সুওয়াল
আল্লাহ তায়ালা সূরা নূরের ৩১ নং আয়াতে মধ্যে পর্দার আয়াতের কথা বলছেন “তারা যেন সাধারণত প্রকাশমান অঙ্গ ব্যতীত তাদের সৌন্দর্যকে প্রকাশ না করে”-প্রশ্ন হল- সাধারণ প্রকাশমান অঙ্গ গুলো কি কি? মুখমণ্ডল কি এর অন্তর্ভুক্ত? এটা কি সর্বদা আবৃত করা ফরয? ফরয হলে প্রয়োজনে খোলা যাবে কি না?
জাওয়াব
সাধারণ প্রকাশমান বলতে বুঝানো হয়েছে যে, অনিচ্ছায় যা প্রকাশ পেয়ে যায়, কেবল তা’ই মাফ। অন্যথায় চেহারাসহ পূর্ণ শরীরই পর পুরুষ থেকে আড়াল রাখতে হবে।
আল্লামা ইবনে কাসীর রহঃ উক্ত আয়াতের তাফসীরে লেখেন:
{وَلا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلا مَا ظَهَرَ مِنْهَا} أَيْ: لَا يُظهرْنَ شَيْئًا مِنَ الزِّينَةِ لِلْأَجَانِبِ، إِلَّا مَا لَا يُمْكِنُ إِخْفَاؤُهُ.
“তারা যেন সাধারণত প্রকাশমান অঙ্গ ব্যতীত তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে” মানে হল, পরপুরুষের সামনে সৌন্দর্যের কোন কিছুই প্রকাশ করবে না, তবে যা লুকানো সম্ভব হয় না, তা ভিন্ন। [তাফসীরে ইবনে কাসীর-৬/৪১]
আরেকটা ব্যাপার লক্ষণীয়- ব্যক্তি বা এলাকার আমল পালনীয় নয়। পালনীয় হচ্ছে আল্লাহ ও তার রাসূল সা: এর নির্দেশনা। কাজেই সৌদি আরব বা অন্যান্য মুসলিম কান্ট্রিতে কি হচ্ছে না হচ্ছে এগুলি কোন দলীলের পর্যায়ে পড়ে না।
যা লুকানো সম্ভব নয়, বলতে কী বুঝায়?
১ এমন প্রয়োজন যাতে করে চেহারা ঢাকলে নিজের ক্ষতি হবে। যেমন, চেহারায় কোন অপারেশন ইত্যাদি।
২ এমন প্রয়োজন যাতে চেহারা ঢাকা থাকলে অন্যের ক্ষতি হবে। যেমন, সাক্ষ্য প্রদান করার সময়।
৩ বাড়ির বাইরে বা গায়রে মাহরামের সামনে অনিচ্ছায় চেহারা খুলে গেলে। সাথে সাথে চেহারা ঢেকে নিলে মাফ হয়ে যাবে।
عَنْ عَبْدِ الْخَبِيرِ بْنِ ثَابِتِ بْنِ قَيْسِ بْنِ شَمَّاسٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، قَالَ: جَاءَتِ امْرَأَةٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُقَالُ لَهَا أُمُّ خَلَّادٍ وَهِيَ مُنْتَقِبَةٌ، تَسْأَلُ عَنِ ابْنِهَا، وَهُوَ مَقْتُولٌ، فَقَالَ لَهَا بَعْضُ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: جِئْتِ تَسْأَلِينَ عَنِ ابْنِكِ وَأَنْتِ مُنْتَقِبَةٌ؟ فَقَالَتْ: إِنْ أُرْزَأَ ابْنِي فَلَنْ أُرْزَأَ حَيَائِي،
হযরত আব্দুল খায়ের বিন সাবেত বিন কায়েস বিন শাম্মাস তার পিতা, তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা এক মহিলা রাসূল সা: এর কাছে এলেন। যাকে উম্মে খাল্লাদ বলা হয়। তিনি এমতাবস্থায় এলেন যে, তার চেহারা পর্দাবৃত ছিল। সে এসে তার নিহত সন্তানের ব্যাপারে অভিযোগ জানায়। তখন কতিপয় সাহাবী তাকে বলেন, “তুমি তোমার ছেলের ব্যাপারে অভিযোগ দাখিল করতে এসেছে, তারপরও তুমি পর্দাবৃত হয়ে এলে?” তখন উম্মে খাল্লাদ বলেন, যদিও আমার ছেলের উপর বিপদ এসেছে, এর মানে তো আমার লজ্জা শরমেরও বিপদ আসেনি। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৪৮৮}
আরেক বর্ণনায় এসেছে-
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، قَالَتْ: ” لَمَّا نَزَلَتْ: {يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ} [الأحزاب: 59]، خَرَجَ نِسَاءُ الْأَنْصَارِ كَأَنَّ عَلَى رُءُوسِهِنَّ الْغِرْبَانَ مِنَ الأَكْسِيَةِ “
إسناده قوي. ابن خثيم -وهو عبد الله بن عثمان- لا بأس به. ابن ثور: هو محمد بن ثور الصنعاني، ومحمد بن عُبيد: هو ابن حِساب الغُبَري.
وأخرجه ابن أبي حاتم في “تفسيره” كما في “تفسير ابن كثير” 6/ 48 – 49 من طريق الزنجي مسلم بن خالد، عن عبد الله بن عثمان بن خثيم، به مطولاً.
হযরত উম্মে সালামা রা: বলেন, যখন কুরআনে কারীমের এ আয়াত يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ
তথা “তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। [মাথার দিক থেকে]” -সূরা আহযাব-৫৯} নাজিল হয়, তখন আনসারী মহিলারা স্বীয় ঘর থেকে এমনভাবে বের হতো যেন তাদের মাথায় কাক বসে আছে। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪১০১}
ইমাম যাসসাস রহঃ বলেন,
فى هذه الآية دلالة على أن المرأة الشابة مأمورة بستر وجهها من الأجنبيين
এ আয়াত একথা বোঝাচ্ছে যে, যুবতী মেয়েরা ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এমনভাবে বের হবে যেন তাদের চেহারা পরপুরুষের সামনে প্রকাশিত না হয়। {আহকামুল কুরআন ইমাম জাসসাসকৃত-৩/৩৭২}
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা একথা পরিষ্কার বুঝা যায় যে, চেহারাও ফরজ পর্দার অন্তর্ভুক্ত। কাজেই চেহারা খোলা থাকে এমন হিজাব বা বোরকাও নিষিদ্ধ। শরয়ী প্রয়োজন ব্যতীত পরপুরুষের সামনে চেহারা খোলা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম।
আরও পড়ুন — কুরআন-হাদীসের আলোকে পর্দার হুকুম ও পরিধি
https://adarshanari.com/article/burqa-hijab/4808/
ফতওয়া লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী