‘১৫ মিনিটের আলোচনার মাধ্যমেই মুসলিমে রূপান্তরিত হই’ – নও মুসলিম মরিয়ম

আমার বাবা খ্রিস্টান হিসেবে আমাকে প্রতিপালন করেন। তিনি আমাকে খ্রিস্টধর্মের মূলনীতি শিক্ষা দিতে কঠিন পরিশ্রম করতেন। আমি যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তাম তখন প্রায় প্রতিদিনই বাইবেল অধ্যয়ন করতাম। তখনই তাতে কিছু অসঙ্গতি চোখে পড়ত। যেমন-শুকরের মাংস খাওয়া ইত্যাদি।

যখন আমার বয়স ১২, তখন অনুভব করতে থাকি, আমি আর খ্রিস্টান ধর্মে বিশ্বাসী নই। কিন্তু বুঝতাম না কেন অনুভব করতাম। তাই সত্যিকারের সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজতে থাকি এবং প্রার্থনা করতে থাকি। খুব আন্তরিকভাবেই সৃষ্টিকর্তাকে তালাশ করতে থাকি।

তখন মনে অনেক প্রশ্নের উদয় হতো। যেমন, আমি অনেককেই জিজ্ঞেস করতাম ‘কেন আমরা অস্তিত্বশীল?’ অথবা ‘কোন মহৎ উদ্দেশ্যে আমি পৃথিবীতে এসেছি?’

পৃথিবীতে সব কিছুর মধ্যকার ভিন্নতা এবং জটিলতা এটাই নির্দেশ করে, এসব কিছুর পেছনে নিশ্চয় একজন রয়েছেন যিনি সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা।

কোনো কিছুর পরিকল্পনা তার পরিকল্পনাকারীকে নির্দেশ করে। যখন কোনো মানুষ সমুদ্র তট দিয়ে হেঁটে যায় তখন অন্যরা তার পাঁয়ের ছাপ দেখেই বলে দেয় এটি কোনো মানুষের পাঁয়ের ছাপ।

মানুষ কখনো এটা ধারণা করে না যে, এরকম পাঁয়ের ছাপ সমুদ্রের ঢেউয়ের ফলে সৃষ্টি হয়েছে। অথবা কেউ এমন চিন্তা করে না যে, সমুদ্র তটে অযথাই কোনো কারণ ছাড়াই বা কোনো মানুষের হেঁটে যাওয়া ছাড়াই এরকম ছাপের সৃষ্টি হয়েছে।

মানুষ সত্যিকারভাবেই যেটা চিন্তা করে তা হচ্ছে- এসবের পেছনে নিশ্চয় কোনো না কোনো কারণ রয়েছে। সব কিছুই ঘটে একজন সর্বোচ্চ সৃষ্টিকর্তার ইশারায়।

মানুষ এই পৃথিবীতে কেন এসেছে এবং এখানে তাদের উদ্দেশ্য কি তা জানা একজন মানুষের জন্য জরুরী। এটা জানার মাধ্যমে মানুষ নিজেদের উপকার করে।

আমার বয়স যখন ১৯ বছর এবং তখন আমি নিজেকে একজন সত্য অন্বেষণকারী হিসাবে দেখতাম, সে সময়ে আমি সৃষ্টিকর্তার সম্বন্ধে ধারণা লাভ করার জন্য বিভিন্ন সংস্কৃতিতে ঘোরফেরা করেছিলাম। আমি তাওইজম, উইক্কাইজম, বুদ্ধইজম, জুডাইজম, ফ্রি-ম্যাসনারী, খ্রিষ্টানিটি, হিন্দুইজম, আনিমিজম ইত্যাদি আরো বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে একটা ধারণা লাভ করেছিলাম।

আমি এমনকি ইসলাম ধর্ম সম্পর্কীয় কয়েক পৃষ্ঠার কিছু বই পড়েছিলাম তবে তা আমার ক্ষুধা মেটাতে পারেনি। আমি দেখেছিলাম মুসলিমরা মহান আল্লাহর আরাধনা করে, তারা মুহাম্মাদকে (সা.) আল্লাহ প্রেরিত বার্তা বাহক হিসেবে দেখে এবং তারা প্রতিদিন পাঁচবার প্রার্থনা করে।

প্রতিদিন পাঁচবার? আমি সে সময়ে চিন্তা করতাম এটি খুব কঠিন কাজ। এটি কীভাবে স্বর্গ ও পৃথিবী সৃষ্টিকারী ঈশ্বরের ধর্ম হতে পারে? আমার বয়স যখন ২১ তখন আমি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসি। আমি যেসব ধর্ম সম্পর্কে ধারণা লাভ করেছিলাম তার কোনোটাই আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। পরে আমি মেডিকেল কলেজে অধ্যয়ন করার সিদ্ধান্ত নিই।

আমি যখন আমার কলেজের উদ্দেশ্যে মিশিগান থেকে কলোরাডো যাওয়ার জন্য বাসে চেপে বসি, তখন আমার পাশে আফ্রিকা থেকে আসা একজন ছাত্র যার নাম ছিল ইব্রাহীম তিনি বসা ছিলেন।

আমরা কথা বলা শুরু করি এবং এক পর্যায়ে আমি জানতে পারি তিনি মুসলিম। আমি তাকে ইসলাম সম্পর্কে কিছু বলতে বলি। তিনি জানায় মুসলিমরা আল্লাহ ছাড়া ইবাদত করার মতো আর কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ(সা.) আল্লাহর প্রেরিত বার্তাবাহক এই বাক্যে বিশ্বাস করে। ইব্রাহীম আমাকে একথাও জানায় যে, মুসলিমরা খ্রিষ্টানদের নবী ইব্রাহীম(আ.) কেও বিশ্বাস করে।

আমি তখন মতামত দেই, ইহুদীরা দুইজন নবীর পেছনে যথা- জিসু এবং মুহাম্মদ(সা.)। আর খ্রিস্টানরা একজন নবীর পেছনে তিনি হচ্ছেন মুহাম্মদ(সা.)।

আমি তার কাছে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে আরো বেশি কিছু জানতে চাইলে সে আমাকে ‘দোয়া এবং জিকির’ নামে একটি বই পড়তে দেয়।

আমি যখন বইটি প্রথম পড়ি তাতে এরকম একটি লাইন ছিল-‘আল্লাহ ছাড়া আর কেউ ইবাদতের যোগ্য নয়, তার কোনো শরীক নেই। সকল ক্ষমতা একমাত্র তাঁরই এবং তাঁর নিকটেই সকলকে ফিরে যেতে হবে।’

তখন আমার কাছে মনে হয়েছিল ইসলামই সেই ধর্ম যা আমি এতদিন খুঁজে বেড়াচ্ছি। পরে ইব্রাহীম আমাকে ইসলাম সম্পর্কীয় আরো কিছু বই পড়তে দেয়।

বইয়ে একটি বিষয় সচরাচার দেখা যায়, তা হচ্ছে-‘পরম করুণাময় আল্লাহর নামে। যাঁর আদেশ ছাড়া এই পৃথিবী এবং আকাশ মন্ডলীর কোনো কিছুই নড়তে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

আমি সঙ্গে সঙ্গে ইব্রাহীমকে জিজ্ঞেস করি কীভাবে আমি মুসলিম হতে পারব। তিনি আমাকে জানান, তুমি শাহাদা পাঠের মাধ্যমে মুসলিম হতে পার। আর তা হচ্ছে-‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ এই বাক্যটি পাঠ করা।
তখন আমি তার কথায় বিশ্বাস করি এবং উপরোক্ত বাক্যটি পাঠের মাধ্যমে আমি মুসলিম হই। আর এভাবেই আমি তার সঙ্গে বাসে বসে ১৫ মিনিটের আলোচনার মাধ্যমেই মুসলিমে রূপান্তরিত হই।

এটি ছিল ৭ বছর পূর্বের ঘটনা। আমি (মরিয়ম) পরে আর মেডিকেল কলেজে যাইনি। আমি ধর্ম সম্পর্কে আরো জানতে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবং এ উদ্দেশ্যে আমি উথাতে(যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চল) ভ্রমণ করি। সেখানে আমি অনেক মুসলিমের সঙ্গে দেখা করি যারা আমাকে উষ্ণভাবে স্বাগত জানায়। সেখানে আমি ইসলাম সম্পর্কে জানতে অনেক সময় ব্যয় করি।

সূত্রঃ এবাউট ইসলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *