মুসলিম বোনদের প্রতি খোলা চিঠি

ইবনে তৈয়ব


প্রিয় বোন, বিশ্বাস কর তোমার সমালোচনা করা আমার অভিপ্রায় নয়।  তোমাকে মন্দ ঠাওরানোতেও কোনো লাভ নেই আমার। পর্দা মেনে চল বা না চল, যেহেতু তোমার মাঝে ঈমান আছে তাই তুমি আমার বোন। গোঁড়ায় আমাদের বাবা ও মা অভিন্ন। আমাদের বিশ্বাস ও আদর্শ অভিন্ন। যে দেশ বা যে ধর্মেরই হও না কেন আদি পিতার এ সম্পর্ক নস্যাৎ করে সাধ্য কার? আমার মিনতি, কথাগুলোর ওপর একবার চোখ বুলাও। একটুখানি ভেবে দেখ খোলা মনে।

ভেবো না পৃথিবী আজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। সাফল্য ও সমৃদ্ধির শীর্ষ চূড়ায় উপনীত হয়েছে। ধূলির ধরা ছাড়িয়ে মানুষ এখন পৌঁছে গেছে নানা গ্রহে-উপগ্রহে। সারা বিশ্ব এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। সুতরাং এখন পর্দা করা মানে মধ্যযুগে ফিরে যাওয়া! পর্দা করা মানে নিজেকে বঞ্চিত করা! আমাদের মুক্তি নারী স্বাধীনতায়! মুক্তি ইসলাম উপেক্ষায়!

ইতিহাস পড়ে দেখ, ইসলামই সর্বপ্রথম নারীকে মুক্তি দিয়েছে। নারীকে ভোগের পণ্য হতে দেয়নি শান্তির ধর্ম ইসলাম। একমাত্র ইসলামই কন্যা সন্তান প্রতিপালনে পুরষ্কার ঘোষণা করেছে। ইসলামই পুরুষের চারিত্রিক শুচিতা যাচাইয়ে স্ত্রীর সাক্ষ্যের কথা বলেছে। ইসলামে কোনো সুযোগ রাখা হয়নি মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে বউ নিয়ে সুখে থাকার অথবা জন্মের পর থেকে নিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত কোনো পর্বে মাকে অবমূল্যায়ন করার। স্ত্রী, কন্যা ও মাতা-নারী জীবন তো এর বাইরে নয়। এ ক্ষেত্রত্রয়ের কোনোটিতেই ইসলামের চেয়ে বেশি দিতে পারেনি কোনো ধর্ম বা কোনো জাতি।

আমার ভার্সিটিপড়ুয়া কিংবা কর্মজীবী বোন, তুমি পাশ্চাত্যের মেকি স্বাধীনতায় প্রবঞ্চিত হয়ো না। স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর ‘হৃদয়কাড়া’ চিত্র দেখে ধোঁকায় পড়ো না। নাটক-সিনেমা আর ইউরোপ-আমেরিকার সুখের ছবি দেখে নিজেকে হতভাগী ভেবো না। পশ্চিমা সমাজের একটু ভেতরের খবর নিলেই জানতে পারবে বাস্তব অবস্থা।

যারা নিয়মিত খবরের কাগজ পড়ে তাদের জিজ্ঞেস করে দেখ-প্রায়ই পত্রিকায় সংবাদ আসছে পশ্চিমা তরুণীরা স্বাধীনতার (!) শেকলে হাঁপিয়ে উঠেছে। তাদের মধ্যে ইসলাম গ্রহণের হার সবচেয়ে বেশি। Daughter of another নামক একটি বইয়ে (কয়েক বছর আগে ঢাকা থেকে ‘অন্যপথের কন্যারা’ নামে বইটির অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে) চল্লিশজন মার্কিন তরুণীর কথিত নারী স্বাধীনতা পরিহার করে পর্দার ধর্ম ইসলামে আগমনের ইতিবৃত্ত তুলে ধরা হয়েছে। তারা সবাই নারী স্বাধীনতার স্বরূপ প্রত্যক্ষ করেছেন। এ স্বাধীনতাকে তারা কৃত্রিমতা ও প্রবঞ্চনা এবং ইসলামের পর্দার বিধানকে মুক্তি ও সুরক্ষা বলে আখ্যায়িত করেছেন। ব্রিটেনের সান ডে এক্সপ্রেস পত্রিকার মহিলা সাংবাদিক রিডলি-যিনি আফগানিস্তানে বোরখা সম্পর্কে তালেবানদের ভূমিকার কঠোর সমালোচক ছিলেন তিনিই কিন্তু পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলন করে ইসলামের পর্দার ছায়াকে শান্তির ঠিকানা বানিয়ে নিয়েছেন। ভারতে খোলামেলা লেখালেখির জন্য আলোচিত মালায়াম ও ইংরেজি ভাষার লেখিকা কমলা দাস এখন ইসলাম গ্রহণ করে পর্দা করছেন। এমন নজির একটি দু’টি নয় অনেক। এদের সবাই ‘সুশিক্ষিতা’। এরা কেউ আবেগের বশে বা চাপে পড়ে ইসলাম কবুল করেননি।

উচ্চাভিলাষী বোন আমার, ইসলামের সীমানায় থেকে তুমি সবই করতে পার। যদি পড়তে চাও তবে যত ইচ্ছে পড়তে পার। প্রয়োজন হলে কর্মজীবী হয়ে কাজও করতে পার। শুধু পর্দা লঙ্ঘন করো না। শরীয়তের গণ্ডী অতিক্রম করো না। মনে রেখো, ইসলাম তোমার অগ্রযাত্রায় বাধা নয়। পর্দাও অন্তরায় নয় প্রগতির পথে। ইসলাম চায় তুমি যেখানেই থাক তোমার সতীত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব এবং সম্মান রক্ষা হোক। তোমার কোমলতা, সৌন্দর্য এবং ভদ্রতা বজায় থাকুক। ইসলাম তোমাকে বন্দী করতে ইচ্ছুক নয়। কোনো চরিত্রহীন যেন তোমাকে কলঙ্কিত না করতে পারে, ছলে-বলে-কৌশলে তোমাকে অপমানিত না করতে পারে-এই ইসলামের অন্বেষা।

আমার স্কুল-কলেজগামী বোন, বখাটেদের ইভটিজিং থেকে বাঁচতে চাও? এসো পর্দার আশ্রয়ে। অমানুষদের এসিড সন্ত্রাস থেকে বাঁচতে চাইলেও এসো পর্দার নিরাপত্তায়। যৌতুক তোমাকে দিতে হবে না; বরং নগদ মোহরানা দিয়ে তোমাকে নিয়ে যেতে বাধ্য হবে যদি তুমি হিজাবে সুশোভিত হও। এ আমার দাবি নয়; বাস্তবতা। পরিসংখ্যান দেখলেই জানতে পারবে পর্দানশীনদের অল্পজনই এসব অমানবিকতার শিকার হয়।

বোন, আধুনিকতার নামে তুমি নিজেকে অসম্মান ও অনিরাপদ করো না। হেদায়েতের আলোক বঞ্চিতদের প্রচার-প্রোপাগান্ডায় বিভ্রান্ত হয়ো না। ওরা বুঝাতে চায়, সভ্যতা ও বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উৎকর্ষের এই যুগে আবার ধর্ম কেন? সভ্যতাগর্বী এসব মানুষের অপপ্রচারে তুমি প্রভাবিত হয়ো না। ওরা জানে না এর আগেও পৃথিবীতে তাদের মতো সভ্যতাগর্বী জাতি ছিল। তারা আজ কোথায়? বল, তাজ মহল এবং পিরামিড যারা গড়েছে তাদের কেউ কি পৃথিবীতে বেঁচে আছে? দয়াময় আল্লাহ কত সুন্দর করে ইরশাদ করেছেন-অর্থ: ‘তারা কি ভ্রমণ করেনি, তাহলে তারা দেখতে, পূর্ববর্তীদের পরিণাম কেমন হয়েছিল? তারা পৃথিবীতে ছিল তাদের চেয়ে সংখ্যায় অধিক। আর শক্তিতে ও কীর্তিতে তাদের চেয়ে অধিক প্রবল। অতঃপর তারা যা অর্জন করত তা তাদের কাজে আসেনি।’ (সূরা মুমিন : ৮২)

প্রিয় বোন, তুমি কি জান বেপর্দার কুফল কী? পর্দার প্রতি যত অবহেলা করা হচ্ছে নারীর প্রতি সহিংসতা ততই বাড়ছে। জাতি হিসেবে আজ আমরা আগের চেয়ে বেশি শিক্ষিত। কিন্তু নারীর প্রতি সামাজিক অনাচার বেড়েছে না কমেছে? নিত্যনতুন পন্থায় নারীর উপর নির্যাতন করা হচ্ছে। পর্দা লঙ্ঘনই অবৈধ যৌন সম্পর্কের প্রথম ধাপ আর এই অবৈধ মেলামেশাই যে নিশ্চিত মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে আসে, এইডস-এর মতো নানা রোগ ডেকে আনে, তা বোঝার জন্য তো মুসলিম হওয়ারও প্রয়োজন নেই।

অতএব এসো মুক্তির পতাকাতলে। নিরাপত্তার সুরক্ষিত গণ্ডীতে। পর্দা শুধু তোমার ইহকালীন জীবনকে নিরাপদই করবে না, নিশ্চিত করবে তোমার সম্মান ও সমৃদ্ধি। আর আখিরাতে নাজাত পাবে তুমি জাহান্নামের কল্পনাতীত শাস্তি থেকে। চিরশান্তির ঠিকানা জান্নাত হবে তোমার আবাস।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দিন। আমীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version