লিখেছেন – মাশকুরা খাতুন আমিনী
আমার স্বপ্ন, আমি একজন লেখিকা হবো। শুনেছি, লেখিকা হতে হলে নাকি বেশি বেশি বই পড়তে হয়। কিন্তু, বই পড়তে ভালো লাগে না; এটা আমার মন্দ দিক। ক্লাসে দেখতাম আমার ক্লাসমেটরা বই নিয়ে কি কাড়াকাড়ি! ও এটা পড়বে, সে সেটা পড়বে, এই নিয়ে টানাটানি। আমি শুধু তাকিয়ে থাকতাম, আর বলতাম, “তোমরা বইয়ে কী এতো মজা পাও? কী লাভ হয়? বরং, ক্লাসের বই পড়ো, এতে লাভবান হবে।” ওরা বলতো, পড়েই দেখো না কী মজা! আমি বলতাম, না পড়বো না, আমার ভালো লাগে না। একদিন এক ক্লাসমেট প্রতিজ্ঞা করেছিলো যে, সে আমাকে বই পাগলী বানিয়েই ছাড়বে, তার অক্লান্ত চেষ্টার পর, অবশেষে সে বিফল হলো।
.
ক্লাসমেটরা আমাকে দিয়ে নানান ধরণের কবিতা-ছড়া লেখাতো। আমিও নিজের মত করে লিখে দিতাম। খুব একটা ভালো হতো না। লেখাগুলো ওরা ওদের নামে বিভিন্ন ম্যাগাজিনে ছাপাতো। যখন ছাপা হত, ওরা কী আনন্দ নিয়ে এসে আমাকে দেখাতো। আমারও ভালো লাগতো। দুঃখের কথা হল! সেই সব কবিতা-ছড়া কোথাও সংগ্রহ করে রাখিনি। আর ক্লাসমেটরাও যার যার বাড়িতে, আবার কেউ শ্বশুড় বাড়িতে; অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাইনি! তবে একটা পেয়েছি, তা সংগ্রহ করে রেখেছি। এদিকে আমার ছোট বেলা থেকে লেখিকা হবার বড্ড শখ। আমি লেখবো, আমার লেখা সবাই পড়বে; আমিও পড়বো, আহ! কি ভালো লাগবে ইত্যাদি। কিন্তু, তা আর হলো না। সময়ের সাথে সাথে সব কিছু কেমন যেন পরিবর্তন হতে লাগলো। এক সময় এমন ছিলাম, খাতা কলম নিয়ে যখন তখন বসে পড়তাম, আর যা মাথায় আসতো লেখতাম। এজন্য আম্মুর অনেক বকুনি শুনতে হতো।
.
গত কয়েকবছর আগে “মাসিক আদর্শ নারী” আমি নিয়মিত পড়তাম। পড়ার জন্য রীতিমত পাগলপারা ছিলাম। কারো হাতে “আদর্শ নারী” দেখলেই হলো, যতক্ষণ পর্যন্ত বইটি পড়ে শেষ না করছি নিস্তার নেই, পড়েই তবে শান্ত হতাম। তখন আমার মাথায় একটা স্বপ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিলো। আর তা হল, কীভাবে “মাসিক আদর্শ নারী”তে লেখা পাঠাবো। সবাই লেখে, লেখা ছাপা হয়। আমি কেন লেখবো না? এই নিয়ে কত কল্পনা জল্পনা। একদিন ভাইয়ার সাথে আমি বায়না ধরে বসলাম, বললাম, যেকোনো উপায়েই হোক, আমার লেখা আদর্শ নারীতে পাঠাতে হবে। ভাইয়া আমার কথা ফান করে উড়িয়ে দিলেন। বললেন, এক কাজ কর, তোকে কতগুলি খাতা এনে দেই, আর তুই লেখে লেখে খাতাগুলোতে রাখ, একদিন সব লেখা বই আকারে বের করে দিবো।
ধ্যাত! আর ভালো লাগে না। এভাবে সবার কাছে বায়না করে কোন লাভ হলো না। ভাবলাম, তাহলে কি আমি কখনো “আদর্শ নারী”তে লেখা পাঠাতে পারবো না? আমার স্বপ্ন কি কখনো পূরণ হবে না?? এই সেই ভাবতে ভাবতে আস্তে আস্তে লেখার মন-মানসিকতাও চলে যেতে লাগলো।
.
অবশেষে…
হঠাৎ থমকে গেলো কলম,
পড়ে রইলো খাতা।
রয়ে গেলো সব স্বপ্ন,
মনের যত কথা।।
.
হবো আমি লেখিকা একদিন,
লেখবো অনেক কিছু।
বাধা যত আসুক না কেন,
ছাড়বো-না স্বপ্নের পিছু।।
.
একদিন আবার চলবে কলম,
সত্য-ন্যায়ের পথে।
সব স্বপ্ন হবে পূরণ,
আল্লাহ আছেন সাথে।।
.
থামবো না কোথাও আমি,
ছুটবো তীব্র গতিতে।
বাধা যত আসবে সামনে,
ভাসিয়ে দেবো কালির স্রোতে।।
.
আজও স্বপ্ন দেখি আমি,
একজন লেখিকা হবো।
কলমের হুংকারে ঘুমন্ত সবাইকে,
জাগিয়ে আমি তুলবো।।
.
আল্লাহ আমাকে কবুল করো, আল্লাহুম্মা আমীন!!