শালীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ালে করণীয় কী? এতে কি স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে?!


সুওয়াল


আমি রমজান মাসে রাতে সেহরীর আগে আমার শালীর সাথে উভয়ে একে অপরকে স্পর্শ করেছি বিভিন্ন যায়গায়। যোনিতে হাত লাগাইছি।  চুমু খেয়েছি গালে আর শরীরে। কিন্তু যিনা করিনি। এই অবস্থায় আমার করণীয় কী? এবং মাফ পাবো? জানাবেন প্লিজ।


জাওয়াব


রমজান ছাড়া অন্য সময়ে উপরোক্ত কাজগুলো কবীরা গোনাহ। চরম অনৈতিক কাজ। যে কাজ রমজান ছাড়াই মারাত্মক গোনাহের কাজ, সেই কাজ রমজান মাসে করা আরো ভয়াবহ পাপ ও ঘৃণিত।

দ্রুত আল্লাহর কাছে তওবা করুন। ভবিষ্যতে উক্ত শালীর সাথে কথাবার্তা বা দেখা সাক্ষাৎ করা থেকে বিরত থাকুন।  নতুবা আল্লাহর গজব নাজিল হবে।

আল্লাহ আপনাকে এহেন কর্ম থেকে খালিস দিলে তওবা করার তৌফিক দান করুন।

উল্লেখ্য, শ্যালিকার সাথে যিনা-ব্যভিচার করার দ্বারা স্ত্রী তালাক হয় না ৷

জ্ঞাতব্য, বর্তমান সমাজে পুরুষরা তাদের স্ত্রীদের বোনের সাথে যেভাবে চলাফেরা উঠাবসা, কথাবার্তা বলে তা মোটেও জায়েজ নয় ৷ তার সঙ্গে পর্দা করা একটি ফরজ বিধান ৷ সেটা যেন মানুষ জানেই না ৷ এ ফরজ বিধানটি লঙ্ঘনের ফলেই শ্যালিকার সঙ্গে যিনা-ব্যভিচারের মত এহেন গর্হিত ঘটনা ঘটছে ৷ তাই সকলকেই এবিষয়ে কঠোরভাবে সচেতন হওয়া জরুরি ৷

إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِنْ قَرِيبٍ فَأُولَٰئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا [٤:١٧] وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّىٰ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآنَ وَلَا الَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمْ كُفَّارٌ ۚ أُولَٰئِكَ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا [٤:١٨

অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন,যারা ভূলবশতঃ মন্দ কাজ করে,অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে; এরাই হল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী,রহস্যবিদ। আর এমন লোকদের জন্য কোন ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে,এমন কি যখন তাদের কারো মাথার উপর মৃত্যু উপস্থিত হয়,তখন বলতে থাকেঃ আমি এখন তওবা করছি। আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। {সূরা নিসা-১৭-১৮}

قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ (30) وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ الخ

কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে-“মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চক্ষুকে অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। এটাই তাদের জন্য পবিত্রতম পন্থা। তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত। আর মুমিন নারীদের বলুন তারা যেন তাদের চক্ষুকে অবনত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানকে হিফাযত করে। {সূরা নূর-৩০,৩১}

عن ابن عمر قال : خطبنا عمر بالجابية الخ ألا لا يخلون رجل بامرأة إلا كان ثالثهما الشيطان

হযরত ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যখনই কোন পুরুষ পর নারীর সাথে নির্জনে দেখা করে তখনই শয়তান সেখানে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে উপস্থিত হয়। {সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং-২১৬৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং-৫৫৮৬}

فَالْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظَرُ، وَالْأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الِاسْتِمَاعُ، وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلَامُ، وَالْيَدُ زِنَاهَا الْبَطْشُ، وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا، وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى، وَيُصَدِّقُ ذَلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ

রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, চোখের জিনা হল [হারাম] দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা হল, [গায়রে মাহরামের যৌন উদ্দীপক] কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শোনা। জিহবার জিনা হল, [গায়রে মাহরামের সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন। হাতের জিনা হল, [গায়রে মাহরামকে] ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হল, [খারাপ উদ্দেশ্যে] চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় [যদি জিনা করে] এবং মিথ্যা পরিণত করে [যদি অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে]। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৯৩২}

ফতওয়া লিখনে- লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *