স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার কারণ ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির উপায়

আবু মুনতাহা

আল্লাহ তায়ালার অসংখ্য নেয়ামত রাজির মধ্যে নিঃসন্দেহে স্মৃতিশক্তি একটি বড় নেয়ামত। যা আল্লাহ কম বেশী সবাইকে দান করেছেন। যাদের স্মৃতি শক্তি কম বা লোপ পেয়ে শূন্যের কোঠায় চলে এসেছে তারাই কেবল বুঝতে পারে স্মৃতিশক্তি কত বড় নেয়ামত।

যে সব কারণে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায় তা নিম্নে উল্লেখ করা হল :

⇒ গোনাহ করা। এটি স্মরণশক্তি লোপ পাওয়ার একটি অন্যতম কারণ।

⇒ অধিক হাসি ঠাট্টা করা।

⇒ ইস্তিঞ্জার জায়গায় অজু করা।

⇒ মসজিদে বাম পা দিয়ে প্রবেশ করা। ডান পা দিয়ে বের হওয়া।

⇒ ময়লা আবর্জনা দেখা।

⇒ ফলবান গাছের নীচে পেশাব করা।

⇒ অযথা রাগ করা।

⇒ দাঁড়িয়ে পেশাব করা।

⇒ নিজের বা অন্যের লজ্জাস্থানের দিকে তাকানো।

⇒ বেগানা মহিলা / পুরুষের দিকে তাকানো।

⇒ যিনা ব্যভিচার করা।

⇒ পানাহারের পূর্বে বিসমিল্লাহ না বলা।

⇒ আঙ্গুল দিয়ে খেলা করা। যেমন- কেরাম বোর্ড খেলা।

⇒ হস্তমৈথুন করা।

⇒ কাপড়ের আঁচল দিয়ে মুখ মোছা।

⇒ দীর্ঘ সময় নির্ঘুম থাকা। ব্রেইনে প্রেশার দিয়ে কাজ করতে থাকা।

⇒ অপ্রয়োজনীয় কথা বলা। সাধারণত বেশী কথা বললে মস্তিষ্কের শক্তি অপচয় হয়। আর এর প্রভাব পড়ে স্মরণশক্তির উপর।

⇒ পরিধানের কাপড় দ্বারা মুখ মোছা।

⇒ টিভি, সিনেমা এবং উলঙ্গ ও অর্ধ-উলঙ্গ ছবি দেখা।

⇒ অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্ন থাকা বা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস করা।

যাদের স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে বা স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে, তাদের প্রয়োজন স্মৃতিশক্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা। নিম্নে কয়েকটি পন্থা উল্লেখ করা হল। যদি কেউ আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা করে উক্ত পন্থা অনুযায়ী চলে, তবে স্মৃতি উন্নত হবে।

স্মৃতি বৃদ্ধির আমলসমূহ –

⇒ স্মরণশক্তি বৃদ্ধির আমল সমূহের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী আমল হল- সব রকম গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা

⇒ যথাসম্ভব নির্জনতা অবলম্বন করা।

⇒ চোখের হেফাজত করা। অর্থাৎ প্রয়োজন ব্যতীত এদিক সেদিক না দেখা।

⇒ অবিরাম চেষ্টা করা। নিরলসভাবে চেষ্টা চালালেও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। ইমাম আবু হানীফা (রহ.) ইমাম আবু ইউসুফকে বলেছিলেন ‘তুমি মেধাহীন ছিলে, ক্লাসের উপস্থিতি ও চেষ্টা তোমাকে মেধাবী বানিয়েছে।

⇒ কম খাওয়া।

⇒ রাতের বেলায় মধু খাওয়া।

⇒ দেখে দেখে কুরআন পড়া। এটি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ।

⇒ মিসওয়াক করা।

⇒ নিয়মিত মাথায় তেল দেয়া।

⇒ রাসূল (সা.) এর উপর বেশী বেশী দুরুদ পড়া।

⇒ তিনবার সূরা মুজ্জাম্মিল পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে পান করা।

⇒ নারিকেল তেল ব্যবহার করলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে।

⇒ তিলের তেল ব্যবহার করলে মেধা বাড়ে এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত হয়।

⇒ দুপুরে শোয়া সুন্নত, এতে অনেক উপকারিতা রয়েছে তার মধ্যে একটি হল মেধা বাড়ে।

⇒ নিয়মিত ব্যায়াম করলে স্মরণশক্তি তীক্ষ্ণ হয়।

⇒ সবসময় হাসি খুশি অর্থাৎ টেনশন মুক্ত থাকলে এবং মিষ্টি ভাষায় কথা বললে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।

⇒ প্রতিদিন ফজর ও মাগরিবের পর একবার ফাতেহা, তিনবার সূরা ইখলাস এবং ১১ বার দুরুদ শরীফ পড়ে মুনাজাত করলে এবং মুনাজাতের প্রথমে নবীজীর প্রতি ও ক্রমানুসারে সকল মুসলমানের জন্য ছওয়াব পৌঁছিয়ে নিজের গোনাহের মাফ চেয়ে স্মরণশক্তির জন্য দোয়া করলে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়।

স্মৃতি বৃদ্ধির খাবার সমূহ- 

⇒ মধু পান করা।

⇒ মাখনে ভেজে বাদাম খাওয়া।

⇒ মিষ্টি দ্রব্য খাওয়া।

⇒ ঘি খাওয়া।

⇒ হালাল জন্তুর ঘাড়ের গোশত খাওয়া।

⇒ ফল ফলাদী খাওয়া।

⇒ মিষ্টি আপেল খাওয়া।

⇒ ঠাণ্ডা রুটি খাওয়া।

⇒ ভাত গরম খাওয়া।

⇒ হযরত আলী (রা.) বলেন, স্মরণশক্তি বৃদ্ধির জন্য মিষ্টি ডালিমকে আবশ্যক মনে করা।

⇒ কিশমিশ খাওয়া।

⇒ বিস্মৃতি দূর করার জন্য দুধ আবশ্যক। কারণ, তা অন্তরে সাহস যোগায় এবং বিস্মৃতি দূর করে।

⇒ এন্টি অক্সিডেন্ট এর পরিমাণ বাড়ানো কারণ তা স্মৃতি শক্তির জন্য অত্যন্ত কার্যকর। এটি টাটকা শাক-সবজি, ফলমূল যথা : পাকা পেঁপে, আনারস, কমলা লেবু, আম, কালো জাম, গাজর, পেয়ারা ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাল শাক, পালং শাক ইত্যাদিতে পাওয়া যায়।

⇒ কফি ও চা পান করা, তবে প্রত্যেক দিন তিন কাপের বেশী করা উচিত নয়।

⇒ আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ। কারণ পরিষ্কার ও স্বচ্ছ স্মৃতিশক্তির জন্য আয়রন অত্যন্ত কার্যকর। আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন : শস্য দানা, ভুট্টা, শিম, কচু শাক ও গাঢ় শাক সবজি ইত্যাদি।

⇒ যাদের ভুলে যাওয়া অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের উচিত হল ১ কাপ গরম পানিতে ৩/৪ গ্রাম খেসারীর ডাল ভিজিয়ে রেখে ঐ পানি পান করা।

⇒ সকালে খালি পেটে অল্প পরিমাণ মধু সামান্য জাফরানের সাথে মিশিয়ে খাওয়া।

যদি কোন জিনিস মুখস্থ রাখতে চান, তবে উচিত হল জিনিসটির প্রতি গভীর মনোযোগ দেয়া। অমনোযোগী অবস্থায় কখনো মুখস্থ হবে না আর হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। মুখস্থ করার জন্য উত্তম সময় হল রাতের শেষ ভাগে, প্রত্যুষে এবং মাঝ রাতের পর। কারণ এ তিন সময়ে মানুষের মন পরিষ্কার থাকে এবং স্থির থাকে, তাই যে কোন বিষয় শেখা সহজ হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *