনি একজন নবী ছিলেন। সেই সাথে একজন রাষ্ট্রনায়ক। চতুর্মুখী ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে ইসলাম নামক জান্নাতি ধর্মকে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে আদিষ্ট ছিলেন।

এ কারণে পরিবেশ পরিস্থিতিকে সামাল দিতে অনেক বিষয়ের সম্মুখীন হতে হয়। রাজনৈতিক জটিলতায় পড়তে হয়েছে। সেখানে একাধিক বিবাহ করার সুযোগ অনেক জটিল পরিস্থিতি সামাল দেবার হাতিয়ার হয়েছিল।

রাসূল সা: এর বিয়েকৃত নারীদের হালাত দেখলেই তা আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে।

হযরত খাদিজা রা: এর সাথে রাসূল সা: এর বিবাহ হয়,যখন রাসূল সা: এর বয়স ছিল ২৫ বছর। আর হযরত খাদিজা রা: এর বয়স ছিল ৪০ বছর।

হযরত খাদিজা রা: এর সাথে রাসূল সা: সংসার করেন ২৫ বছর। অর্থাৎ হযরত খাদিজা রা: এর ইন্তেকালের সময় রাসূল সা: এর বয়স হয়েছিল ৫০ বছর। এই ২৫ বছরের মাঝে রাসূল সা: দ্বিতীয় কোন বিবাহ করেননি।

হযরত খাদিজা রা: এর ইন্তেকালের পর সর্বপ্রথম রাসূল সা: বিয়ে করেন হযরত সাওদা রা: কে। যার স্বামী হিজরত করে হাবশা গিয়েছিলেন। সেখানেই তিনি ইন্তেকাল করেন। ফলে হযরত সাওদা রা: বিধবা হয়ে যান।

তখন রাসূল সা: তার কষ্ট লাঘবের জন্য বিবাহ করেন।

হযরত আম্মাজান আয়েশা রা:।

যখন ইসলামের পতাকাতলে লোকজন প্রবেশ করতে শুরু করে দেয়। তখন মক্কার মুশরেকরা মুসলমানদের সাথে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করতে শুরু করে।

রাসূল সা: এর নিজের দুই কন্যা তথা রুকাইয়া ও উম্মে কুলসুমের বিবাহ দেয়া হয়েছিল আবু লাহাবের দুই ছেলে উতবা ও উতাইবার কাছে। কিন্তু তারা উভয়ে পিতা আবু লাহাবের নির্দেশে যয়নব ও উম্মে কুলসুম রা: কে তালাক দিয়ে দেয়।

শুধু তাই নয়, হযরত আবু বকর রা: তার কন্যা হযরত আয়েশা রা: এর বিবাহ এক কাফির যুবায়ের বিন মুতয়িম এর সাথে ঠিক করা ছিল। কিন্তু তার পিতা সেই বিবাহ রদ করে দেয় এ শঙ্কায় যে, তার ছেলে মুসলমান হয়ে যেতে পারে।

এ ছিল পরিস্থিতি। মুসলিম কন্যাদের মুসলিমদের সাথে বিবাহ দেয়া ছাড়া কোন গত্যন্তর ছিল না। উক্ত বিবাহ নাকচ হয়ে যাবার পর হযরত আবু বকর রা: তার কন্যা আয়েশা রা: এর সাথে রাসূল সা: এর বিবাহ দিয়ে দেন।

হযরত উমর রা: এর কন্যা হযরত হাফসা রা: ও তার স্বামীর সাথে হিজরত করেন। কিন্তু তার স্বামীও ইন্তেকাল করেন। তখন হযরত উমর রা: তার কন্যাকে বিয়ে করার জন্য প্রথমে হযরত উসমান রা: কে, তারপর হযরত আবু বকর রা: কে অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা উভয়ে অস্বীকৃতি জানালে রাসূল সা: হযরত হাফসা রা: কে বিবাহ করেন।

হযরত উম্মে সালামা রা:। যার স্বামীও কাফিরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে হিজরত করেছিলেন। অতঃপর সেখানেই ইন্তেকাল করেন। তখন রাসূল সা: উক্ত বিধবা নারী হযরত সালমা রা: কে বিবাহ করেন।

হযরত উম্মে হাবীবা রা:। যিনি কুরাইশের সর্দার হযরত আবু সুফিয়ান এর কন্যা ছিলেন। স্বীয় স্বামীর সাথে হিজরত করে হাবশায় চলে যান। সেখানে পৌঁছার পর তার স্বামী খৃষ্টান হয়ে যায়। তারপর সেখানেই সে মারা যায়। কিন্তু হযরত উম্মে হাবীবা রা: ইসলামের উপর অটল থাকেন। এরপর রাসূল সা: উম্মে হাবীবা রা: কে বিবাহ করেন।

হযরত যয়নব বিনতে জাহাশ রা:। যাকে তার স্বামী যায়েদ বিন হারেছা রা: বনিবনা না হওয়ায় তালাক দিয়ে দেন। তখন রাসূল সা: তাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেন।

উম্মুল মাসাকীন হযরত যয়নব বিনতে খুজাইমা রা:। যার স্বামী উহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়ে যান। তারপর রাসূল সা: এর বিবাহে আসেন।

হযরত মাইমুনা রা:। তিনিও হিজরত করেছিলেন। বিধবা হবার পর রাসূল সা: এর বিবাহে আসেন।

যয়নব বিনতে জাহাশ রা: ছাড়া বাকিরা সবাই ইসলামের শুরু যুগেই ইসলাম কবুল করেন। তারপর কাফেরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বাধ্য হয়ে মাতৃভূমি ত্যাগ করে পরবাসে চলে যান। কিন্তু সেখানে তাদের স্বামীগণ ইন্তেকাল করলে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েন। কোথায় যাবেন? কার কাছে যাবেন? আপন বাড়িতে ফিরে গেলে কাফির আত্মীয় স্বজন অত্যাচার নিপীড়ন করে ধ্বংস করে ফেলবে।

এরকম অসহায় হালাতে পড়া নারীদের রাসূল সা: স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে সম্মানিত করেন।

১০

হযরত জুআইরিয়া রা:। যিনি তার কওমের সর্দারের কন্যা ছিলেন। রাসূল সা: অনেক মূল্য পরিশোধ করে হযরত জুআইরিয়া রা: কে বিবাহ করেন। যাতে করে উক্ত গোত্রের সাথে মুসলমানদের দুশমনী লাঘব হয়।

১১

হযরত সফিয়্যাহ রা:। খায়বর যুদ্ধে বন্দি হন এক সর্দারের বেটি হযরত সফিয়্যা রা:। তখন ফিতনা রোখার মানসে রাসূল সা: তাকে বিয়ে করেন।

শেষোক্ত দুই বিয়ে দ্বারা উদ্দেশ্য ছিল, যেন উভয় কওমের মাঝে চলা যুদ্ধ থেকে যায়। পারস্পরিক আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হবার বদৌলতে শান্তি ছড়িয়ে পড়ে। পারস্পরিক সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়।

আল্লাহর রহমতে হয়েছিলও তা।

এ ছিল রাসূল সা: এর এগারটি বিবাহের হালাত। যা পরিষ্কার প্রমাণ করে, রাসূল সা: প্রথম বিয়ে করেছিলেন সাধারণ নীতি অনুপাতে। কিন্তু বাকি দশ বিবাহ করেছেন পরিস্থিতি, পারিপার্শ্বিকতার স্বীকার হয়ে। দ্বীনী ফায়দার উদ্দেশ্যে।

শুধু নিজের খাহেশের কারণে অধিক বিবাহ রাসূল সা: করেননি।

২য় পয়েন্ট

রাসূল সা: সমগ্র মানবজাতির জন্য সমগ্র বিষয়ে আদর্শ হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। আর প্রতিটি মানুষের দু’টি হালাত। তথা-

ক)

ঘরের বাহিরের জীবন।

খ)

ঘরের ভিতরের জীবন।

রাসূল সা: এর ঘরের বাহিরের জীবন পুরুষ সাহাবায়ে কেরাম রা: এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা সংরক্ষিত করেছেন। যা সাহাবায়ে কেরাম স্বীয় বর্ণনার মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।

বাকি ছিল, রাসূল সা: এর ঘরের জীবন। এ বিষয়েও আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মদীকে মাহরূম করেননি। তাই একাধিক বিয়ের মাধ্যমে রাসূল সা: এর ঘরে একাধিক বিবিকে পাঠিয়েছেন। যাতে করে রাসূল সা: এর পারিবারিক জীবনও বর্ণিত হয়ে সবার জন্য আদর্শ হয়।

উম্মতের ফায়দার জন্য আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত নিজাম ছিল একাধিক বিবাহ।

২য় প্রশ্নের জবাব

রাসূল সা: যখন প্রথম বিবাহ করেন, তখন তার বয়স ছিল ২৫ বছর। টগবগে যুবক। বিয়ে করেছেন হযরত খাদিজা রা: কে। বিয়ের সময় হযরত খাদিজা রা: এর বয়স হয়েছিল ৪০ বছর।

যে খাদিজা রা: এর ইতোপূর্বে দুইবার বিবাহ হয়েছিল। দুইবারই স্বামী ইন্তেকাল করেছেন। পূর্বের স্বামী থেকে তিনজন সন্তানও জন্ম নিয়েছিল।

যদি রাসূল সা: নারীলোভীই হতেন [নাউজুবিল্লাহ] তাহলে ২৫ বছরের যুবক হয়ে, দুই দুইবারের বিধবা নারী, তাও ৪০ বছরের মধ্যবয়স্কা এক নারীকে কেন বিয়ে করলেন?

২৫ বছর বয়সে ৪০ বছর বয়স্কা একজনকে বিবাহ করার পর উক্ত নারীকে নিয়ে যৌবনের পূর্ণ সময় কাটিয়ে দিলেন। বিয়ের পর কেটে গেল আরও ২৫টি বছর।

এ ২৫ বছরের মাঝে তথা হযরত খাদিজা রা: এর জীবদ্দশায় রাসূল সা: দ্বিতীয় কোন বিবাহ করেননি। তার থেকেই রাসূল সা: এর চার কন্যা, যয়নব, রুকাইয়া, উম্মে কুলসুম এবং ফাতিমা রা: জন্মগ্রহণ করেন। এবং দুই ছেলে জন্ম নেন।

এছাড়া শুধু মারিয়া কিবতিয়া রা: এর গর্ভেই রাসূল সা: এর এক সন্তান জন্ম নিয়েছিল। এছাড়া আর কোন স্ত্রীর গর্ভে রাসূল সা: এর কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করেননি।

হযরত খাদিজা রা: যখন ইন্তেকাল করেন, তখন রাসূল সা: এর বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর। ৫৫ বছর মানেই বার্ধক্যে উপনীত।

তাহলে যৌবনকাল থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত একজন মধ্য বয়স্কা দুইবারের বিধবা নারীকে নিয়ে ঘরসংসার করলেন মহানবী সা:। এর মাঝে দ্বিতীয় কোন নারীর দিকে তাকাননি।

তারপরও নারীলোভী বলে যে অমানুষগুলো অভিযোগের আঙ্গুল তুলে তাদের রুচিবোধ ও আকল নিয়ে আমাদের সন্দেহ জাগে।

হযরত খাদিজা রা: এর ইন্তেকালের পর, রাসূল সা: ৫৫ বছর বয়স থেকে ৬৩ বছর বয়স পর্যন্ত মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নানা পারিপার্শ্বিক ও রাজনৈতিক কারণে বাকি দশজন নারীকে বিয়ে করেন। যাদের শুধু একজন ছিলেন কুমারী। বাকি ৯ জনই ছিলেন বিধবা নারী।

এরপরও যারা আমাদের শ্রেষ্ঠ নবী, উত্তম আখলাক ও শ্রেষ্ঠ চরিত্রবান নবীজী সা: এর পবিত্র স্বত্বা নিয়ে অপবাদে খড়গ তুলে তাদের জ্ঞানপাপী বা মূর্খ ছাড়া আমরা আর কী’বা বলতে পারি?

বিস্তারিত জানতে হলে পড়ুন

মাওলানা ইদ্রিস কান্ধলবী রহঃ কৃত সিরাতুল মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উর্দু-৩য় খণ্ড।

মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহঃ কৃত আহকামে ইসলাম আকল কী নজর মে-১৫৬-১৬০।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *