অস্ট্রেলিয়ার ইসলাম-বিদ্বেষী নেতা শেরিলিন চার্চ সেদেশের মসজিদসহ ইসলামী নিদর্শনগুলো ধ্বংসের দাবি জানিয়ে বলেছিলেন, তিনি যদি স্থানীয় নির্বাচনে জয়ী হন তাহলে ব্রিজবেন শহরের দক্ষিণাঞ্চলে মসজিদ নির্মাণ নিষিদ্ধ করবেন। ব্রিজবেন অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম প্রধান শহর এবং শহরটি দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলে অবস্থিত।
শেরিলিন ইসলামের বিস্তারে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন: “ইসলাম যতটা না ধর্মীয় বিশ্বাস তার চেয়েও বেশি হল একটি আইনি ব্যবস্থা। কোনো একটি অঞ্চলে একটি মসজিদের অস্তিত্ব থাকার অর্থ হল, ওই অঞ্চলে ইসলামী আইন বাস্তবায়ন করা ও ইসলামের পতাকা ওড়ানো।” কিন্তু ইসলামের মতো একটি সমৃদ্ধ ও যুক্তিভিত্তিক ধর্মের কোনো একটি নিদর্শন বা প্রতীককে ধ্বংস করে কি এই ধর্মকে বিলুপ্ত করা সম্ভব? ইসলামের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের আগ্রাসী নানা তৎপরতা সত্ত্বেও সেখানে ইসলাম দিনকে দিন জোরদার হচ্ছে।
মানুষের প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ও যৌক্তিক ধর্ম ইসলাম কেড়ে নিচ্ছে সত্য-সন্ধানী পশ্চিমাদের হৃদয়। মার্কিন নওমুসলিম নারী ‘বিটি বাওম্যান’-এর ঘটনাই এর প্রমাণ। বিটি ইসলামের সত্যতা উপলব্ধি করতে পেরে মুসলমান হন। মুসলমান হওয়ার পরই তিনি বুঝতে পারেন যে কেবল নিজেকে রক্ষা করাই একজন মুসলমানের দায়িত্ব নয়, অন্যদের রক্ষা করাও প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব। তাই মানব জাতিকে জাহান্নামের আগুন তথা পরকালের শাস্তি থেকে রক্ষা করার জন্যও মুসলমানদেরকে সচেষ্ট হতে হবে। মার্কিন নওমুসলিম বিটি বাওম্যান ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার পর থেকেই এই ধর্ম প্রচারের মনোনিবেশ করেন।
মার্কিন নওমুসলিম বিটি বাওম্যান ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আগে এক হাজারেরও বেশি বই পড়েছেন। এসব বই ছিল নানা ধর্ম বিষয়ক বই ও ধর্মগ্রন্থ। যেমন, ইহুদি ও বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস। কিন্তু সংগ্রামী মার্কিন মুসলিম নেতা ম্যালকম এক্স-এর জীবনী সংক্রান্ত বই তার সামনে খুলে দেয় আলোকিত নানা দিগন্ত এবং ইসলাম সম্পর্কে বদলে যায় তার দৃষ্টিভঙ্গি।
মার্কিন নওমুসলিম নারী ‘বিটি বাওম্যান’ বর্তমানে ইসলামী জ্ঞান অর্জনের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন এবং ইসলামী কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন: উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ায় বা লস অ্যাঞ্জেলসে অবস্থিত ইসলামী সেন্টারে যাচ্ছি এবং সেখানে নও-মুসলিমদের জন্য যেসব ক্লাস হয় সেইসব ক্লাসে অংশ নিচ্ছি। ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম যে ইসলাম সম্পর্কে পড়াশুনায় আমি খুবই সন্তুষ্ট হচ্ছি এবং আমার হৃদয়ও দৃঢ় বিশ্বাস বা আস্থায় ভরপুর হচ্ছে। আমি বুঝলাম মহান আল্লাহ আমাকে পরোক্ষভাবে দেখিয়ে দিয়েছেন ইসলামের পথ।
সুপথ প্রদর্শনের মহাগ্রন্থ পবিত্র কুরআন প্রতি দিন বিশ্বের লাখ লাখ মানুষকে দেখিয়ে দিচ্ছে যে যুক্তি ও প্রজ্ঞাভিত্তিক এই মহাগ্রন্থ নানা জ্ঞান এবং সত্যকে পাওয়ার এক বড় উৎস। ফরাসি চিন্তাবিদ (Jull La baume)-এর মতে কুরআন প্রজ্ঞার এমন এক সাগরের মত যাতে নানা দিক থেকে মিলিত হয়েছে বিভিন্ন রকম জ্ঞানের নদ-নদী। আর মানুষ উপকৃত হচ্ছে তা থেকে। Jull La baume-এর মতে পবিত্র কুরআন এক চির-জীবন্ত বই এবং সব যুগের গবেষক ও জ্ঞানীরা তাদের ধারণ-ক্ষমতা বা যোগ্যতা অনুযায়ী এই মহাগ্রন্থ থেকে উপকৃত হন।
মার্কিন নওমুসলিম নারী ‘বিটি বাওম্যান’ ইসলাম সম্পর্কিত নানা বই পড়ে পবিত্র কুরআনের সঙ্গে পরিচিত হন। কুরআনের আয়াতগুলো তাকে জীবনের নতুন নতুন প্রাণবন্ত ধারা। এ প্রসঙ্গে বিটি বলেছেন: যতই কুরআন তিলাওয়াত করছিলাম ততই আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করছিলাম। তার মতে প্রতিদিনই কিছু সময় ধরে কুরআন অধ্যয়ন, কুরআনের নানা দিক ও সৌন্দর্য বোঝার চেষ্টা করা এবং এমনকি এ মহাগ্রন্থের আয়াত মুখস্থ করা মুসলমানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। কারণ, কুরআনের পথ-নির্দেশনা ছাড়া জীবন অর্থহীন ও অন্তঃসারশূন্য। বিটি বলেছেন: যখন কুরআন অধ্যয়ন করি তখন অনুভব করি যে এক ভিন্ন জগতে প্রবেশ করেছি, তাই ইসলামের জগতে আমার সফরের আনন্দ অন্তহীন এবং তা এনে দেয় চিরস্থায়ী সৌভাগ্য।
মার্কিন নওমুসলিম নারী ‘বিটি বাওম্যান’-এর মতে, ইসলাম মানুষের প্রতি আল্লাহর এক উপহার এবং ধার্মিকতাই করে জীবনকে প্রকৃত অর্থপূর্ণ। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন: ‘ধর্মের লক্ষ্য হল প্রাত্যহিক জীবনকে অর্থ দান করা। অর্থাৎ আমাদের প্রাত্যহিক কাজকর্ম, আত্মিক ও শারীরিক চাহিদা, যোগাযোগ- এইসব কিছুকেই আধ্যাত্মিক ব্যবস্থা তথা ইসলামের সঙ্গে যুক্ত করা। ইসলাম মানুষের জীবনে যতটা আধ্যাত্মিকতা জরুরি তার পুরোটাই পরিপূর্ণভাবে দিয়ে থাকে।’
মার্কিন নওমুসলিম নারী ‘বিটি বাওম্যান’ জীবন ও ধর্মের মধ্যে পার্থক্যে বিশ্বাসী নন। তার মতে, ধর্ম মানুষের জীবনেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ ও সব ক্ষেত্রেই রয়েছে এর ভূমিকা। তাই ইসলাম মানুষের জীবনকে দেয়া শৃঙ্খলা ও অর্থ। তিনি বলেছেন: “ইসলামের বিধানগুলো এমনই যে সেসব মানুষকে ধ্বংসাত্মক আচরণ থেকে বিরত রাখে। যেমন, মদ, জুয়া, মিথ্যাচার, চুরি, অন্যদের শোষণ করা, হত্যা ইত্যাদি। অন্যদিকে ইসলাম মানুষকে নামাজ-রোজা ও যাকাত বা দানসহ যেসব ভালো কাজ করতে বলে সেসবই মানুষের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনে। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, মানুষের প্রতি সম্মান দেখানো, জীব-জন্তুকে কষ্ট না দেয়া ও পরিবেশ দূষণ না করাও এমনই কিছু ভালো বা সৎকাজ। পবিত্র কুরআনের সুরা বাকারার ১১৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন: ‘পূর্ব ও পশ্চিম (ও অন্য সব দিকই) আল্লাহরই কর্তৃত্বাধীন। তাই যেদিকেই মুখ ফেরাও না কেন আল্লাহ সেখানে আছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ অমুখাপেক্ষী ও পরম জ্ঞানী।’ ইসলামের এই যে ব্যাপকতা ও অফুরন্ত সৌন্দর্য, তা শেষ পর্যন্ত আমাকে মুসলমান করেছে।”
মিসেস বিটি মনে করেন যারা ইসলাম সম্পর্কে পরিপূর্ণ ও স্পষ্ট ধারণা অর্জন করতে চান তাদের জন্য ইসলামী বিশ্বকোষ সংগ্রহ করা জরুরি। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন,
‘ইসলামের শাব্দিক বা আভিধানিক অর্থ হল আত্মসমর্পণ করা, নিরাপত্তা, শান্তি ও প্রশান্তি। ইসলাম এমন একটি খোদায়ী বা ঐশী ধর্ম যা বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র ওপর নাজিল হয়েছে।’
এটা হচ্ছে সর্বশেষ ধর্ম যা মানুষকে সুপথ দেখায়। পবিত্র কুরআনের সুরা মায়েদার তিন নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে (চিরস্থায়ী) ধর্ম বা দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।
ইসলাম ইহুদি ধর্মের প্রত্যেক নবী-রাসূলকে নিজের নবী-রাসূল বলে সম্মান করে এবং খ্রিস্ট ধর্মের রাসূল হযরত ঈসা (আ.)-কেও অসাধারণ রাসূল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ইসলাম মনে করে হযরত ঈসা (আ.) জন্ম নিয়েছিলেন পবিত্র মায়ের গর্ভে। আল্লাহর রুহ বা নির্দেশ ফুঁকে দেয়া হয়েছিল তাঁর মধ্যে একজন ফেরেশতার মাধ্যমে। মহান আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি পিতা ছাড়াই জন্ম নিয়েছিলেন যা এই মহান নবীর একটি মোজেজা। ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের মূল স্বভাব বা প্রকৃতি পবিত্র। ইসলামের শিক্ষা এই পবিত্র প্রকৃতিকে রক্ষা করতে সক্ষম।
ইসলামের নানা সৌন্দর্য মার্কিন নারী ‘বিটি বাওম্যান’-কে মুসলমানে পরিণত করেছে। দৃঢ় ঈমান নিয়ে তিনি মানুষের কাছে প্রচার করে যাচ্ছেন ইসলাম ও এর নানা বাস্তবতা। #