মুফতী আবুল হাসান শামসাবাদী | সম্পাদক, মাসিক আদর্শ নারী
পহেলা বৈশাখ উদ্ভাবনের ইতিহাস
১৪ এপ্রিল ফসলী বাংলা সন শুরু হয়। বাংলা সনের প্রথম মাস বৈশাখের প্রথম দিন বৈশাখের ১ তারিখ বা পহেলা বৈশাখ।
আমাদের দেশে প্রচলিত বঙ্গাব্দ বা বাংলা সন মূলত ইসলামী হিজরী সনেরই একটি রূপ। ভারতে ইসলামী শাসনামলে হিজরী পঞ্জিকা অনুসারেই সকল কাজ-কর্ম পরিচালিত হতো। মূল হিজরী সন চান্দ্র মাস হিসেবে প্রবর্তিত। চান্দ্র বৎসর সৌর বৎসরর চেয়ে ১১/১২ দিন কম হয়। কারণ, সৌর বৎসর ৩৬৫ দিনে, আর চান্দ্র বৎসর ৩৫৪ দিনে হয়। একারণে চান্দ্র বৎসরে ঋতুগুলো ঠিক থাকে না। অথচ চাষাবাদ ও এ জাতীয় অনেক কাজ ঋতুনির্ভর। এজন্য ভারতের মোগল সম্রাট আকবারের সময়ে প্রচলিত হিজরী চান্দ্র পঞ্জিকাকে সৌর পঞ্জিকায় রূপান্তরিত করে বাংলা সনের প্রবর্তন করা হয়।
৯৯২ হিজরী মোতাবেক ১৫৮৪ খৃস্টাব্দে সম্রাট আকবার এ হিজরী সৌর বর্ষপঞ্জীর প্রচলন করেন। তবে তিনি ঊনত্রিশ বছর পূর্বে তার সিংহাসন আরোহণের বছর থেকে এ পঞ্জিকা প্রচলনের নির্দেশ দেন। এজন্য ৯৬৩ হিজরী সাল থেকে বঙ্গাব্দ গণনা শুরু হয়। ইতোপূর্বে বঙ্গে প্রচলিত শকাব্দ বা শক বর্ষপঞ্চির প্রথম মাস ছিল চৈত্র মাস। কিন্তু ৯৬৩ হিজরী সালের মুহাররাম মাস ছিল বাংলা বৈশাখ মাস। এজন্য বৈশাখ মাসকেই বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস এবং ১লা বৈশাখকে বাংলা সনের প্রথম দিন ধার্য করা হয়েছে।
পহেলা বৈশাখে উৎসব পালনের রীতির প্রবর্তন
উপরের আলোচনা দ্বারা বুঝা গিয়েছে—বাংলা সন মূলত হিজরী সন অর্থাৎ তা হিজরী চান্দ্র সনের সৌর রূপ। যদ্দরুণ হিজরী সনের ন্যায় বাংলা সনের গণনা রাসূলুল্লাহ-এর হিজরত থেকেই শুরু করা হয়েছে। ১৪১৫ বঙ্গাব্দ অর্থ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হিজরতের পর ১৪১৫ বৎসর। ৯৬২ চান্দ্র বৎসর ও পরবর্তী ৪৫৩ বৎসর সৌর বৎসর। সৌর বৎসর চান্দ্র বৎসরের চেয়ে ১১/১২ দিন বেশী এবং প্রতি ৩০ বৎসরে চান্দ্র বৎসর এক বৎসর বেড়ে যায়। এ হিসেবেই বর্তমানে ১৪৩৭ হিজরী সন মোতাবেক বাংলা ১৪২২-১৪২৩ সন হয়েছে।
অতএব, বাংলা সন মুসলমানদেরই সন এবং এটা ইসলামী হিজরী সনেরই উপর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী সন—যা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হিজরতের স্মারক। তাই এ সনের সাথে সংশ্লিষ্ট কৃষ্টি-কালচার ইসলামী কৃষ্টি-কালচারের বাইরে যেতে পারে না।
তাই তো মোগল আমলে পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ আরম্ভের প্রাক্কালে প্রজারা চৈত্রমাসের শেষ পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ করতেন এবং পহেলা বৈশাখে সেই খুশীতে জমিদারগণ প্রজাদেরকে মিষ্টিমুখ করাতেন। এছাড়া বাংলার ব্যবসায়ী ও দোকানদার পহেলা বৈশাখে নতুন সনের হিসাবের জন্য ‘হালখাতা’ করতেন। পহেলা বৈশাখ এসব কর্মকাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এভাবে এটি মূলতঃ রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন নিয়ম-কানুনকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে সুষ্ঠুভাবে কাজ-কর্ম পরিচালনার জন্য নির্ধারিত ছিল। এভাবে তার কার্যক্রম ইসলামসম্মতই ছিলো।
কিন্তু পরবর্তীতে পুরাতন বর্ষ বিদায় ও নববর্ষ বরণের নামে চৈত্রের শেষ দিন ও পহেলা বৈশাখে হিন্দুরা নানারকম পূর্জা-অর্চনার উদ্ভব ঘটায় এবং তাদের দেবী-দেবীর বিভিন্ন প্রতীক ব্যবহার করে এ দিনকে তারা তাদের ধর্মীয় কায়দায় উদযাপন শুরু করে। হিন্দুদের ঘটপূজা, গণেশ পূজা, সিদ্ধেশ্বরী পূজা, চৈত্রক্রান্তি পূজা-অর্চনা, হিন্দুদের চড়ক বা নীল পূজা ও সংশ্লিষ্ট মেলা, গম্ভীরা পূজা, কুমীরের পূজা, অগ্নিনৃত্য, ত্রিপুরাদের বৈশুখ, মারমাদের সাংগ্রাই ও পানি উৎসব, চাকমাদের বিজু উৎসব (ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমাদের পূজা উৎসবগুলোর সম্মিলিত নাম বৈসাবি), হিন্দু ও বৌদ্ধদের উল্কিপূজা, মজুসি তথা অগ্নিপূজকদের নওরোজ, হিন্দুদের মঙ্গলযাত্রা, সূর্যপূজা প্রভৃতি একে উপলক্ষ করেই উদযাপন করা হয়।
এক্ষেত্রে গণেশ পুজার ‘মঙ্গল যাত্রা’ থেকে নেয়া হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা, ‘চৈত্র সংক্রান্তি পুজা’ থেকে নেয়া হয়েছে চৈত্রসংক্রান্তি, হিন্দু-বৌদ্ধদের ‘উল্কিপূজা’ থেকে নেয়া উল্কি উৎসব, বিভিন্ন হিংস্র-অহিংস্র জীব-জন্তু পুজা থেকে নেয়া হয়েছে রাক্ষস-খোক্ষসের মুখোশ, পেঁচা, ময়ূর, বাঘ-ভাল্লুক, সাপ, বিচ্ছু, কুমির ও বিভিন্ন দেব-দেবীর বড় বড় মূর্তি, ছবি ও মুখোশ প্রভৃতির উৎসব, হিন্দুদের ‘আশ্বিনে রান্না কার্তিকে খাওয়া’ প্রথার আদলে চৈত্রের শেষদিনে রান্না করা অন্নে পানি ঢেলে পহেলা বৈশাখের সকালে পান্তা খাওয়ার প্রথা এবং পুজোর অপরিহার্য আইটেম ঢোল-তবলা, কুলা ও হিন্দু রমনীর লাল সিঁদুরের অবিকল লালটিপ এবং পুজোর লেবাস সাদা শাড়ী ইত্যাদি হলো পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ উদযাপনের প্রধান উপাদান! যার মাধ্যমে পহেলা বৈশাখকে হিন্দুরা তাদের পূজার আদলে উদযাপন করে।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, মুসলমানগণ না বুঝে হিন্দুদের সেই পূর্জা-অর্চনার কুফরী কালচারে অংশগ্রহণ করে তাদের ঈমানকে নষ্ট করছেন। হিন্দুদের বিভিন্ন দেব-দেবী থেকে বিভিন্ন বিষয় পাওয়ার নামে তারা শিরক মহাপাপে লিপ্ত হচ্ছেন।
পহেলা বৈশাখে প্রচলিত উৎসব পালনের হুকুম
———————————————-
বস্তুত সকল কিছুর মালিক আল্লাহ তা‘আলা। তাই সব ব্যাপারে আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করতে হবে এবং তারই ইবাদত করতে হবে। তার স্থলে বা সহযোগী ভেবে কোন দেবী-দেবতার কাছে এসব কামনা করলে কিংবা যারা তা করে তাদের সাথে শামিল হলে, ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। এ সবই কুফরী কালচার। অথচ মঙ্গল শোভা যাত্রার নামে যে র্যালি বের করা হয়, এখানে গাইরুল্লাহর কাছে নতুন বছরের মঙ্গল ও কল্যাণ কামনা করা হয়। ইসলামের বিশ্বাস মতে, কোন জীবজন্তু, বন্যপ্রাণী ও দেবদেবীর কাছে কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা করলে তার ঈমান থাকবে না। সে ঈমানহারা কাফের হয়ে যাবে।
সেই সাথে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ও অশ্লীলতা-বেলেল্লাপনার মহড়া এবং বাঙালী কালচারের নামে গরীবদের প্রতি উপহাসমূলক পান্তা খাওয়ার অপসংস্কৃতি একে কদার্যতায় পর্যবসিত করেছে। অপরদিকে শরীরে উল্কি আঁকা, বিভিন্ন জানোয়ারের মুখোশ পরা প্রভৃতি কুকালচার মুসলমানদের ইসলামী মূল্যবোধকে বিনষ্ট করে চলেছে। (নাউযুবিল্লাহ)
বস্তুত কোন মুসলমানের জন্য শরীরে উল্কী অঙ্কন করা জায়িয নয়। তা সম্পূর্ণ হারাম। আর বেগানা নারী-পুরুষ একে অপরকে উল্কি এঁকে দেয়া তো আরো মারাত্মক গর্হিত কাজ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি উল্কি আঁকে এবং যার গায়ে আঁকে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের উপর লা‘নত করেন।”(সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৪৭৭)
তেমনি জীব-জন্তুর ছবি আঁকা ও মুখোশ পরাও হারাম। ইসলামে প্রতিকৃতি কিংবা জীবন্ত বস্তুর ছবি তৈরী করাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ(সা.) বলেন : “কিয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন শাস্তি ভোগ করবে (জীবন্ত বস্তুর) ছবি বা প্রতীমা তৈরীকারীরা।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৫০/ সহীহ মুসলিম. হাদীস নং ২১০৯)
অনুরূপ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : “যে কেউ ছবি বা প্রতীমা তৈরী করবে, আল্লাহ তাকে (কিয়ামতের দিন) ততক্ষণ শাস্তি দিতে থাকবেন যতক্ষণ না সে এতে প্রাণ সঞ্চার করে, আর সে কখনোই তা করতে সমর্থ হবে না।” (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২২২৫/ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১১০)
অপরদিকে মঙ্গল শোভা যাত্রা, পূজার প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, গান বাজনা, বিভিন্ন পাখির ছবি, মুখোশ বা প্রতীমা তৈরি এসবই স্পষ্ট বিজাতীয় কালচার–যা পালন করা মুসলমানদের জন্য হারাম। মুশরিকদের এসব কালচারে মুসলমানদের শামিল হওয়া কিয়ামতের আলামত বৈকি। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত ঘটবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমার উম্মতের একদল লোক মুশরিকদের সাথে মিলিত হবে এবং যতক্ষণ না তারা মূর্তি পূজা করবে।” (জামি‘ তিরমিযী, হাদীস নং ২২১৯)
মুসলমানদের উৎসবের স্বরূপ
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন :
قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ وَلَهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُونَ فِيهِمَا، فَقَالَ: مَا هَذَانِ الْيَوْمَانِ؟ قَالُوا: كُنَّا نَلْعَبُ فِيهِمَا فِي الْجَاهِلِيَّةِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَبْدَلَكُمْ بِهِمَا خَيْرًا مِنْهُمَا يَوْمَ الْأَضْحَى وَيَوْمَ الْفِطْرِ
“রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মদীনায় আগমন করলেন, তখন মদীনাবাসীদের দু’টি দিবস ছিল, যে সময় তারা খেলাধুলা, রঙ-তামাশা ইত্যাদি উৎসব করতেন। তা দেখে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন : এ দু’টি দিবস কী? তারা বললেন : আমরা এতে জাহিলী যুগে খেলতামাশা উৎসব করতাম। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন : “নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তার পরিবর্তে তার চেয়ে উত্তম দু’টি দিন দিয়েছেন : ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১১৩৪, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ১৩২১০ প্রভৃতি)
এ হাদীসের প্রেক্ষিতে আল্লামা ইব্ন তাইমিয়াহ (রহ.) বলেন : “এ হাদীস প্রমাণ করে—এ দুই ঈদ ব্যতীত অন্য কোনদিন কোন উৎসব পালন করা মুসলমানদের জন্য জায়িয হবে না, তা হারাম হবে। কারণ, রাসূলুল্লাহ (সা.) মদীনায় পূর্বপ্রচলিত উৎসব বাতিল করে আল্লাহর কর্তৃক দুই ঈদ প্রদানের কথা বলেছেন। তিনি জাহিলী রীতি মোতাবেক তাতে খেলতামাশার উৎসব করার অনুমতি দেননি। এর দাবী হলো, পূর্বের আমল ত্যাগ করা। কারণ, বদল করার পর উভয় বস্তুকে জমা করা যায় না। বদল শব্দের অর্থ হলো–একটি ত্যাগ করে অপরটি গ্রহণ করা।” (ফাইজুল কাদীর, ৪র্থ খণ্ড, ৫১১ পৃষ্ঠা)
তেমনিভাবে সূরাহ ফুরকানে আল্লাহ তা‘আলা বিশেষ বান্দাদের গুণাবলী উল্লেখ করেছেন, যাদেরকে তিনি রহমানের বান্দা বলে সম্বোধন করেছেন। তাদের একটি বিশেষ গুণ এই বর্ণনা করেছেন যে, তারা কখনো বিধর্মীদের উৎসবে যোগ দেন না। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
وَٱلَّذِينَ لَا يَشۡهَدُونَ ٱلزُّورَ وَإِذَا مَرُّواْ بِٱللَّغۡوِ مَرُّواْ كِرَامٗ
“আর যারা অমূলক উৎসবে উপস্থিত হয় না এবং যখন তারা অনর্থক বিষয়ের পাশ দিয়ে পথ অতিক্রম করে, তখন নিজেদের সকীয়-সম্মান বজায় রেখে পথ অতিক্রম করে।” (সূরাহ ফুরকান, আয়াত নং ৭২)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাবিয়ী মুহাম্মদ ইব্নে সিরীন, মুজাহিদ, রাবী ইবনে আনাস, ইকরিমা ও জাহহাক (রহ.) বলেন : “আয়াতে বর্ণিত ٱلزُّورَ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বিধর্মীদের উৎসব। উক্ত আয়াতে মুসলমানদেরকে বিধর্মীদের উৎসবে অংশগ্রহণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।”
হযরত আমর ইবনে মুররাহ (রহ.) বলেন : “এ আয়াতে বলা হয়েছে–“আল্লাহ-রাহমানের বান্দারা মুশরিকদের শিরকী কাজে শামিল হয় না এবং তাদের সাথে তাদের কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে না।” (সুনানে সায়ীদ ইব্ন মানসুর, ২৭৯১ পৃষ্ঠা)
এমনকি আল্লামা ইব্নুল কায়্যিম জাওযী (রহ.) বলেন : “বিধর্মীদেরকে তাদের কুফরী উৎসব উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানোও হারাম। যেমন বলা যে, “অমুক পূজা সফল হোক”, “শুভ বড় দিন” অথবা এ জাতীয় অন্যান্য শব্দ ব্যবহার করা নাজায়িয়। এভাবে কারো কুফরী উৎসবে শুভেচ্ছা জানানো প্রকারান্তরে এসব কাজকে সমর্থন করার নামান্তর—যা ঈমানধ্বংসী কাজ। (আহকামু আহলিয যিম্মাহ, ১৩২ পৃষ্ঠা)
তেমনিভাবে বিধর্মীদের সাদৃশ্য কোনকিছু পালনও ইসলামে নিষিদ্ধ। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবে (তাদের সাথে তার হাশর হবে)।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৫১৪)
এ হাদীসের ব্যাখ্যা করে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন :
مَنْ تَنَافَى أَرْضَ الأَعَاجِمِ فَصَنَعَ نَيْرُوزَهُمْ وَمَهْرِجَانِهِمْ حُشِرَ مَعَهُمْ
“যে ব্যক্তি বিজাতীয় দেশের অনুকরণ করে, অতঃপর তাদের নওরোজ ও মেহেরজান (নববর্ষ) উদযাপন করে, কিয়ামতের দিন তাকে তাদের সাথে উঠানো হবে।” (সুনানে বাইহাকী, ৩১৫ পৃষ্ঠা)
তাই মুসলমানদের কর্তব্য হচ্ছে–ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় ইসলামের নির্দেশিত পন্থায় জাতীয়ভাবে আনন্দ-উৎসব পালন করা। এ ছাড়া কোন বিজাতীয় ও বিধর্মী কালচারের উৎসব পালন করা মুসলমানদের জন্য জায়িয নয়। কারণ, তা দ্বীন ও ঈমানের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
আসুন, কাফের-বেদ্বীনদের অপসংস্কৃতির অনুসরণ ত্যাগ করে আমরা পূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ করি। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিচ্ছেন :
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱدۡخُلُواْ فِي ٱلسِّلۡمِ كَآفَّةٗ وَلَا تَتَّبِعُواْ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيۡطَٰنِۚ إِنَّهُۥ لَكُمۡ عَدُوّٞ مُّبِينٞ
“হে মুমিনগণ! তোমরা ইসলামে পূর্ণরূপে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” ( সূরাহ বাকারা, আয়াত নং ২০৮)