সোহাইল আহমদ
দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনতের সুফল আজ দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট ৷ তাবলীগের মেহনতের ফলে পথহারা হাজারো মুসলমান খোঁজে পেয়েছে চিরমুক্তির পথ ৷ বে-নামাজী হাজারো মানুষ পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের মুসল্লিতে পরিণত হচ্ছে৷ ক্লিন সেভ করা যুবক তাবলীগের মেহনতের ফলে আজ নিজ ইচ্ছায় নবীর সুন্নাত দাঁড়ি রাখছে ৷ পশ্চিমা ফ্যাশন ছেড়ে নিজেকে সাজাচ্ছে নববী পোষাকে ৷
এমনি পথহারা এক যুবক তাবলীগের মেহনতের ফলে খোঁজে পেয়েছে চিরমুক্তির সরল, সঠিক পথ ৷ নেত্রকোণা জেলা প্রতিনিধি মুহাম্মাদ সোহাইলের মাধ্যমে জানিয়েছে তাবলীগের মেহনতের ফলে তাঁর জীবন পরিবর্তনের সেই সত্য গল্প-কাহিনী। পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো তাঁর মুখে বলা হুবহু সেই গল্পটি।
আমার নাম আব্দুল্লাহ, আমি ছিলাম পথহারা এক যুবক ৷
তাবলীগের মোহনতের ফলে আজ পেয়েছি চিরমুক্তির পথ ৷ পরিবর্তন হয়েছে আমার জীবন ৷ এক মধ্যবিত্ত পরিবারে আমার জন্ম।প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ১৯৯৫ সনে ভর্তি হই নিকটস্ত উচ্চ বিদ্যালয়ে।অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বেশ ভালই কাটে আমার শিক্ষাজীবন।প্রতিবছর বার্ষিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উর্ত্তীর্ন হতাম ৷
কিন্তু নবম শ্রেণীতে পদার্পন করেই ইসলাম শূণ্য কিছু বিপথগামী সহপাঠীর পাল্লায় পড়ে পুরো পাল্টে যায় আমার জীবনের মোড় ।লোকে বলে ‘নয় এ জয়’ কিন্তু আমার ক্ষেত্রে ঘটে এর বিপরিত ।জয়ের বদলে আমার জীবনের প্রতিক্ষেত্রে আসতে থাকে শোচনীয় পরাজয়। এস.এস. সি পরীক্ষায় আট বিষয়ে ফেল করে লোকলজ্জায় বাড়ি থেকে পালিয়ে যাই।
প্রথমে সিলেট তারপর চট্টগ্রাম, অবশেষে ঢাকায় গিয়ে একটি কোম্পানীতে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ হই ৷ কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহীস , সেখানেও জুটে যায় কিছু অসৎ বন্ধু-বান্ধব। যাদের সাথে অন্ধকার জগতের বাসিন্দা হিসেবে কেটে যায় আমার জীবনের অনেকটা সময়। নিয়মিত নেশা আর নারীই ছিল আমার নিত্য দিনের সাথী। ইসলাম ও আলেম উলামাদের প্রতি ছিল আমার চরম অবজ্ঞা,বিরূপ মনোভাব। ইসলাম থেকে এত দূর ছিলাম যে, জুমুআ ও ঈদের নামাজটাও পড়া হত না। অবশেষে হঠাৎ একদিন দেখা হয়ে যায় তাবলীগ জামাতের কিছু সাথীর সাথে ৷
তাদের চাল-চলন, কথাবার্তা ও ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে যাই ৷
তাঁরা আমাকে তিনদিনের জন্য তাবলীগে বের হওয়ার তাশকিল করে, আমিও তিন দিনের তাবলীগ জামাতে যাওয়ার নিয়ত করে ফেলি। নিয়্যত তো করলাম কিন্তু শয়তান আমাকে ধোঁকা দিতে শুরু করে ৷ এটা , ওটা শত কথা মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে ৷
অবশেষে আল্লাহর উপর ভরসা করে বের হলাম তিনদিনের জামাতে ৷ আমাদের রোখ দেয়া হল ঢাকা সাভার নবীনগরের এক মাদরাসা সংলগ্ন মসজিদে।
আলহামদুলিল্লাহ, তাবলীগ জামাতে তিন দিন সময় লাগানোর পর নিজের মধ্যে অন্যরকম প্রশান্তি অনুভব করলাম৷ মনে হয়েছে যেন অশান্তির জলন্ত দাবানল থেকে বের হয়ে চির শান্তির পথ খোঁজে পেয়েছি ৷ বিগত সময়ের অশ্লীল, বেহায়াপনা পরিবেশ ছেড়ে মসজিদের পরিবেশ মনে হয়েছে যেন জান্নাতের পরিবেশ ৷
তাই তিনদিন সময় লাগানোর পর মসজিদের জান্নাতি পরিবেশ ছেড়ে যেতে মন চাচ্ছিল না ৷
তিনদিনের ভাললাগা থেকে কিছুদিন পরই তিন চিল্লা বা চার মাস সফরের নিয়ত করি৷ আল্লাহর রহমতে আমার জীবনের মোড় ঘুরতে শুরু করে ৷
আল্লাহ তাআলার কি অশেষ মেহেরবানী আর দয়া যে আল্লাহ আমাকে তিন চিল্লার (৪ মাস) জন্য কবুল করেন। প্রথম চিল্লা হয় নাটোরের গুরুদাসপুরে, দ্বিতীয় চিল্লা হয় দিনাজপুর ঘোড়াঘাটে, তৃতীয় চিল্লা হয় নারায়নগঞ্জ ফতুল্লায় ৷ শার্ট -প্যান্ট পরিধানসহ নিয়মিত ক্লিন সেভ করতাম কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ, তিন চিল্লা শেষে সুন্নতী দাড়ি, টুপি সহ সুন্নতি পোশাক পরে বাড়ি ফিরি।
সঠিক পথে হাটতে শুরু করলাম কিন্তু পরিবার, সমাজ বন্ধু মহল সব যেন আমার বিপরীতে ৷ অনেকেই বলতে শুরু করল বাহ, তিন চিল্লা দিয়ে তো ভালই মৌলবী হয়ে গেলি ৷ বুড়োদের মত দাঁড়িও রাখলি ৷ আরো কত্ত বিরুপ মন্তব্য ৷ কিন্তু আমি অটল অবিচল ৷ কারো কথায় ভ্রক্ষেপ না করে তাবলীগ জামাতে মুরুব্বীরা যেভাবে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন সেভাবেই চলতে শুরু করলাম৷
বিশুদ্ধভাবে কুরআন পড়তে জানতাম না ৷ মনে আগ্রহ জাগল কুরআন শিখবো ৷ এরপর বিশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াত শিখতে ক্বারীয়ানা কোর্সে ভর্তি হলাম এবং রমজানে কোর্স করতে শুরু করলাম ৷ আলহামদুলিল্লাহ, সফলতার সাথে কোর্স সম্পন্ন করে পাগড়ী ও সনদ লাভ করেছি ৷
প্রতিজ্ঞা করলাম নিজের বাকী জীবনকে ইসলামের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী চালাব ৷ দুনিয়ার পেছনে দৌঁড়ে আর নিজের জীবনটা ধ্বংস করব না ৷ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কারী বেলায়েত সাহেব রহ. পদ্ধতিতে নূরানী মুআল্লিম প্রশিক্ষন করলাম ৷
বর্তমানে আমি ২০১২ সাল থেকে তাবলীগের মেহনতের পাশাপাশি মার্কাজ পরিচালিত একটি ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নুরানী বিভাগে খেদমত করছি।