করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার আমলসমূহ

মুফতি মনসূরুল হক

বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশেও বিস্তার ঘটেছে এ ভাইরাসের। করোনা আক্রান্ত এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আক্রান্ত হয়েছে আরও প্রায় বিশজন। কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ অবস্থায় করোনার সংক্রমণ এবং বিস্তার ঠেকাতে বিশেষ সতর্কতা এবং সচেতনতার কথা বলা হচ্ছে। মহামারী এ ভাইরাসের প্রতিষেধক এখন পর্যন্ত আবিষ্কার না হওয়ায় সতর্কতা-সচেতনতার পাশাপাশি কুরআন হাদিসে বর্ণিত আমলগুলো গুরুত্বের সাথে পালনের জন্য আলেমদের পক্ষ থেকে বিশেষভাবে আহ্বান জানানো হচ্ছে। আজকে এক আলোচনায় দেশের প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন মুফতি মনসূরুল হক কতিপয় আমলের কথা বলেন-

১. সর্বপ্রথম নিজের ঈমান আমলকে সংশোধন করা।

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-

وَمَا كَانَ رَبُّكَ لِيُهْلِكَ الْقُرَى بِظُلْمٍ وَأَهْلُهَا مُصْلِحُونَ

অর্থ : আর আপনার রব এমন নন যে, তিনি জনপদসমূহকে অন্যায়ভাবে ধ্বংস করে দেবেন অথচ তার অধিবাসীরা সৎকর্মে লিপ্ত রয়েছে। (সূরা হুদ : ১১৭)

২. দুই নম্বর কাজ হলো-আকীদা সহীহ করা।

পবিত্র কুরআনে কারীমে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

قُلْ لَنْ يُصِيبَنَا إِلَّا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَنَا هُوَ مَوْلَانَا وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ

অর্থ: হে নবী! আপনি বলে দিন! আল্লাহ আমাদের জন্য (তাকদীরে) যা লিখে রেখেছেন তা ছাড়া অন্য কোনও কষ্ট আমাদেরকে কিছুতেই স্পর্শ করবে না। তিনিই আমাদের অভিভাবক। আর আল্লাহর উপর মুমিনদের ভরসা করা উচিত। (সূরা তাওবা; আয়াত ৫১)

কাজেই যে কোনও বালা-মুসীবত ও মহামারিতে মুমিন বান্দার প্রথম কাজ হলো নিজের আকীদা বিশ্বাস দৃঢ়
করা যে, আল্লাহ তাআলা যদি আমার তাকদীরে লিখে রাখেন, তবে তা কোনভাবেই আটকানো সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে

আল্লাহ তাআলাই আমাকে সুস্থতা দান করবেন, মারা গেলে ‘শহীদ’ এর মর্যাদা তথা বিনা হিসেবে জান্নাত
দান করবেন। আর যদি আমার তাকদীরে এ রোগ না লিখে থাকেন, তবে এ রোগ আমার কক্ষনো হবে না।
এর পাশাপাশি এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, করোনা ভাইরাস কোনও রোগ ছোঁয়াচে রোগ নয়। বরং আল্লাহ
তাআলা তাকদীরে রেখেছেন-এ জন্য হয়েছে। হাদীসে পাকে ইরশাদ হয়েছে-নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন- ولا عدوى،অর্থাৎ ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নেই!’ এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন যে, ইয়া
রাসূলুল্লাহ! আমরা একটি খুজলিযুক্ত বকরী অন্যান্য (সুস্থ) বকরীর মাঝে রেখে দিলে সেগুলোও তো খুজলি রোগে

আক্রান্ত হয়ে যায়! নবীজী বললেন, ‘ فمن أعدى الأول ‘তাহলে প্রথম বকরীটি কী কারণে আক্রান্ত হলো?’ অর্থাৎ
প্রথম বকরীটি যেভাবে আল্লাহর হুকুমে আক্রান্ত হয়েছে, তেমনি অন্যগুলোও আল্লাহর হুকুমে আক্রান্ত হয়েছে।
(মুসনাদে আহমাদ; হা.নং ৩০৩১)

৩. বেশি বেশি ইস্তেগফার করা তথা আল্লাহর কাছে নিজ গোনাহের জন্য ক্ষমা চাওয়া।

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-

وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنْتَ فِيهِمْ وَمَا كَانَ اللَّهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ

অর্থ : এবং (হে নবী!) আল্লাহ এমন নন যে, আপনি তাদের মাঝে বর্তমান থাকা অবস্থায় তাদেরকে শাস্তি দেবেন এবং তিনি এমনও নন যে, তারা ইস্তিগফারে রত থাকা অবস্থায় তাদেরকে শাস্তি দেবেন। (সূরা আনফাল : ৩৩)

৪. এ দু‘আটি বেশি বেশি পাঠ করা-

لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ

অর্থ : (হে আল্লাহ!) আপনি ছাড়া কোনও মাবুদ নেই। আপনি সকল ত্রুটি থেকে পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি অপরাধী (সূরা আম্বিয়া ৮৭)

৫. বাদ ফজর ও বাদ মাগরিব তিন তিনবার নিম্নোক্ত দু‘আ দুটি পড়া

بِسْمِ اللهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

অর্থ : আল্লাহর নামে, যার নামের সাথে আসমান ও যমীনে কোনও বস্তু ক্ষতিসাধন করতে পারে না। আর তিনিই সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী! (মুসনাদে আহমাদ; হা.নং ৪৪৬)

أعوذ بكلمات الله التامات من شر ما خلق

উচ্চারণ : আউযুবিকালিমাতিল্লাহিত; তাম্মা-তি মিন শাররি মা খলাক্ব। অর্থ : আমি আল্লাহর কাছে তার পরিপূর্ণ ‘কালেমা’র মাধ্যমে সকল সৃষ্টিজীবের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। (মুসনাদে আহমাদ; হা.নং ৭৮৯৮)

৬. নিম্নোক্ত দুআটি বেশি বেশি পাঠ করা-

اللهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ، وَالْجُنُونِ، وَالْجُذَامِ، وَمِنْ سَيِّئِ الْأَسْقَامِ

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি শে^ত রোগ, উন্মাদনা, কুষ্ঠ রোগ এবং সকল প্রকার দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। (মুসনাদে আহমাদ; হা.নং ১৩০০৪)

৭. দিনে যে কোনও সময়ে সূরা ফাতিহা তিনবার, সূরা ইখলাস তিনবার, এবং নিম্নোক্ত দুআটি ৩১৩ বার পড়া-

حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ

অর্থ : আল্লাহ তাআলাই আমাদের জন্য যথেষ্ট। আর তিনি অতি উত্তম অভিভাবক। (সূরা আলে ইমরান; আয়াত ১৭৩)

৮. দিনে যে কোনও সময়ে নিজ পরিবারে সম্মিলিতভাবে সীরাতুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের
নির্ভরযোগ্য কোনও কিতাবের তা‘লীম করা।

এটা একটা পরীক্ষিত আমল। নিকট অতীতে হিন্দুস্তানে
একবার এক মহামারি দেখা দেয়। তখন হযরত আশরাফ আলী থানভী রহ. এ মহামারি থেকে বাঁচার জন্য
‘নাশরুত তীব’ নামে সীরাতগ্রন্থ লেখা শুরু করেন। এ সীরাতের বরকতে আল্লাহ তাআলা মহামারি উঠিয়ে
নেন!

নির্ভরযোগ্য সীরাতের কিতাব যেমন সাইয়্যেদ আবুল হাসান নদবী রহ. রচিত কিতাব ‘নবীয়ে রহমাত’
(বাংলা), মুফতী শফী রহ.কৃত ‘সীরাতে খাতামুল আম্বিয়া সা. (বাংলা)।

আতঙ্ক নয়, সতর্ক হই, সচেতন হই, গুনাহ বর্জন করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *