কওমী মাদরাসায় বলৎকার হয়? করণীয় কী?

প্রশ্ন

From: সালমান খান
বিষয়ঃ বর্তমান সমস্যা

প্রশ্নঃ
কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন ধরণের সংবাদ পত্রে কওমী মাদরাসায় শিক্ষক কর্তৃক ছাত্র ধর্ষণের,আবার মহিলা মাদরাসায় শিক্ষক কর্তৃক শিশু ছাত্র ধর্ষনের অসংখ্য ঘটনা ঘটছে
তাছাড়া নুরানী মাদরাসা,হাফেজীয়া মাদরাসা এগুলোতে ছাত্র ধর্ষণের ঘটনা খুব বেশি শুনা যায়।
স্কুল কলেজে এইসব(ছাত্রী ধর্ষণ) ঘটনা খুব বেশি দেখা গেলেও সেখানে ছাত্র ধর্ষণের ঘটনা দেখা যায় না
স্বাভাবিক ভাবেই এই ধরণের ঘটনা মাদরাসা প্রিয় জনতাকে হতাশ করবে বলেই আমার মনে হয়।
ওই শিক্ষক গুলো দ্বীনী শিক্ষা নেওয়া পরেও এইধরণের ঘটনা করছে যেগুলো সাধারণত সমকামী পশ্চিমা বিশ্বে পাওয়া যায়!
আমার প্রশ্ন হচ্ছে ২টি

১। বিভিন্ন জায়গায়  অহরহ নুরানী হাফেজী মাদরাসা দেখা যায়
২-৪জন শিক্ষক দিয়ে পরিচালিত হতে দেখা যায়।
এইসব মাদরাসা কি কওমী মদারাসার অন্তর্ভুক্ত? অন্যান্য ফিরকার ও এইরকম মাদরাসা রয়েছে?

২।এই ধরণের ঘটনা সংঘটিত হওয়া থেকে কিভাবে বাঁচানো যাবে মাদরাসাকে?

উত্তর                

بسم الله الرحمن الرحيم

মাদরাসা বা দ্বীনী প্রতিষ্ঠানে এহেন ঘটনা খুবই ন্যাক্কারজনক এবং দুঃখজনক।

তবে মাদরাসায়ই এমনটি ঘটে থাকে, তা সর্বৈব মিথ্যা। মিডিয়া ইসলাম বিদ্বেষী হবার কারণে এটাকে বড় করে উপস্থাপন করে থাকে।

বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে এমনভাবে প্রকাশ করে যেন, সকল মাদরাসায়ই এমন হয়ে থাকে। কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। অল্প কিছু লম্পট মানুষরূপী পশুগুলো একাজ করে থাকে। এটা কওমী মাদরাসার সকল উলামা ছাত্রগণ ঘৃণা করে এবং দুনিয়া ও আখেরাতে এহেন কর্মের জন্য ভয়াবহ শাস্তির কথা স্মরণ রাখে।

এহেন কর্মসম্পাদনকারীর সংখ্যা হাতে গণা কয়েকজন। এছাড়া কওমী মাদরাসার সকল  ছাত্র শিক্ষক এ থেকে মুক্ত এবং এটাকে মন থেকে তীব্র ঘৃণা করে থাকে।

এ ঘৃণ্যতা স্কুল কলেজেও হয়। কিন্তু এটাকে দেশব্যাপী হট টপিক বানানো হয় না কৌশলে। কয়েকটি উদাহরণ দেই:

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে উপজেলার শশীধরপুর এলাকার বিডিএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক মেহেরুল্লাহর (৫০) বিরুদ্ধে ছাত্র বলাৎকারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগকারি ৪ ছাত্র জানায়, শিক্ষক মেহেরুল্লাহ পরীক্ষায় বেশি নম্বর দেয়ার কথা বলে তাদের একা ডেকে নিয়ে তাদের উপর যৌনাচার চালাতো। যদি কেউ এঘটনা কাউকে বলে তবে তাকে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়া সহ নানা ধরনের হুমকি দিত বলে তারা জানায়। এ ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষক মেহেরুল্লাহ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া স্থানীয় যুবক আশিক জানান, ঐ শিক্ষক মেহেরুল্লাহ গত ৮/১০ বছরে প্রায় শতাধিক ছাত্রের সাথে এ ধরনের যৌনাচার চালিয়েছে। ভয়ে বা লজ্জায় কেউ এতদিন মুখ খোলেনি।[দৈনিক সমকাল। ৫ এপ্রিল ২০১৭]

৭ আগস্ট ২০১৭ তে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার বাথুলীসাদী লাইলী বেগম উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বলাৎকারের অভিযোগে প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম শিক্ষার্থীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন! পরে আহত প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালামকে পুলিশ উদ্ধার করেছে। স্থানীয়দের থেকে জানা যায়, প্রায় ১৫দিন পর সোমবার দুপুরের দিকে বাথুলীসাদী লাইলী বেগম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম বিদ্যালয়ে আসেন। তিনি বিদ্যালয়ে ঢুকার সাথে সাথে শিক্ষার্থীরা তার উপর আক্রমণ চালায় ও মারধর করে। এসময় শিক্ষার্থীরা তার মোটরসাইকেলটিও পুড়িয়ে দেয়।[দৃষ্টি টিভি। ৭ আগস্ট ২০১৭। ]
২৮ আগস্ট ২০১৭ তে মৌলভীবাজারে কাশীনাথ আলাউদ্দিন হাই স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আয়ুব আলীকে; স্কুলের পাচঁজন ছাত্রের উপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।[মুক্তকথা। ২৮ আগস্ট ২০১৭]
৯ নভেম্বর ২০১৭ তে গোপালগঞ্জের শেখ হাসিনা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ এর গণিতের শিক্ষক শ্রীবাস কুমার মণ্ডল এর বিরুদ্ধে শ্রেণিকক্ষেই শিখার্থীদের সাথে অসামাজিক কার্যক্রমের অভিযোগ উঠেছে। যা তিনি লিখিত ভাবে স্বীকার করেছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে এই কাজ করতেন বলে জানা গিয়েছে।[ নিউজ২৪। ৯ নভেম্বর ২০১৭।]

এর মানে সমস্যাটা শুধু মাদরাসায় নয়। বরং এ শ্রেণীর ঘৃণ্য ও বিকৃত মস্তিস্কের লোক যেখানেই থাকুক, তারা একাজ করে থাকে।

সুতরাং এটাকে কেবল মাদরাসার সমস্যা বলাটা পরিস্কার অপবাদ বৈ কিছু নয়।

১ম প্রশ্নের উত্তর

কওমী মাদরাসা শুধু একটি বিল্ডিং বা প্রতিষ্ঠানের নাম নয়। এটি একটি আদর্শের নাম। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের উপমহাদেশের মতাদর্শ লালনকারী সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য একটি জামাতের নাম কওমী মাদরাসা বা দেওবন্দী ধারার মাদরাসা।

মক্তব হিফজখানা যে কেউ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। এর মানে এটা কওমী মাদরাসা হয়ে যাবে না। অনেক আলিয়া মাদরাসায় মক্তব ও হেফজ বিভাগ আছে। যা বিদআতপন্থী বা আহলে হাদীস কিংবা জামাত সমর্থিতও আছে।

এর মানে এসব কওমী মাদরাসা নয়।

কওমী মাদরাসা কেবল তা’ই হবে, যাতে কওমী সিলেবাস এবং দেওবন্দের আদর্শ লালন করে। দেওবন্দের আদর্শ লালনকারী হিফজ ও মক্তব বিভাগ যেমন আছে, তেমনি ভিন্ন ধারারও আছে।

সুতরাং শুধুমাত্র হিফজ ও মক্তব দেখলেই সেটাকে কওমী মাদরাসা আমভাবে বলা উচিত নয়। বরং তাদের আদর্শ ও আকীদা দেখতে হবে।

২য় প্রশ্নের উত্তর

এ বিষয়ে আমাদের কয়েকটি পরামর্শ:

ক) ইসলামে সমকামীতার যে শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে তা দণ্ডবিধি হিসেবে ফৌজদারী আইন হিসেবে সংযুক্ত করা।

সমকামীতার ইসলামী শাস্তি হলো: যদি উভয়ের সম্মতিতে হয়, তাহলে উভয়কে হত্যা করা হবে। আর যদি জোরপূর্বক হয়, তাহলে যে করবে শুধু তাকে হত্যা করা হবে।

হত্যার পদ্ধতি হবে সবার জন্য শিক্ষানীয়, উঁচু পাহাড় থেকে ফেলে দিয়ে, কিংবা দুই পাথরের মাঝে রেখে পিশে ফেলা। এমন কঠোর শাস্তি প্রয়োগ নিশ্চিত করা গেলে আশা করি সমকামিতার মতো নিকৃষ্ট বিকৃত রুচির কাজ বন্ধ হবে।


عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنْ وَجَدْتُمُوهُ يَعْمَلُ عَمَلَ قَوْمِ لُوطٍ، فَاقْتُلُوا الْفَاعِلَ وَالْمَفْعُولَ بِهِ

হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম ইরশাদ করেন, যাকে তোমরা কওমে লুতের কাজ করতে দেখো [সমকামিতা], তাহলে যে করে এবং যার সাথে করে উভয়কে হত্যা কর। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২৫৬১, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৪৬২, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৪৫৬]

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الَّذِي يَعْمَلُ عَمَلَ قَوْمِ لُوطٍ قَالَ: ارْجُمُوا الْأَعْلَى وَالْأَسْفَلَ، ارْجُمُوهُمَا جَمِيعًا

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। কওমে লুতের মত কার্যসম্পাদনকারী তথা সমকামীদের ব্যাপারে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন যে, এদের উপরের এবং নিচের উভয়কে পাথর মেরে হত্যা কর। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২৫৬২]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” اقْتُلُوا الْفَاعِلَ وَالْمَفْعُولَ بِهِ، فِي عَمَلِ قَوْمِ لُوطٍ،

হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, লুত আঃ এর কওমের মত কুকর্মে লিপ্ত উভয়কে হত্যা করে ফেল। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৭২৭, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২৫৬১, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৪৬২, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৪৫৬, সুনানে দারাকুতনী, হাদীস নং-৩২৩৪}

২ মাদরাসা কর্তৃপক্ষের জন্য উচিত সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ক্লাসরুম ও শোবার কক্ষ মনিটরিং করা।

৩ মাঝে মাঝে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া এবং ইসলাহী আলোচনা করা। যাতে করে আমলী মনোভাব সৃষ্টি হয়, এবং শয়তানের ওয়াসওয়াসা মুক্ত থাকতে পারে।

আশা করি এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে এহেন ঘৃণ্য কর্ম দূরিভূত হবে।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *