কিউ এম জি দস্তগীর
—————–
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। প্রত্যেকের পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন/রাজনৈতিক জীবন এমন কি আন্তর্জাতিক জীবন পর্যন্ত কিরূপ হবে ইসলাম তা শিক্ষা দিয়েছেন এবং প্রতিটি জীবনেই বেঁধে দিয়েছেন কিছু কল্যাণকর বিধিমালাও।
ঠিক তেমনি আমার আপনার ও সন্তানাদির পোশাক-পরিচ্ছদ কেমন হবে এবং চলাফেরা কিরূপ হবে তার জন্যও রয়েছে নির্দিষ্ট বিধিমালা।
তাই আমাদের উচিৎ “লিবাসুস-সুন্নাহ্” মোতাবেক পোশাক পরিধান করা ও সন্তানদের পরিধান করতে দেওয়া।
সবচেয়ে অবাক হই তখন, যখন দেখি একজন গর্বিত বাবা-মা স্বীয় মেয়েটাকে অর্ধনগ্ন করে টাইট-ফিট, ছেঁড়া-ফাড়া কাপড় পরিয়ে শহরের অলিতে গলিতে, মার্কেটে, শপে ঘুরে বেড়ান!
অথচ ইসলাম কি বলে একটু চিন্তাও করেন না!
চিন্তা করবে কি, দ্বীনের প্রতি এতটাই উদাসীন যে, সে ব্যাপারে খেয়ালই নাই অনেকের।
হয়তো সে বিধানটাই জানে না কিরূপ পোশাক পরাতে হবে ছেলে-মেয়েকে।
একটু লজ্জাও করে না নিজ মেয়েটাকে এমন আপত্তিকর পোশাক পরিয়ে সাথে করে নিয়ে ঘোরেন। অনেকে তো আবার গরু-ছাগলের মত লাগামহীন ছেড়েও দিয়েছে আর ওরা যা ইচ্ছে করে বেড়াচ্ছে, কোনো জবাবদিহিতা নেই!!!
মাঝে মাঝে চিন্তা করি এটাকেই কি বর্তমান আধুনিকতা বলে?
একবার ভাবুন, ১টা সেকেন্ডের ভরসা নেই. কখন যে মৃত্যুর ডাক চলে আসে। তার আগেই আমাদের শুধরাতে হবে। অন্যথায় উপায় নেই। কেননা জাগতিক পরীক্ষায় একবার ফেল করলে হাজার বার দেবার সুযোগ আছে কিন্তু ঈমানের পরীক্ষায়/আল্লাহর পরীক্ষায় একবার ফেল করে মারা গেলে আর সুযোগ নাই ফলে সারাজীবন পস্তালেও আর কাজ হবে না।
সতর্ক হোন মা, সতর্ক হোন বাবা, সতর্ক হোন বোন, সতর্ক হোন ভাই, সময় থাকতে/হায়াৎ থাকতে সতর্ক হোন।
আল্লাহ কি বলে দেখুন,
সূরা আন-নূর,আয়াত নং৩১
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণত: প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পাদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।
And say to the believing women that they should lower their gaze and guard their modesty; that they should not display their beauty and ornaments except what (must ordinarily) appear thereof; that they should draw their veils over their bosoms and not display their beauty except to their husbands, their fathers, their husband’s fathers, their sons, their husbands’ sons, their brothers or their brothers’ sons, or their sisters’ sons, or their women, or the slaves whom their right hands possess, or male servants free of physical needs, or small children who have no sense of the shame of sex; and that they should not strike their feet in order to draw attention to their hidden ornaments. And O ye Believers! turn ye all together towards Allah, that ye may attain Bliss.
সূরা আল-আহযাব, আয়াত নং৫৯
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ ۚ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰ أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا
হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।
O Prophet! Tell thy wives and daughters, and the believing women, that they should cast their outer garments over their persons (when abroad): that is most convenient, that they should be known (as such) and not molested. And Allah is Oft-Forgiving, Most Merciful.
সূরা আল-আ’রাফ,আয়াত নং২৬
يَا بَنِي آدَمَ قَدْ أَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآتِكُمْ وَرِيشًا ۖ وَلِبَاسُ التَّقْوَىٰ ذَٰلِكَ خَيْرٌ ۚ ذَٰلِكَ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ
হে বনী-আদম আমি তোমাদের জন্যে পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবতীর্ণ করেছি সাজ সজ্জার বস্ত্র এবং পরহেযগারীর পোশাক, এটি সর্বোত্তম। এটি আল্লাহর কুদরতের অন্যতম নিদর্শন, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।
O ye Children of Adam! We have bestowed raiment upon you to cover your shame, as well as to be an adornment to you. But the raiment of righteousness,- that is the best. Such are among the Signs of Allah, that they may receive admonition!
অথচ আমাদের নারীরা করছে কি??
গত ২১ তারিখ চট্টগ্রাম বই মেলায় গেলাম।। চারদিকে হাজারো মানুষের ভিড়, যেমন আছে তরুণ তেমনি আছে ছোট-বড় সব বয়সী মানুষ।
তার মাঝে কিছু কিছু মা-বাবা স্বীয় কন্যাদের এমন সব পোশাক পরিয়ে এনেছেন যাদের দিকে একবার তাকালে ২য় নজর দেয়া যায় না, সত্যি কথা বলতে কি পোশাকটা পরিধান করিয়েছে তার মা বাবা অথচ লজ্জা লাগে আমার!!!
যার দিকে তাকালে কামভাব আসতে বাধ্য করে পর পুরুষকে। অথচ তারাও নাকি সচেতন অভিভাবক!
আবার অনেক মা’রাও দেখলাম সব জামা/কাপড় পরেছে, তাদের দিকেও তাকানো বড় দায়!
তাদের দেহের সকল গঠন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ও কামভাবের তৈরী করছে পর পুরুষের মনে। এদের বেশির ভাগ লেখিকা, আর এসব পোশাকেই দিচ্ছে পুরুষ-মহিলারা সাহিত্য আড্ডা। সময় সময় চলছে ভিড়ের কারণে গা ঘেঁষাঘেঁষি।
আর হাদীসে এদেরই বলেছেন পোশাক পরিহিতা উলঙ্গ নারী যা ক্বেয়ামতের পূর্বে অধিক গুণে বেড়ে যাবে।
রাসূল (সা.) আরো বলেন, নারীর প্রতি প্রতিটা কাম দৃষ্টি শয়তানের একেকটা বিষাক্ত তীর। অতএব ছেলে যারা আমরা দৃষ্টিকে অবনত রাখি আর মা-বাবাদের প্রতি আকুল আবেদন- নিজের মেয়েটাকে শালীনতার ভিতরে রাখুন, নিজেও থাকুন। আধুনিকতার নামে অর্ধনগ্ন করে ছেড়ে দেবেন না। এতে করে নিজে যেমন গুনাহগার হবেন, মেয়েকেও বানাবেন। আবার এর দ্বারা শত শত ছেলেরাও গুনাহগার হবে।
ফলে সবার জন্যই জাহান্নামকে টগবগে উত্তপ্ত করা হবে।
একটা জিনিস চিন্তা করুন, আজ আপনি আর কাল অন্যরা, একে একে সবাই যদি পর্দানশিন হয়ে যায়/অন্তত শালীন পোশাক পরে তাহলে ছেলেরা না চাইতেই এ গুনাহ থেকে বেঁচে যাবে। কারণ সবাই যখন সেইফলি থাকবে তখন চাইলেও কোনো মেয়েকে দেখা সম্ভব হবে না।
আল্লাহ আমাদের সকলকে বুঝার তৌফিক দান করুন, মাফ করুন।আমীন।আল্লাহুম্মা আমীন।
লেখক- প্রাবন্ধিক ও ক্বারী
E-mail: dastagirahmad31@gmail.com