মোবাইলে বিয়ের একটি পদ্ধতির হুকুম প্রসঙ্গে

সুওয়াল
—————————–

আমার ছোটবোনের কুয়েত প্রবাসী বরের সাথে মোবাইলের মাধ্যমে বিয়ে হয়। এই বিয়ের বৈধতা নিয়ে আমি খুবই খুবই চিন্তিত ও পেরেশান আছি । আমি বিয়ের বর্ণনা লিখছি, আপনার কাছে আমার অনুরোধ এটাই যে আপনার শত ব্যস্ততার মধ্যেও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই বিয়ের সমাধান দিবেন ।

বর্ননাঃ-

কাজী প্রথমে বরের পক্ষে একজন উকিল ও কনের পক্ষে একজন উকিল ঠিক করে এবং দুই পক্ষ থেকে তিনজন তিনজন করে ছয়জন সাক্ষী ঠিক করে ।

পরে দুই উকিল ও ছয় সাক্ষীকে নিয়ে কনের কাছে গিয়ে কনের উকিলকে দিয়ে কনের কাছ থেকে কবুল নেয় এই বলিয়ে যে, অমুক গ্রাম নিবাসী অমুকের ছেলে অমুকের পক্ষ থেকে এত টাকা মোহরানায় আপনার বিয়ের প্রস্তাব এসেছে এতে আপনি কি রাজি আছেন ? এভাবে কনের উকিল কনেকে প্রস্তাব দেয়ার পর কনে কবুল বলে । বরের উকিলকে দিয়ে প্রস্তাব দেয়ানো হয়নাই কিন্তু বরের উকিল সেই সময় কনের সামনে উপস্থিত ছিলেন এবং সবকিছু শুনেছেন ।

এভাবে কনের কবুল নিয়ে কনের কাছ থেকে চলে এসে কাজী বরের উকিলকে দিয়ে মোবাইলের মাধ্যমে বরের কাছে প্রস্তাব করিয়ে বরকে কবুল বলায় ।

সেই সময় কনের উকিল এবং ছয় সাক্ষী বরের উকিল ও বরের সব কথা শুনেন ॥

এই হল বিয়ে বর্ণনা । এখন প্রশ্ন হল এই বিয়ে কি বৈধ হয়েছে ??? আর যদি বৈধ নাহয়ে থাকে তাহলে কি এভাবে বৈধ করা যাবে ঃ- দুই পক্ষের যে দুই উকিল সাব্যস্ত করা হয়েছিল ওই দুই উকিলকে এবং ছয় সাক্ষীর মধ্য যে কোন দুই সাক্ষীকে ডেকে এনে কনের উকিলকে দিয়ে বরের উকিলের কাছে প্রস্তাব করানো হবে এবং বরের উকিল এই প্রস্তাবকে ওই দুইজন সাক্ষীর সামনে গ্রহণ করবেন ।

বা কনের আপন তিন ভাইয়ের মধ্যা একজন বরের উকিল হয়ে বাকি দুই ভাইকে সাক্ষী করে কনের কাছ থেকে নতুন করে কবুল নেয়া ।

যদি আমার এই দুই ফর্মুলা না হয় তাহলে কিভাবে এই বিয়ে বৈধ হবে দয়া করে বিস্তারিতভাবে অতি তাড়াতাড়ি জানাবেন ।

 

জাওয়াব
—————————–

যদি বর কাউকে ওকীল বানিয়ে থাকে তথা একথা বলে থাকে যে, “আমাকে অমুক মেয়ের সাথে বিবাহ পড়িয়ে দাও”, তাহলে উল্লেখিত বর্ণনায় উক্ত ওকীল যদি কনের ওকীলকে বিবাহ করিয়ে দিতে কনেকে প্রস্তাব দিতে বলে থাকে, তাহলে বিবাহ শুদ্ধ হয়ে গেছে।

স্বামীর কাছে দ্বিতীয়বার মোবাইলে কবুল বলানোর কোন মানে ছিল না। এটি অহেতুক কাজ হয়েছে।

বরের পক্ষ থেকে বিয়ের জন্য ওকীল যিনি বরের কথার দ্বারা বা সম্মতির দ্বারা হয়েছেন, তার উপস্থিতিতে বা তার সম্মতি বা নির্দেশে দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক সাক্ষীর সামনে মেয়েকে প্রস্তাব দেয়ার পর মেয়েটি কবুল করার দ্বারাই বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেছে।

এখন প্রশ্ন হল, কাজী যখন বরের পক্ষ থেকে ওকীল নিয়োগ দিল, সেই নিয়োগকৃত ওকীল কি কাজী নিয়োগ দিয়েছে না বর?

কনে পক্ষের বিয়ের ওকালতী কনের অনুমতিক্রমে হয়েছে না কাজী নিজে নিজেই ওকীল বানিয়েছে?

কাজীর ওকীল নিয়োগ দেয়ার তো কোন অধিকারই নেই। অধিকার তো বরের ও কনের। যদি বরের নিয়োগ ছাড়া ও কনের নিয়োগ ছাড়া কাজী নিজে নিজে নিয়োগ দিয়ে উপরোক্ত কাজ করে বরের কাছে জানায়, তাহলে বিয়েটি সম্পন্ন হয়নি।

কারণ, তখন বরের পক্ষ থেকে আসলে ওকালাত নিয়োগ হয়নি, আর বর মোবাইলে কবুল বলার দ্বারা বিয়ে সম্পন্ন হয় না। সে কারণে ওকালাত শুদ্ধ না হওয়ায় বিয়েও শুদ্ধ হয়নি।

পক্ষান্তরে যদি বর ওকীল নিয়োগ দিয়ে থাকে, আর উক্ত ওকীলের সম্মতিতে বা নির্দেশে ও উপস্থিতিতে কনেকে দুইজন সাক্ষীর সামনে প্রস্তাব করার পর কনে কবুল করে থাকে, তাহলে বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেছে।

فى خلاصة الفتاوى- إمراة وكلت رجلا بأن يزوجها من نفسه فقال الوكيل اشهدوا انى قد تزوجت فلانة من نفسى إن لم يعرف الشهود فلانة لا يجوز النكاح مالم يذكر إسمها وإسم ابيها وجدها، وإن عرف الشهود فلانة وعرفوا أنه اراد به تلك المرأة يجوز، (خلاصة الفتاوى-2/15

ফতওয়া প্রদান
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *