মাসউদ বিন আতহার
মাগরীবের নামাযের পরপর কুমিল্লা কলোনির রাস্তা ধরে বড় ভাই মাদ্রাসায় যাচ্ছিল। গাছ পালার ঘনত্বের দরুন রাস্তাটি বেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। আশপাশের বাসাগুলোতে ঝুলন্ত বাতির ক্ষীণ আলোতে রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যায়। কিছুদূর সামনে রাস্তা মেরামতের কাজ চলছিল, সেখানকার বাতিগুলো বেশ আলোকজ্বল ।
যদ্দরুন একবার সেদিকে দৃষ্টিপাত করে পেছনে ফিরলে চোখে অন্ধকার অনুভূত হয়। সে রাস্তা ধরে একদল মহিলা দ্রুতপদে ভাইয়ের পাশ কেটে যাচ্ছিল। ভাই তাদের সম্মানার্থে একটু সরে গেল এবং তাদের লোক পেছনে আরো রয়েছে কিনা তা দেখতে যখন পেছনে ফিরল, অমনি একটা লোহার রড এসে ভাইয়ের কপালে বিঁধে গেল। নির্মাণাধীন রাস্তার জন্য যে অন্ধকারেও লোহা আনা নেয়া করছে ভাইয়ার তা জানা ছিলনা।
ভাইয়ার আর্তনাদে কর্মীরা দৌড়ে এসে ধরাধরি করে ভাইকে নির্মাণাধীন রাস্তার বাতির নীচে নিয়ে গেল। সেখানে এক কন্ট্রাকটর কর্মীদের কাজ দেখিয়ে দিচ্ছিল, কর্মীরা এসে তাকে বলল, “উস্তাদ হুজুরকে একটু হাসপাতালে নিয়ে যান। ” কিন্তু সে এ কথার পাত্তা দিলোনা, তারা পুনরায় অনুরোধ করলে কন্ট্রাকটর ঝাঁঝ মিশ্রিত কণ্ঠে বলল, “আমার পকেটে টাকা নেই, আমি নিয়ে যেতে পারবনা। ” এদিকে ব্যথার যন্ত্রনায় ভাই ছটফট করছিল এবং কপাল থেকে অঝোর ধারায় রক্ত প্রবহিত হচ্ছিল । অতঃপর ভাই কাকুতি মিনতি করে বলল ভাই, আপনার একটা পয়সাও লাগবেনা, অনুগ্রহ করে আমাকে শুধু হাসপাতালে নিয়ে যান। এবার সে বলল, “আমি চলে গেলে যে, ওরা বসে বসে আড্ডা দেবে। ” অগত্যা কর্মীরাই একটি রিক্সা ডেকে ভাইকে উঠিয়ে দিল।
প্রিয় পাঠক পাঠিকা চিন্তা করে দেখুন, আজকে যদি তার সহোদর ভাই এর স্হলে হত, তাহলে সে কতটা ব্যস্ত ও উদ্বিগ্ন হত। কাজের ব্যস্ততার বাহানা দিয়ে তাকে ঠেলে দিতে পারতো? কিন্তু সে কি তার ধর্মীয় ভাই ছিলনা? ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধের অনেক ঘটনা আমরা কিতাবে পাই, যা বর্তমানে বিলুপ্তির পথে।
মানুষ মানুষের সামনে তড়পাতে তড়পাতে মরে গেলেও অনেক সময় কেউ এগিয়ে আসেনা , দিন দিন আজনবিয়্যত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ইসলামী ভ্রাতৃত্ব বিদায় নিচ্ছে।