প্রশ্নঃ
মুহতারাম মুফতী সাহেব (দাঃবাঃ)
আপনার নিকট জানতে চাই যে, মানুষের অঙ্গ-প্রতঙ্গ ক্রয়-বিক্রয় করা বা দান করা জায়েয আছে কিনা? তাছাড়া রক্ত দান বা ক্রয়-বিক্রয়ের হুকুম কি??
বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ হবো!
প্রশ্নকারীঃ
মুন্সি কালাল হুসাইন দুলাল
চুনারুঘাট, সিলেট৷
📝 উত্তরঃ
بسم الله الرحمن الرحيم
তিনটি কারনে মানব অঙ্গ-প্রতঙ্গ ক্রয়-বিক্রয় ও দান করা নিষিদ্ধ৷
১৷ বেচাকেনা বৈধ হওয়ার জন্য বস্তুর মালিকানা স্বত্বের অধিকারী হওয়া অপরিহার্য। অথচ ইসলামী শরিয়ত মতে মানুষ তার দেহের মালিক নয়। বরং এটি আল্লাহর পবিত্র আমানত। আল্লাহ তায়ালা শুধু মানুষকে এগুলো নিজে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছেন৷ কোন ধরনের পরিবর্তন বা ক্রয়-বিক্রয় করার ক্ষমতা কাউকে দেননি৷ আর মালিকানা বহির্ভূত বস্তু ক্রয়-বিক্রয় ও দান করা হারাম।
২৷ মানুষ ‘আশরাফুল মাখলুকাত’। সৃষ্টির সবচেয়ে সম্মানিত সৃষ্টি৷ তাই তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও অত্যন্ত সম্মানিত বস্তু। আর আল্লাহর দেয়া সম্মানিত কোন বস্তুকে অসম্মান করা নিষিদ্ধ৷ কাজেই সাধারণ পণ্য সামগ্রীর মতো মানব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্রয়-বিক্রয় করা হারাম।
৩৷ যদি মানব অঙ্গ-প্রতঙ্গ বেচাকেনা বৈধ বলে ঘোষিত হয়, তবে সে ক্ষেত্রে ‘ছেলেধরার’ মতো ‘লাশ ধরা’ চক্রের আবির্ভাব ঘটবে। অর্থ-সম্পদের মতো মানব ছিনতাই শুরু হবে। সর্বোপরি অসুস্থ বিত্তবানদের অর্থের কাছে দুস্থ, অনাথ, অসহায় মানুষের জীবন জিম্মি হয়ে পড়বে। অথচ কারো জান-মাল জিম্মি করা হারাম৷ তাই ইসলাম মানব অঙ্গ-প্রতঙ্গ বেচাকেনাকে হারাম করেছে৷
সুতরাং মানুষের কোন অঙ্গ-প্রতঙ্গ তথা হাত-পা, চক্ষু, হাড়-চর্বি, চুল ইত্যাদি ক্রয়-বিক্রয় বা দান করা সম্পূর্ণরুপে নাজায়েয ও হারাম৷ আর এক্ষেত্রে জীবিত ও মৃত মানুষের একই বিধান৷
তবে প্রয়োজনে রক্ত দান করা বা গ্রহণ করা জায়েয হবে৷ কেননা রক্ত দান আর অঙ্গ-প্রতঙ্গ দান এক বিষয় নয়৷ কারন মানুষের শরীরে সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ রক্ত সৃষ্টি হতে থাকে৷ একবার রক্ত দান করলে আবার অল্প সময়ের মধ্যেই উক্ত পরিমাণ রক্ত সৃষ্টি হয়ে যায়৷ তাছাড়া রক্তের সাদৃশ্য রয়েছে দুধের সাথে, দুধ যেমন অন্যকে খাওয়ানো যায় তেমনি রক্তও অন্যকে দেওয়া যায়৷ কিন্তু বিনামূল্যে যদি রক্ত না পাওয়া যায় তবে ক্রয় করা জায়েয হবে৷ আর রক্তদানের ক্ষেত্রে মুসলিম-অমুসলিমের মাঝে কোন পার্থক্য নেই।
والله اعلم بالصواب
📖 প্রমাণ্যগ্রন্থাবলীঃ
সূরা বানী ইসরাঈল ৭০নং আয়াত৷
ফতোয়ায়ে আলমগীরী ৫/৩৫৪ পৃষ্ঠা৷
ফতোয়ায়ে শামী ৫/৫৮ পৃষ্ঠা৷
ফতোয়ায়ে কাসেমীয়া ২/৬২৮ পৃষ্ঠা৷
ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া ১৮/৩৩৭ পৃষ্ঠা৷
কিতাবুন নাওয়াজেল ১৬/১৯৬ পৃষ্ঠা৷
আল আশবাহ ওয়ান নাযায়ের ১৪০ পৃষ্ঠা৷
বেহেশতী জেওর ৫/৫০২ পৃষ্ঠা৷
ফাতহুল কাদীর ৬/৬৩ পৃষ্ঠা৷
ইসলামী ফিকাহ ২/৩৩২ পৃষ্ঠা৷
🌹 উত্তর লিখনেঃ
মুফতী তাহমীদ শামী
আত তাহমীদ ইসলামীক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ৷
তারিখ-২২/০৯/২০২২ ঈসায়ী৷