আসসালামু আলাইকুমমুহতারম,ঈমান ও আকিদা কাকে বলে ? এদের মধ্যে পার্থক্য কী? সহজ উদাহরন দিয়ে বুঝিয়ে দিলে ভাল হয়।
ঈমান ও আকিদার মধ্যে পার্থক্য : ' আকিদা' শব্দটি
প্রায়ই ঈমান ও তাওহিদের সঙ্গে গুলিয়ে যায়।
অস্বচ্ছ ধারণার ফলে অনেকেই বলে
ফেলেন, আকিদা আবার কি ? আকিদা বিশুদ্ধ করারই বা
প্রয়োজন কেন ? ঈমান থাকলেই যথেষ্ট।
ফলে দ্বীন সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে এক
বড় ধরনের অপূর্ণতা সৃষ্টি হয়, যা প্রায়ই মানুষকে
পথভ্রষ্টতার দিকে ঠেলে দেয়। এ জন্য ঈমান ও
আকিদার মধ্যকার সম্পর্ক ও পার্থক্য স্পষ্ট হওয়া
প্রয়োজন। নিম্নে বিষয়টি উপস্থাপন করা হলো -
প্রথমত, ঈমান সমগ্র দ্বীনকেই অন্তর্ভুক্ত
করে। আর আকিদা দ্বীনের সর্বোচ্চ
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে।
দ্বিতীয়ত , আকিদার তুলনায় ঈমান আরও ব্যাপক
পরিভাষা। আকিদা হলো কিছু ভিত্তিমূলক বিষয়ের প্রতি
দৃঢ় বিশ্বাসের নাম। অন্যদিকে ঈমান শুধু বিশ্বাসের
নাম নয় ; বরং মৌখিক স্বীকৃতি ও কর্মে
বাস্তবায়নের মাধ্যমে তার বাস্তব প্রতিফলনকে
অপরিহার্য করে দেয়। সুতরাং ঈমানের দুটি অংশ।
একটি হলো অন্তরে স্বচ্ছ আকিদা পোষণ।
আরেকটি হলো বাহ্যিক তৎপরতায় তার প্রকাশ। এ দুটি
পরস্পরের সঙ্গে এমনভাবে সংযুক্ত যে
কোনো একটির অনুপস্থিতি ঈমানকে বিনষ্ট করে
দেয়। তৃতীয়ত , আকিদা হলো ঈমানের মূলভিত্তি।
আকিদা ব্যতীত ঈমানের উপস্থিতি তেমন অসম্ভব,
যেমনিভাবে ভিত্তি ব্যতীত কাঠামো কল্পনা করা
অসম্ভব। চতুর্থত , আকিদার দৃঢ়তা যত বৃদ্ধি পায় ঈমানও
তত বৃদ্ধি পায় ও মজবুত হয়। আকিদায় দুর্বলতা সৃষ্টি
হলে ঈমানেরও দুর্বলতা সৃষ্টি হয়, আমলের
ক্ষেত্রেও সে দুর্বলতার প্রকাশ পায়।
যেমনিভাবে রাসূল (সা . ) বলেন , 'মানুষের হৃদয়ের
মধ্যে একটি গোশতপি- রয়েছে , যদি তা পরিশুদ্ধ
হয় তবে সারা শরীর পরিশুদ্ধ থাকে, যদি তা
কদর্যপূর্ণ হয় তবে সারা শরীরই কদর্যপূর্ণ হয়ে
যায়। ' ( বুখারী- মুসলিম) । পঞ্চমত , বিশুদ্ধ আকিদা বিশুদ্ধ
ঈমানের মাপকাঠি , যা বাহ্যিক আমলকেও বিশুদ্ধ করে
দেয়। যখন আকিদায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় তখন ঈমানও
বিভ্রান্তিপূর্ণ হয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ সাহাবায়ে
কেরাম ও সালফে সালেহিনের অনুসরণ করা হয়
এজন্য যে , তারা যে আকিদার অনুসারী ছিলেন তা
ছিল বিশুদ্ধ এবং কোরআন ও সুন্নাহের সঙ্গে
সামঞ্জস্যপূর্ণ। আর এজন্যই তারা ছিলেন খালেস
ঈমানের অধিকারী এবং পৃথিবীর বুকে উত্থিত
সর্বোত্তম জাতি। অন্যদিকে মুরজিয়া , খারেজি ,
কাদরিয়াসহ বিভিন্ন উপদল আকিদার বিভ্রান্তির কারণে
তাদের ঈমান যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি
তাদের কর্মকান্ড নীতিবিচ্যুত হয়ে পড়েছে।
এভাবেই আকিদার অবস্থান পরিবর্তনের কারণে
ঈমানের অবস্থানও পরিবর্তন হয়ে যায়। আকিদা সঠিক
হওয়ার উপরই ঈমান ও আমলের যথার্থতা
নির্ভরশীল। তাই সবকিছুর আগে আকিদার বিশুদ্ধতা
নিশ্চিত করাই একজন মুসলিমের প্রথম ও অপরিহার্য
দায়িত্ব। আজকের পৃথিবীতে যখন সংঘাত হয়ে
উঠেছে বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক , তখন একজন
মুসলমানের জন্য স্বীয় আকিদা সংরক্ষণের
প্রয়োজনীয়তা সর্বাধিক বেড়েছে। কেননা
হাজারও মাজহাব - মতাদর্শের দ্বিধা- সঙ্কটের
ধক্ষংসাত্মক, দুর্বিষহ জঞ্জালকে সযত্নে পাশ
কাটিয়ে সত্যের দিশা পাওয়া এবং সত্য ও স্বচ্ছ
দ্বীনের দিকে ফিরে আসা বিশুদ্ধ আকিদা
অবলম্বন ব্যতীত অসম্ভব। আল্লাহ রাবক্ষুল
আলামিন সব মুসলিম ভাইবোনকে সঠিক আকিদার
ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত স্বচ্ছ ঈমানের ওপর অটল
থাকার তৌফিক দান করুন ও যাবতীয় শিরকি ও
জাহেলি চিন্তাধারা থেকে আমাদের হেফাজত
করুন। আমিন !
Please login or Register to submit your answer