রাসূলুল্লাহর (সা.) প্রতি উম্মতের কর্তব্য


হাফেজ মাওলানা ইয়াহ্ইয়া ইবনে রূহুল কিস্ত আল-মাদানী


হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ উম্মতের নিকট প্রেরিত মহান আল্লাহর রাসূল। তিনি মহান আল্লাহর দ্বীন উম্মতের নিকট যথাযথভাবে পৌঁছিয়েছেন। তাঁর প্রতি উম্মতের বিশেষ কর্তব্য রয়েছে। তা পালন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অপরিহার্য।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি উম্মতের কর্তব্যগুলো বিভিন্ন প্রকারের। এ সবগুলো কর্তব্য যথাযথভাবে তাদের পালন করা আবশ্যক। যার বিস্তারিত বিবরণ নিম্নরূপ–

১। সকল মানুষের ওপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রাধান্য ও শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া কর্তব্য :
.
মহান আল্লাহ স্বীয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সৃষ্টির আদি ও অন্তের সকলের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। অতএব, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী। সহীহ মুসলিমের একটি বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ তা‘আলা ইসমাঈলের সন্তান থেকে কিনানাকে চয়ন করেছেন এবং কিনানা থেকে কুরাইশকে নির্বাচন করেছেন। আর কুরাইশ থেকে চয়ন করেছেন বনু হাশিমকে এবং আমাকে চয়ন করেছেন বনু হাশিম থেকে।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬০৭৭)
সহীহ মুসলিমের আরেকটি বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমি আদম-সন্তানদের সরদার এবং এতে কোন অহংকার নেই। আর আমি ঐ ব্যক্তি প্রথম যার কবর বিদীর্ণ হবে, প্রথম যিনি শাফা‘আতকারী হবেন এবং প্রথম যার শাফা‘আত কবুল করা হবে।”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শ্রেষ্ঠত্বের আকীদা, মনে-মগজে ধারণ করার অর্থই হলো তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পোষণ করা। আর এর ভিত্তিতে কথা ও কাজে তাঁকে সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা দিতে হবে।

২। সকল ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে আদব ও তা‘জীম রক্ষা করা কর্তব্য :
.

নিম্নবর্ণিত রূপে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি আদব ও তা‘জীম প্রদর্শন করা যায়–
.
(ক) উপযুক্ত বাক্য দ্বারা তাঁর প্রশংসা করা। এক্ষেত্রে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেভাবে তাঁর প্রশংসা করেছেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং তাঁর নিজ সম্পর্কে বলার জন্য যা শিখিয়ে দিয়েছেন, তা-ই হলো তাঁর প্রশংসা করার জন্য সর্বোত্তম বাক্য।
এতদ্ব্যতীত তাঁর প্রতি দরূদ ও সালাম পেশের মাধ্যমে তাঁর প্রতি উত্তমরূপে তা‘জীম প্রদর্শন করা হয়। মহান আল্লাহ বলেন–

اِنَّ اللّٰہَ وَ مَلٰٓئِکَتَہٗ یُصَلُّوۡنَ عَلَی النَّبِیِّ ؕ یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا صَلُّوۡا عَلَیۡہِ وَ سَلِّمُوۡا تَسۡلِیۡمًا

“নিশ্চয় আল্লাহ ও ফেরেশতাগণ নবীর উপর সালাত পেশ করেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা তার ওপর সালাত ও সালাম পেশ কর।” (সূরাহ আহযাব, আয়াত নং ৫৬)
সালাত ও সালাম রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর স্তুতি বর্ণনার ক্ষেত্রে সর্বোত্তম বলেই তাশাহ্হুদ, খুতবাহ, সালাতুল জানাযা, আযানের পর ও যে কোনো দু‘আর শুরুতে ও শেষে এবং আরো বহু ইবাদাতে তাঁর প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ করার নিয়ম করে দেয়া হয়েছে।
(খ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মর্যাদা, ফজীলত, বৈশিষ্ট্য, মু‘জিজা ও সুন্নাহ নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে তাঁকে বেশী বেশী স্মরণ করা। মানুষকে তাঁর সুন্নাহ সম্পর্কে ওয়কিবহাল করা, তাঁর সম্মান, মর্যাদা ও উম্মতের উপর তাঁর অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলা, তাঁর সীরাতকে সদাপাঠ্য বিষয়বস্তুতে পরিণত করা। এর মাধ্যমে আমাদের হƒদয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ সদা জাগরুক থাকবে।
(গ) শুধু ‘মুহাম্মদ’ নামে তাঁকে উল্লেখ না করা, বরং এর সাথে ‘নবী’ বা ‘রাসূল’ সংযোজন করে সালাত ও সালাম পাঠ করা। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন–

لَا تَجۡعَلُوۡا دُعَآءَ الرَّسُوۡلِ بَیۡنَکُمۡ کَدُعَآءِ بَعۡضِکُمۡ بَعۡضًا

“তোমরা একে অপরকে যেভাবে ডাক, তোমাদের মধ্যে রাসূলের ডাকাকে সেভাবে করো না।” (সূরাহ নূর, আয়াত নং ৬৩)

(ঘ) মসজিদে নববীর আদব রক্ষা করা, বিশেষ করে রাসূলুল্লাহর কবরের পাশে এসে উচ্চ স্বরে কথা না বলা। হযরত উমর (রা.) একদল লোককে রাসূলুল্লাহর মসজিদে উচ্চস্বরে কথা বলার কারণে সতর্ক করেছিলেন।
তাই এ বিষয়ে খুব সাবধান থাকতে হবে। সেই সাথে নবীজীর শহর মক্কা ও মদীনার সম্মান রক্ষা করাও কর্তব্য।
(ঙ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস ও সুন্নাহর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। হাদীস শোনার সময় ধৈর্য ও আদবের পরিচয় দেয়া এবং হাদীস শেখার প্রতি অনুপ্রাণিত হওয়া কর্তব্য। এক্ষেত্রে উম্মতের প্রথম মনীষীগণের পথ অনুসরণ করা বাঞ্ছনীয়।

৩। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব সংবাদ দিয়েছেন, সেগুলোকে সত্য বলে অকাট্যভাবে বিশ্বাস করা কর্তব্য :
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব ব্যাপারে জানিয়েছেন, তাকে মনে-প্রাণে সঠিক বলে বিশ্বাস করতে হবে। এসব বিষয়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো–ঈমানের মৌলিক বিষয়সমূহ, দ্বীনের মৌল স্তম্ভসমূহ, অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত সম্পর্কে তাঁর দেয়া যাবতীয় সংবাদ ইত্যাদি।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সত্যতা সম্পর্কে বর্ণনা করে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন–
وَ النَّجۡمِ اِذَا ہَوٰی ۙ﴿۱﴾ مَا ضَلَّ صَاحِبُکُمۡ وَ مَا غَوٰی ۚ﴿۲﴾ وَ مَا یَنۡطِقُ عَنِ الۡہَوٰی ؕ﴿۳﴾ اِنۡ ہُوَ اِلَّا وَحۡیٌ یُّوۡحٰی
“শপথ তারকার–যখন তা অস্ত যায়। তোমাদের সাথী (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ভ্রষ্ট হননি এবং বিভ্রান্তও হননি। তিনি প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে কোনো বক্তব্য প্রদান করেন না। তা তো শুধুই ওহী, যা তাঁর কাছে প্রেরিত হয়।” (সূরার নাজম, আয়াত নং ১–৪)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দেয়া কোন সংবাদকে অসত্য বলা বা সে সম্পর্কে কোনরূপ সন্দেহ পোষণ করা সম্পূর্ণ কুফুরী–যা ঈমানকে ধ্বংস করে দেয়। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (র.) বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তা‘জীমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো–তাঁর সবকিছু পরিপূর্ণভাবে মেনে নেয়া, তাঁর নির্দেশের আনুগত্য করা, তাঁর দেয়া সব সংবাদ সত্য বলে মেনে নেয়া এবং খেয়ালের বশবর্তী হয়ে বা যুক্তির খাতিরে তা প্রত্যাখ্যান না করা কিংবা তাতে সন্দেহ পোষণ না করা অথবা অন্য লোকদের মতামত ও বুদ্ধিবৃত্তিক নির্যাসকে তাঁর উপর প্রাধান্য না দেয়া। এটা উম্মতের জন্য জরুরী কর্তব্য।”

(মাদারিজুস সালেকীন, ২য় খণ্ড, ৩৮৭ পৃষ্ঠা)

৪। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইত্তিবা‘ ও আনুগত্য করা এবং তাঁর হিদায়াতের পথে পরিচালিত হওয়া কর্তব্য :
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মহান আল্লাহ মানুষের হিদায়াতের জন্য পাঠিয়েছেন। তাই দ্বীনের হিদায়াতের পথে চলার জন্য তাঁর ইত্তিবা‘ করা উম্মতের অপরিহার্য কর্তব্য। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন–
لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰہِ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ
“নিশ্চয় রাসুলুল্লাহর মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ।” (সূরাহ আহযাব, আয়াত নং ২১)
ইমাম ইবনু কাসীর (রহ.) বলেন, “সকল কথা, কাজ ও অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণের ক্ষেত্রে এ আয়াতটি একটি মৌলিক দলীল।” (তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ৩য় খ-, ৪৭৫ পৃষ্ঠা)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন–
مَنۡ یُّطِعِ الرَّسُوۡلَ فَقَدۡ اَطَاعَ اللّٰہَ
“যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করে, সে তো আল্লাহর আনুগত্য করলো।” (সূরাহ নিসা, আয়াত নং ৮০)

৫। যেকোন ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ফায়সালা দ্বিধাহীন চিত্তে মেনে নেয়া কর্তব্য :
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মহান আল্লাহর বিধান বর্ণনাকারী মেনে সকল ব্যাপারে তাঁর ফায়সালা ও হুকুম তামীল করা এবং সে ব্যাপারে নিজের পছন্দ-অপছন্দকে দখল না দেয়া ঈমানী দাবী। এ বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাসূল বলে মেনে নেয়ার অন্যতম একটি মানদন্ড। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন–
فَلَا وَ رَبِّکَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ حَتّٰی یُحَکِّمُوۡکَ فِیۡمَا شَجَرَ بَیۡنَہُمۡ ثُمَّ لَا یَجِدُوۡا فِیۡۤ اَنۡفُسِہِمۡ حَرَجًا مِّمَّا قَضَیۡتَ وَ یُسَلِّمُوۡا تَسۡلِیۡمًا
“আপনার রবের শপথ, তারা কখনো ঈমানদার হবে না যতক্ষণ না তারা আপনাকে নিজেদের মধ্যকার বাদানুবাদের ক্ষেত্রে হুকুমদাতা হিসেবে মেনে নেয়, অতঃপর আপনি যে মীমাংসা প্রদান করেন, তাতে তাদের মনে কোন দ্বিধা রাখে না এবং তা পরিপূর্ণভাবে মেনে চলে।” (সূরাহ নিসা, আয়াত নং ৬৫)
আল্লামা ইবনু তাইমিয়্যা (র.) বলেন, “যারা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত থেকে বের হয়ে যায়, আল্লাহ নিজে তাঁর পবিত্র সত্তার কসম করে বলেছেন যে, তারা ঈমানদার নয়।” (মাজমূউল ফাতাওয়া, ২৮ খণ্ড, ৪৭১ পৃষ্ঠা)

৬। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষে অবস্থান নেয়া কর্তব্য :
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি উম্মতের বিশেষ কর্তব্য হচ্ছে–তাঁর পক্ষে অবস্থান নেয়া এবং তাঁকে তায়ীদ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন–
لِلۡفُقَرَآءِ الۡمُہٰجِرِیۡنَ الَّذِیۡنَ اُخۡرِجُوۡا مِنۡ دِیَارِہِمۡ وَ اَمۡوَالِہِمۡ یَبۡتَغُوۡنَ فَضۡلًا مِّنَ اللّٰہِ وَ رِضۡوَانًا وَّ یَنۡصُرُوۡنَ اللّٰہَ وَ رَسُوۡلَہٗ ؕ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الصّٰدِقُوۡنَ
“যে সকল দরিদ্র মুহাজিরকে তার বাসস্থান ও সম্পত্তি হতে বহিষ্কৃত করা হয়েছে, যারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সাহায্য করে, তারাই হল সত্যবাদী।” (সূরাহ হাশর, হাদীস নং ৮)

তাই আজকের প্রেক্ষাপটে যেখানে বিভিন্ন দেশের অমুসলিমগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক কথা বলছে বা তাঁকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করছে, সেখানে আমাদের উচিত–তাদের এ কাজের প্রতিবাদ করা এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পক্ষে অবস্থান নেয়া।

৭। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাহাবীগণকে মহব্বত করা, তাদের সমালোচনা না করা এবং তাদেরকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা ও তাদের অনুসরণ করা কর্তব্য :
.
কুরআনের বহু আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা সাহাবীগণের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন এবং তাঁদের গুণাগুণ বর্ণনা করেছেন। তিনি তাঁদের প্রতি সন্তুষ্টির ঘোষণা দিয়েছেন। তেমনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের প্রশংসা করেছেন এবং তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁদের অনুসরণের জন্য বলেছেন। আর তাঁদের সমালোচনা করতে নিষেধ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে সাহাবীগণের প্রতি ভালোবাসা পোষণের মাধ্যমে ব্যক্তির মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ভালোবাসা পাকাপোক্ত হয়।

৮। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাতের প্রচার-প্রসার করা তাঁর প্রতি উম্মতের একটি অন্যতম কর্তব্য :
.
নিজের জীবনে নবীজীর সুন্নাতকে বাস্তবায়ন না করে এবং সুন্নাতের প্রচার-প্রসারের জন্য কোনরূপ চেষ্টা না করে শুধু মৌখিকভাবে তাঁকে ভালোবাসার দাবী করলেই তাঁর প্রতি ভালোবাসা পোষণ করা গণ্য হয় না–এ বিষয়টি সবার কাছেই স্পষ্ট। আজ আমাদের সমাজে যেখানে সুন্নাত ও বিদ‘আতের এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ ঘটেছে, অথবা যেখানে মানুষ প্রতিনিয়ত সুন্নাত থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, কিংবা তথাকথিত কতিপয় আধুনিক শিক্ষিতরা সুন্নাতের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রদর্শন করছে, সেখানে সত্যিকার সুন্নাতের বিপুল প্রচার ও প্রসার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভালোবাসার দাবীদারদের উপর এক অপরিহার্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পরিশেষে এ কথা বলে শেষ করবো যে, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানব ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল। তাঁর প্রতি মহব্বত রেখে তাঁর ইত্তিবা‘ ও আনুগত্য করেই তার উম্মতগণ শ্রেষ্ঠ উম্মতরূপে পরিগণিত হতে পারে। এটাই তাঁর প্রতি উম্মতের সবিশেষ মহান দায়িত্ব ও কর্তব্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *