তাওবাতুন নাসূহার আয়াতে নাসূহা দ্বারা কী উদ্দেশ্য?

মুফতি লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

কাউকে বলতে শোনা যায় যে, নাসূহা নামক এক ব্যক্তির তওবার কথা উল্লেখ করে কুরআনে আয়াত নাজিল হয়েছে। চলুন এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাক –

কুরআনে নাসূহা নামে কোন ব্যক্তির কথা বা তার তওবার কথা উল্লেখ হয় নি। যারা এমনটি বলেন তারা না জেনে অজ্ঞতা হেতু এমনটি বলে থাকেন।

তবে কুরআনে তাওবাতুন নাসূহার কথা উল্লেখ আছে।

কুরআনে ইরশাদ হয়েছেঃ

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَّصُوحًا عَسَىٰ رَبُّكُمْ أَن يُكَفِّرَ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ [٦٦:٨]

মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ তা’আলার কাছে তাওবাতুন নাসূহা তথা আন্তরিকভাবে খাঁটি তওবা কর। আশা করা যায়, তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মন্দ কর্মসমূহ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। [সূরা তাহরীম-৮]

নাসূহা এর অর্থ হল, খাঁটি, আন্তরিক, দৃঢ় তওবা। নাসূহা হল এমন তওবা, যার পর তাওবাকারী আর গোনাহ করে না। এমন দৃঢ় ও ইখলাসপূর্ণ তওবার নাম হল তওবাতুন নাসূহা। এটা কোন ব্যক্তির নাম নয়। বা ব্যক্তিকেন্দ্রীক কোন ঘটনার উপর ভিত্তি করেও এ আয়াত নাজিল হয়নি।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ লিখেছেনঃ

قَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ وَغَيْرُهُ مِنْ الصَّحَابَةِ وَالتَّابِعِينَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ التَّوْبَةُ النَّصُوحُ: أَنْ يَتُوبَ مِنْ الذَّنْبِ ثُمَّ لَا يَعُودُ إلَيْهِ و ” نَصُوحٌ ” هِيَ صِفَةٌ لِلتَّوْبَةِ وَهِيَ مُشْتَقَّةٌ مِنْ النُّصْحِ وَالنَّصِيحَةِ. وَأَصْلُ ذَلِكَ هُوَ الْخُلُوصُ. يُقَالُ: فُلَانٌ يَنْصَحُ لِفُلَانِ إذَا كَانَ يُرِيدُ لَهُ الْخَيْرَ إرَادَةً خَالِصَةً لَا غِشَّ فِيهَا

হযরত উমর বিন খাত্তাব রাঃ এবং অন্যান্য সাহাবাগণ রাঃ ও তাবেয়ীগণ রহঃ বলেন, তাওবাতুন নাসূহ হল, গোনাহ থেকে এমন তওবা যার পর আর গোনাহ করা হয় না। আর ‘নাসূহ’ শব্দটি তাওবা এর সিফাত। যা নুসহুন এবং নসীহত শব্দ থেকে উদগত। যার আসল অর্থ হল ইখলাস বা খুলুসিয়্যাত। যেমন বলা হয় যে, ওমুক ব্যক্তি ওমুক ব্যক্তিকে নসিহা করেছে। এটি বলা হয়, যখন ব্যক্তি অন্যের জন্য খালিসভাবে কল্যাণ কামনা করে। যাতে কোন ধোঁকা নেই। [মাজমূআ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া-১৬/৫৭]

একটু পর ইবনে তাইমিয়া রহঃ লিখেছেনঃ

وَمَنْ قَالَ مِنْ الْجُهَّالِ: إنَّ ” نَصُوحَ ” اسْمُ رَجُلٍ كَانَ عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَرَ النَّاسَ أَنْ يَتُوبُوا كَتَوْبَتِهِ: فَهَذَا رَجُلٌ مُفْتَرٍ كَذَّابٌ جَاهِلٌ بِالْحَدِيثِ وَالتَّفْسِيرِ جَاهِلٌ بِاللُّغَةِ وَمَعَانِي الْقُرْآنِ؛ فَإِنَّ هَذَا امْرُؤٌ لَمْ يَخْلُقْهُ اللَّهُ تَعَالَى وَلَا كَانَ فِي الْمُتَقَدِّمِينَ أَحَدٌ اسْمُهُ نَصُوحٌ وَلَا ذَكَرَ هَذِهِ الْقِصَّةَ أَحَدٌ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ وَلَوْ كَانَ كَمَا زَعَمَ الْجَاهِلُ لَقِيلَ تُوبُوا إلَى اللَّهِ تَوْبَةَ نَصُوحٍ وَإِنَّمَا قَالَ: {تَوْبَةً نَصُوحًا} وَالنَّصُوحُ هُوَ التَّائِبُ. وَمَنْ قَالَ: إنَّ الْمُرَادَ بِهَذِهِ الْآيَةِ رَجُلٌ أَوْ امْرَأَةٌ اسْمُهُ نَصُوحٌ وَإِنْ كَانَ عَلَى عَهْدِ عِيسَى أَوْ غَيْرِهِ فَإِنَّهُ كَاذِبٌ يَجِبُ أَنْ يَتُوبَ مِنْ هَذِهِ فَإِنْ لَمْ يَتُبْ وَجَبَتْ عُقُوبَتُهُ بِإِجْمَاعِ الْمُسْلِمِينَ

অর্থঃ আর যে মুর্খ ব্যক্তি বলে যে, নাসূহ হল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগের এক ব্যক্তির নাম। লোকদেরকে ঐ ব্যক্তির মত তওবা করতে আদেশ করা হয়েছে।

যে এমন কথা বলে, সে ব্যক্তি একজন অপবাদদাতা ও মিথ্যুক। হাদীস ও তাফসীর সম্পর্কে অজ্ঞ। সেই সাথে আরবী ভাষা ও কুরআনের অর্থ সম্পর্কে মুর্খ। কেননা সে এমন [এক কাল্পনিক] ব্যক্তি যাকে আল্লাহ সৃষ্টি করেননি। আর পূর্ব যুগে এমন কাউকে পাওয়া যায় না, যার নাম নাসূহ ছিল। আর এমন ঘটনা কোন আহলে ইলম বর্ণনা করেননি।

যদি তা’ই হতো, যা মুর্খ ব্যক্তিটা মনে করে, তাহলে কুরআনের আয়াতের শব্দ হতো تُوبُوا إلَى اللَّهِ تَوْبَةَ نَصُوحٍ অথচ কুরআনের শব্দ এসেছে تَوْبَةً نَصُوحًا।

নাসূহ সে হল তওবাকারী। আর যে বলে যে, এ আয়াত দ্বারা একজন পুরুষ বা নারীকে বুঝানো হয়েছে। যার নাম হল নাসূহ। যে হযরত ঈসা আলাহিস সালাম বা অন্য কোন নবীর জমানার ছিলেন। যে এমন বলে সে ব্যক্তি একজন মিথ্যুক। এ থেকে তার তাওবা করা ওয়াজিব। যদি সে তওবা না করে, তাহলে মুসলমানদের ইজমায়ী সিদ্ধান্ত অনুপাতে তাকে শাস্তি দেয়া আবশ্যক। [মাজমূআ ফাতওয়া ইবনে তাইমিয়া-১৬/৫৯]

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

2 thoughts on “তাওবাতুন নাসূহার আয়াতে নাসূহা দ্বারা কী উদ্দেশ্য?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *