আদম আলাইহিস সালাম এবং ফেরেশতা ও ইবলিশ সম্পর্কিত নাস্তিকদের প্রশ্নের উত্তর

প্রশ্নঃ
সুরা বাকারা . আয়াত ৩০ আল্লাহ ফেরেশতাদের বললেন ” আমি জমিনে আমার প্রতিনিধি প্রেরণ করবো” ফেরেশতারা বললো ” আপনি কি হেথায় এমন কাউকে প্রেরণ করতে চান যে অশান্তি ও রক্তপাত ঘটাবে?”
# মতামত এখন মনে হচ্ছে ফেরেশতাদের অনুমানই ঠিক ছিলো . মানুষ মারার অস্ত্র তৈরিতে যত টাকা বিশ্বে খরচ হয় মানুষের কল্যাণে তার সিকিভাগও না।
উদাহরণ = ইউরিনিয়াম সম্রিদ্ধ করণ। ( সঠিক বানানটি আসেনি ) আল্লাহ বললেন ” নিশ্চয়ই আমি যা জানি তুমরা তা জাননা” আয়াত ৩১।

তিনি আদমকে সব কিছুর নাম শেখালেন পরে ফেরেশতাদের সামনে নিয়ে এসে বললেন” যদি সত্যবাদী হও তোমরা এগুলোর নাম বলে দাও” ফেরেস্তারা বললো” আপনি যা শিক্ষা দিয়েছেন তার বাইরে আমরা কিছুই জানি না”

# মতামত ফেরেশতারা কিছুই জানেনা আল্লাহ যা শিখিয়েছেন তার বাইরে কিন্তু আল্লাহর সাথে দ্বিমত করার এবং পরামর্শ দেওয়ার শিক্ষা কোথায় পেলো?
আর সভ্যতার বিবর্তনে মানুষ ক্রমান্বয়ে শব্দ ও বর্ণ আবিষ্কার করেছে সময়ের প্রয়োজনে যেমন এন্ড্রয়েড . নেটওয়ার্ক . ওয়াইফাই সবচেয়ে বড় কথা আরবি নাম গুলো যদি আল্লাহ শিখিয়ে থাকেন অন্যান্য ভাষার শব্দগুলো দিয়ে বস্তুর নাম কে শিক্ষা দিলো?

আয়াত ৩৪ ” আর যখন ফেরেশতাদের বললাম আদমকে সেজদা কর তখন ইবলিশ ব্যাতিত সকলেই সেজদা করল।”
# মতামত ইবলিশ ত জ্বীনের বংশদ্ভুত সে ফেরেশতা নয়।
সুতরাং তাকে সেজদা করতে বলা হয়েছিলো কি বা ফেরেশতাদের নির্দেশ জাতিগত পার্থক্যের কারণে তার উপর বর্তায় কি?
সুরা ক্বামার আয়াত ১৭
” আমি কোরআন কে সহজ করে দিয়েছি বুঝার জন্য অতএব কোন চিন্তাশীল আছে কি?” এই আয়াতের আলোকে বুঝতে চেয়েছি।?

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

ফেরেশতাদের কথার ভাবটায় বুঝা যায়, সকল মানুষই মারামারি হানাহানি করবে। সারা বিশ্ব জুড়ে শুধু অনাচারই চলবে। আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের মন্তব্য করা মানুষের হানাহানি বিষয়টিকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করেননি। বরং তিনি শুধু ফেরেশতাদের বুঝালেন যে, সকল মানুষই অনাচারি এবং সন্ত্রাসী হবে না। অনেক ভালো মানুষ হবে। তাদের মাঝে নবী রাসূলগণও আসবেন। আল্লাহর ওলীরাও থাকবেন।

সুতরাং মানুষ মাত্রই মারামারি হানাহানি করবে বিষয়টি এমন হবে না। একথা আল্লাহ তাআলা জানেন, ফেরেশতারা জানতো না।

قَالَ اللَّهُ تَعَالَى مُجِيبًا لَهُمْ عَنْ هَذَا السُّؤَالِ: {إِنِّي أَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُونَ} أَيْ: إِنِّي أَعْلَمُ مِنَ الْمَصْلَحَةِ (8) الرَّاجِحَةِ فِي خَلْقِ هَذَا الصِّنْفِ عَلَى الْمَفَاسِدِ الَّتِي ذَكَّرْتُمُوهَا (9) مَا لَا تَعْلَمُونَ أَنْتُمْ؛ فَإِنِّي سَأَجْعَلُ فِيهِمُ الْأَنْبِيَاءَ، وَأُرْسِلُ فِيهِمُ الرُّسُلَ، وَيُوجَدُ فِيهِمُ الصِّدِّيقُونَ وَالشُّهَدَاءُ، وَالصَّالِحُونَ وَالْعُبَّادُ، وَالزُّهَّادُ وَالْأَوْلِيَاءُ، وَالْأَبْرَارُ وَالْمُقَرَّبُونَ، وَالْعُلَمَاءُ الْعَامِلُونَ وَالْخَاشِعُونَ، وَالْمُحِبُّونَ لَهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى الْمُتَّبِعُونَ رُسُلَهُ، صَلَوَاتُ اللَّهِ وَسَلَامُهُ عَلَيْهِمْ. (تفسير ابن كثير-1226-227، سورة البقرة، رقم الآية-30)

আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের নিজস্ব যোগ্যতাবলে কোন কিছু মুখস্ত রাখার ক্ষমতা দেননি। এর মানে এই নয় যে, তাদের বোধবুদ্ধি ও বিবেক দেননি।

খুব বেশি মুখস্ত করার ক্ষমতা না থাকলেও কোন ব্যক্তি তার অভিজ্ঞতা থেকে মন্তব্য বা পরামর্শ দেয়ার ক্ষমতা রাখে।

ফেরেশতারা অতীতে জমিনে জীনদের অনাচার ও হানাহানির অভিজ্ঞতা থেকে নিজেদের মতামত পেশ করেছেন। তাছাড়া আল্লাহ তাআলা সেই সময় তাদের মতামত দেবার মতো সক্ষমতা দান করেছেনও বলা যায়।

خَلَقَ اللَّهُ الْمَلَائِكَةَ يَوْمَ الْأَرْبِعَاءِ وَخَلْقَ الْجِنَّ يَوْمَ الْخَمِيسِ، وَخَلَقَ آدَمَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ؛ فَكَفَرَ قَوْمٌ مِنَ الْجِنِّ، فَكَانَتِ الْمَلَائِكَةُ تَهْبِطُ إِلَيْهِمْ فِي الْأَرْضِ فَتُقَاتِلُهُمْ، فَكَانَتِ الدِّمَاءُ بَيْنَهُمْ، وَكَانَ الْفَسَادُ فِي الْأَرْضِ، فَمِنْ ثَمَّ قَالُوا: {أَتَجْعَلُ فِيهَا مَنْ يُفْسِدُ فِيهَا} كَمَا أَفْسَدَتِ الْجِنُّ {وَيَسْفِكُ الدِّمَاءَ} كَمَا سَفَكُوا….. قَالَ: قَالَ اللَّهُ لِلْمَلَائِكَةِ: {إِنِّي جَاعِلٌ فِي الأرْضِ خَلِيفَةً} قَالَ لَهُمْ: إِنِّي فَاعِلٌ. فَآمَنُوا بِرَبِّهِمْ ، فَعَلَّمَهُمْ عِلْمًا وَطَوَى عَنْهُمْ عِلْمًا عَلِمَهُ وَلَمْ يَعْلَمُوهُ، فَقَالُوا بِالْعِلْمِ الَّذِي عَلَّمَهُمْ: {أَتَجْعَلُ فِيهَا مَنْ يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاءَ} ؟ {قَالَ إِنِّي أَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُونَ} (تفسير ابن كثير-1219، سورة البقرة، تحت رقم الآية-30)

সমস্ত  ভাষাই আল্লাহর। এমনতো নয় যে, আল্লাহ তাআলা শুধু আরবী ভাষা জানেন, আর কোন  ভাষা জানেন না। নাউজুবিল্লাহ।

যেহেতু সকল ভাষার স্রষ্টাই আল্লাহ তাআলা। তাই আদম আলাইহিস সালামকে সকল ভাষায় সকল কিছু শিক্ষা দেয়া অসম্ভব কিছু নয়।

وَمِنْ آيَاتِهِ خَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافُ أَلْسِنَتِكُمْ وَأَلْوَانِكُمْ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّلْعَالِمِينَ ﴿الروم: ٢٢

وَقَالَ السُّدِّيُّ، عَمَّنْ حَدَّثَهُ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: {وَعَلَّمَ آدَمَ الأسْمَاءَ كُلَّهَا} قَالَ: عَرَضَ عَلَيْهِ أَسْمَاءَ وَلَدِهِ إِنْسَانًا إِنْسَانًا، وَالدَّوَابِّ، فَقِيلَ: هَذَا الْحِمَارُ، هَذَا الْجَمَلُ، هَذَا الْفَرَسُ.

وَقَالَ الضَّحَّاكُ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: {وَعَلَّمَ آدَمَ الأسْمَاءَ كُلَّهَا} قَالَ: هي هذه الأسماء التي يتعارف بِهَا النَّاسُ: إِنْسَانٌ، وَدَابَّةٌ، وَسَمَاءٌ، وَأَرْضٌ، وَسَهْلٌ، وَبَحْرٌ، وَجَمَلٌ (1) ، وَحِمَارٌ، وَأَشْبَاهُ ذَلِكَ مِنَ الْأُمَمِ وَغَيْرِهَا.

وَرَوَى ابْنُ أَبِي حَاتِمٍ وَابْنُ جَرِيرٍ، مِنْ حَدِيثِ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ مَعْبَدٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: {وَعَلَّمَ آدَمَ الأسْمَاءَ كُلَّهَا} قَالَ: عَلَّمَهُ اسْمَ الصَّحْفَةِ والقِدر، قَالَ: نَعَمْ حَتَّى الْفَسْوَةَ والفُسَيَّة،

وَقَالَ مُجَاهِدٌ: {وَعَلَّمَ آدَمَ الأسْمَاءَ كُلَّهَا} قَالَ: عَلَّمَهُ اسْمَ كُلِّ دَابَّةٍ، وَكُلِّ طَيْرٍ، وَكُلِّ شَيْءٍ (تفسير ابن كثير-1223، سورة البقرة، تحت رقم الآية-31)

ইবলিশ জিনজাতির অন্তর্ভূক্ত হবার পরও ফেরেশতাদের মাঝে থাকার কারণে সেও ফেরেশতাদের নির্দেশকৃত বিধানের অন্তর্ভূক্ত ছিল। এটা ইবলিশ নিজেও জানতো।

এ কারণেই ইবলিশ এ অভিযোগ করেনি যে, আমিতো ফেরেশতা নই, আমি কেন ফেরেশতাদের আদেশ করা সেজদার নির্দেশ অগ্রাহ্য করায় নাফরমান সাব্যস্ত হবো?

যদিও ইবলিস সেজদা না দিতে এ যুক্তি দিয়েছে যে, সে আগুনের তৈরী আর আদম মাটির তৈরী, তাই সে উত্তম। এ কারণে সে সেজদা দিবে না।

কিন্তু ইবলিশ একথা বলেনি যে, আমি ফেরেশতাদের অন্তর্ভূক্ত নই, তাই ফেরেশতাদের সেজদার নির্দেশের আওতাধীন হিসেবে আমার সেজদা দেয়ার কোন বাধ্যবাধকতা নেই।

এর মানে বুঝা গেল যে, ইবলিস জানতো উক্ত নির্দেশে সেও শামিল। সুতরাং এ প্রশ্নটা আমাদের পক্ষ থেকে করাটা অযৌক্তিক ও অসাড়।

وَالْغَرَضُ أَنَّ اللَّهَ تَعَالَى لَمَّا أَمَرَ الْمَلَائِكَةَ بِالسُّجُودِ لِآدَمَ دَخَلَ إِبْلِيسُ فِي خِطَابِهِمْ؛ لِأَنَّهُ -وَإِنْ لَمْ يَكُنْ مِنْ عُنْصرهم -إِلَّا أَنَّهُ كَانَ قَدْ تشَبَّه بِهِمْ وَتَوَسَّمَ بِأَفْعَالِهِمْ؛ فَلِهَذَا دَخَلَ فِي الْخِطَابِ لَهُمْ، وَذُمَّ فِي مُخَالَفَةِ الْأَمْرِ (تفسير ابن كثير-1230)

قَالَ [اللَّهُ] تَعَالَى لِلْمَلَائِكَةِ الَّذِينَ كَانُوا مَعَ إِبْلِيسَ خَاصَّةً دُونَ الْمَلَائِكَةِ الَّذِينَ فِي السَّمَاوَاتِ: اسْجُدُوا لِآدَمَ. فَسَجَدُوا كُلُّهُمْ أَجْمَعُونَ إِلَّا إِبْلِيسَ أَبَى وَاسْتَكْبَرَ، لِمَا كَانَ حَدَّثَ نَفْسَهُ مِنَ الْكِبْرِ وَالِاغْتِرَارِ. فَقَالَ: لَا أَسْجُدُ لَهُ، وَأَنَا خَيْرٌ مِنْهُ وَأَكْبَرُ سِنًّا وَأَقْوَى خَلْقًا، خَلَقْتَنِي مِنْ نَارٍ وَخَلَقْتَهُ مِنْ طِينٍ. يَقُولُ: إِنَّ النَّارَ أَقْوَى مِنَ الطِّينِ (تفسير ابن كثير-1228، سورة القرة، تحت رقم الآية-34)

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *