মহিলাদের দ্বীনী শিক্ষার গুরুত্ব


উম্মে তাকী হাফিযাহাল্লাহু


 

প্রাক ইসলামী যুগে মহিলারা প্রচন্ড অন্যায়-অবিচারের শিকার হয়েছে, তাদের ইজ্জত-সম্মান ভূলুণ্ঠিত হয়েছে, তাদের কান্না ও আর্তচিৎকারে গোটা পৃথিবীর আকাশ-বাতাশ ভারি হয়েছে–একথা গোটা শিক্ষিতসমাজের কাছে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। কিন্তু কোন সভ্যতা, দর্শন কিংবা শাসন মহিলাদেরকে এই করুণ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে নি। ঠিক সেই মুহূর্তে সর্বপ্রথম ইসলামই মহিলাদের মুক্তি, শিক্ষা, শান্তি ও উন্নতির এক অলৌকিক দর্শন নিয়ে মানবজাতির সামনে উপস্থিত হয়। যার মাধ্যমে মহিলারা তাদের যাবতীয় অধিকার উদ্ধার করতে সক্ষম হয়, নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পায়, হারানো ইজ্জত ফিরে পায় এবং শিক্ষার অলঙ্কারে ভূষিত হয়ে মর্যাদার সমূচ্চ আসনে পৌঁছতে সক্ষম হয়।

কিন্তু আজ সেই নারীজাতি পুনরায় আক্রান্ত। পণ্যরূপে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও ইজ্জত-আবরু বাজারে বিক্রি হচ্ছে। বস্তুবাদীদের যৌনসন্ত্রাস, অপশিক্ষা, অপসংস্কৃতি, জুলুম-নির্যাতন, অপহরণ, গুম, খুন ও ধর্ষণের মত বিভিন্ন জুলম-আঘাতে ক্ষতবিক্ষত আজ নারীসমাজ। সবমিলিয়ে তাদের শান্তি ও নিরাপত্তার অবকাঠামো প্রতিনিয়ত ধসে চলেছে। যদি শীঘ্রই এই অবস্থার কোন পরিবর্তন না ঘটে, তবে এক সময় তাদের শান্তি ও নিরাপত্তার অস্তিত্ব পর্যন্ত হুমকির সম্মূখীন হতে বাধ্য।

বাহ্যিক দৃষ্টিতে মনে হয়, বিশ্বশক্তিগুলো এই সমস্যা নিরসনের প্রতি মনোনিবেশ করেছে এবং তারা নারীদের শান্তি ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে আয়োজন করছে বিশ্বব্যাপী সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, গঠন করছে অসংখ্য নারী অধিকার সংস্থা ও সংগঠন, প্রণয়ন করে চলেছে নারী নির্যাতন রোধক আইনের মত কঠিন শাস্তির বিধান। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, এসব কিছুর পরেও নারীদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বিন্দু পরিমাণও হ্রাস পায় নি, বরং প্রতিনিয়ত তা বেড়েই চলেছে।

প্রমাণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, যে সকল দেশ বিশ্বব্যাপী নারীদের অধিকার নিয়ে বেশী মাথা ঘামাচ্ছে, বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থার জরিপ অনুযায়ী, তাদের দেশেই নারীরা সবচেয়ে বেশী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তাই প্রাক ইসলামী যুগে যেভাবে কোন মতবাদ বা দর্শন মহিলাদের সমস্যার সমাধান দিতে পারেনি, ঠিক সেভাবে এখনো কোন দর্শন দিয়ে তাদের সমস্যার সমাধান করা যাবে না। বরং এই মুহূর্তে ইসলামের অলৌকিক দর্শনই এর একমাত্র সমাধান। এছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই। এটাই বাস্তব সত্য।

কিন্তু এই দর্শনের বৈশিষ্ট্য কী এবং কিভাবে এটি মহিলাদের যাবতীয় সমস্যার যুগোপযোগী সমাধান দেয়, তাদের শান্তি-নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, ইজ্জত-আবরু সংরক্ষণ করে এবং উন্নতির শান্তিপূর্ণ পথ নির্দেশ করেÑতা আমাদের দুনিয়াবাসীর সামনে তুলে ধরতে হবে। যদি তারা খোলা মনে এই দর্শন অধ্যয়ন করে এবং মহিলাদের শান্তি ও নিরাপত্তার ব্যাপারে আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান হয়, তাহলে তারা অবশ্যই এই দর্শন মানতে বাধ্য হবে বলে আশা করি। আর যদি তারা আন্তরিক না হয়, তাহলে এর ভয়াবহ পরিণতি অতি শীঘ্রই তাদের ভোগ করতে হবে এবং তখন অনুতাপ ছাড়া কিছুই করার থাকবে না।

বক্ষমান প্রবন্ধে উপরের কথাটির যৌক্তিক আলোচনার পাশাপাশি মহিলাদের শিক্ষা, শান্তি ও উন্নতির সাথে সম্পৃক্ত সকল জাগতিক দর্শন ও ইসলামী দর্শনের মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হবে ইনশাআল্লাহ। যাতে এই অলৌকিক দর্শনের শ্রেষ্ঠত্ব ও সাফল্যের বিষয় সকলের সামনে ভাস্বর হয়ে যায়।

মহিলাদের দ্বীনী শিক্ষার গুরুত্ব
কুরআনের আলোকে :
কুরআন কারীমের অসংখ্য আয়াতে মুসলিম উম্মাহকে ধর্মীয় শিক্ষা অর্জনের জন্য আদেশ করা হয়েছে। মহিলারাও সেই নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত। মহিলাদের আলোচনা পৃথকভাবে করা না হলেও ব্যতিক্রম কতিপয় বিধান ব্যতীত প্রায় অধিকাংশ বিধান পালনের ক্ষেত্রে মহিলারাও কুরআনের আদেশসূচক সম্বোধনের মধ্যে শামিল। সুতরাং প্রয়োজনীয় ইসলামী জ্ঞান অর্জন করা যেভাবে পুরুষের উপর ফরজ, তেমনিভাবে নারীদের উপরও ফরজ। নিম্নে এ সংক্রান্ত কতিপয় কুরআনের আয়াত পেশ করা হল।

আল্লাহ তা‘আলা কুরআন কারীমে ইরশাদ করেন–

وَ اذۡکُرۡنَ مَا یُتۡلٰی فِیۡ بُیُوۡتِکُنَّ مِنۡ اٰیٰتِ اللّٰہِ وَ الۡحِکۡمَۃِ

“আল্লাহর আয়াত ও দ্বীনের জ্ঞানগর্ভ কথা যা তোমাদের গৃহে পঠিত হয়, তোমরা সেগুলো স্মরণ করো।”

(সূরাহ আহযাব, আয়াত নং ৩৪)

এ আয়াতে মহিলাদের জন্য ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন ও বিতরণের উপর একটি অর্থবহ ইঙ্গিত করা হয়েছে। আল্লামা ইবনুল আরাবী (রহ.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন–“এ আয়াত থেকে প্রতীয়মান যে, উম্মাহাতুল মুমিনীন (রা.) নবী কারীম (সা.)-এর কাছ থেকে যেসব বিধি-বিধান সম্পর্কে অবগত হয়েছেন, সেগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া তাঁদের কর্তব্য, যাতে লোকেরা সে অনুযায়ী আমল ও জীবন পরিচালনা করতে পারে। এর দ্বারা দ্বীনের মাসায়িলের ব্যাপারে একজন নারী কিংবা পুরুষের খবর গ্রহণযোগ্য হওয়াও প্রমাণিত হয়।”

(দ্রষ্টব্য : আহকামুল কুরআন–ইবনুল আরাবী, ৩য় খণ্ড, ৪৩২ পৃষ্ঠা)

আল্লামা মুফতী শফী (রহ.) ইবনুল আরাবী (রহ.)-এর উপর্যুক্ত বক্তব্য তুলে ধরে লিখেছেন যে, “যদি কোন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট থেকে কুরআনের কোন আয়াত বা হাদীস শুনে, তা অন্যান্য লোকের কাছে পৌঁছে দেয়া তার কর্তব্য। এমন কি কুরআনের যেসব আয়াত নবীজীর পূণ্যবতী স্ত্রীগণের গৃহে নাযিল করা হয়েছে অথবা নবীজীর নিকট থেকে তারা যেসব শিক্ষা লাভ করেছেন, সেগুলো সম্পর্কে অপর লোকের সাথে আলোচনা করা তাঁদের উপর বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলার এ আমানত উম্মতের অপরাপর লোকের নিকট পৌঁছানো সেই পূণ্যবতী স্ত্রীগণের অপরিহার্য কর্তব্য।”

(তাফসীরে মা‘আরিফুল কুরআন, ৭ম খণ্ড, ১৪১ পৃষ্ঠা)

অতএব, বুঝা গেলো–পবিত্র কুরআন ও হাদীসের প্রচার-প্রসার এবং দ্বীনী শিক্ষা গ্রহণ ও প্রদান করা যেভাবে পুরুষদের কর্তব্য, তেমনি নারীদেরও কর্তব্য। নারীরা তাদের মহলে এ দায়িত্ব আনজাম দিবে।

তেমনি মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন-

فَاعۡلَمۡ اَنَّہٗ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا اللّٰہُ وَ اسۡتَغۡفِرۡ لِذَنۡۢبِکَ وَ لِلۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتِ

“(হে নবী!) আপনি জেনে রাখুন, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আর আপনার অবিবেচ্যের জন্য এবং মুমিন পুরুষ ও মুমিনা নারীদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করুন।”

(সূরাহ মুহাম্মদ, আয়াত নং ১৯)

এ আয়াতে সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে মহান আল্লাহর তাওহীদের ইল্মের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারপর সেই জ্ঞানের আলোকে নিজের ও মুমিন বান্দা-বান্দীর আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সুতরাং বুঝা গেল যে, জ্ঞান অর্জনের স্থান আমলের পূর্বে। আর তাতে নারী পুরুষ উভয়েই শামিল। এ কারণে ইমাম বুখারী (রহ.) এই আয়াতটি ‘বাবুল ইলমি কাবলাল কাউলি ওয়াল আমালি অর্থাৎ “বলা ও আমলের পূর্বে ইলম অর্জন করতে হবে” নামক অধ্যায়ে এনেছেন।

অন্যত্র তা‘আলা ইরশাদ করেন–

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا قُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ وَ اَہۡلِیۡکُمۡ نَارًا

“হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও।”

(সূরাহ তাহরীম, আয়াত নং ৬)

হযরত আলী (রা.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন–

علموا أنفسكم وأهليكم الخير

“এই আয়াতে মুমিনদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে যে, তোমরা নিজেদেরকে এবং নিজের পরিবার-পরিজনকে কল্যাণের বিষয় শিক্ষা দাও।”

(মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদীস নং ৩৮২৬)

ইমাম নবভী (রহ.) এই আয়াতের আলোকে লিখেছেন-

يأمر تعالى بطاعته ، وترك معصيته ، وأمر أهله بذلك ، والقيام عليهم ، وتأديبهم وتعليمهم ، لينجو من النار العظيمة

“এখানে আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে তাঁর আদেশ মান্য করার এবং নাফরমানী থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আর পরিবার-পরিজনকেও এই নির্দেশ পালন করানো, এর উপর সুদৃঢ় রাখা এবং তাদের এর শিক্ষা-দীক্ষা দেয়ার নির্দেশ করা হয়েছে। যাতে তারা জাহান্নামের কঠিন আযাব থেকে রক্ষা পায়।”

(তাতরীজু রিয়াজিস সালিহীন, ১ম খণ্ড, ২২০ পৃষ্ঠা)

আল্লামা আলুসী (রহ.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেনÑ“পুরুষদের নিজের জন্য যে সকল জ্ঞান অর্জন করা ফরজ, সেগুলো তার পরিবার-পরিজনকেও শিক্ষা দেয়া ফরজ। তবে কিছু সংখ্যক মুফাসসির ‘আনফুস’ শব্দে সন্তানদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করেছেন। কেননা, হাদীসের আলোকে সন্তানকে পিতার অংশ সাব্যস্ত করা হয়েছে।” অতঃপর তিনি এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেনÑ“ঐ ব্যক্তির উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক, যে বলেছেÑহে পরিবার-পরিজন! তোমাদের নামায, তোমাদের রোযা, তোমাদের যাকাত এবং তোমাদের মিসকীন, ইয়াতীম ও প্রতিবেশীদের হক যথাযথভাবে আদায় কর। তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে তার সাথে জান্নাতে একত্রিত করবেন।” কোন কোন আলেম এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, “কিয়ামত দিবসে ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে কঠিন শাস্তির সম্মূখীন হবে যে তার পরিবারকে অজ্ঞ রেখেছে।”

(তাফসীরে রূহুল মা‘আনী, ২৮ খ-, ৪৮৫ পৃষ্ঠা)

এ পর্যায়ে ইল্মের ফজীলত সম্পর্কিত কতিপয় আয়াত উল্লেখ করা হচ্ছে, যাতে পুরুষ ও মহিলা উভয়ে অন্তর্ভুক্ত।

আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন —

قُلۡ ہَلۡ یَسۡتَوِی الَّذِیۡنَ یَعۡلَمُوۡنَ وَالَّذِیۡنَ لَا یَعۡلَمُوۡنَ

“আপনি বলুন, যারা জ্ঞানী আর যারা অজ্ঞ, তারা কি সমান হতে পারে?।”

(সূরাহ যুমার, আয়াত নং ৯)

অত্র আয়াতে বলা হয়েছে–জ্ঞানী ও অজ্ঞ এক সমান নয়। কেননা, ধর্মের জ্ঞান মানুষকে আলোকময় পথ দেখায়, মুক্তির পথ প্রদর্শন করে এবং কু-সংস্কার ও কুকর্ম থেকে বিরত রাখে। পক্ষান্তরে অজ্ঞতার মধ্যে এসব বৈশিষ্ট্য নেই। বরং অজ্ঞতা হল পুরোপুরি অন্ধকার। যার কারণে জেনে-বুঝে পুরোপুরি দ্বীনের উপর চলা তার জন্য কঠিন হয়। এ কারণে এ আয়াতে জ্ঞানী ও অজ্ঞ এক সমান নয় বলে প্রত্যেক মুসলমান নারী ও পুরুষকে ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষার প্রতি অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।

অন্য আয়াতে ইরশাদ করা হয়েছে–

اِنَّمَا یَخۡشَی اللّٰہَ مِنۡ عِبَادِہِ الۡعُلَمٰٓؤُا

“আল্লাহকে ভয় করে তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে কেবল আলেমরাই।” (সূরাহ ফাতির, আয়াত নং ২৮)

এ আয়াতে ধর্মীয় জ্ঞানের ফজীলত স্পষ্ট করা হয়েছে যে, ইলমে দ্বীন মানুষের অন্তরে আল্লাহর ভয়-ভীতি ও তাকওয়া সৃষ্টি করে। ফলে সে আল্লাহর আজাব ও শাস্তির ভয়ে যাবতীয় অন্যায় থেকে বিরত থাকে। পক্ষান্তরে যার কাছে ধর্মীয় জ্ঞান নেই, সে আল্লাহকে চিনবে না এবং সে ন্যায়-পরায়ণতা সম্পর্কেও অবগত হতে পারবে না। ফলে তার পক্ষে তাকওয়া অর্জন করা এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা সহজ নয়।

উক্ত হুকুম পুরুষ-মহিলা সবার জন্য। তাই মহিলারাও ইলম অর্জন করে আল্লাহভীতি হাসিল করতে পারে।

অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা করেন–

یَرۡفَعِ اللّٰہُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مِنۡکُمۡ ۙ وَالَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡعِلۡمَ دَرَجٰتٍ

“আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমানদার এবং যাদেরকে ইল্ম দান করা হয়েছে, তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিবেন।” (সূরাহ মুজাদালা, আয়াত নং ১১)

এই আয়াতে জ্ঞানীদের মর্যাদা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। যদি মহিলারা ইলমে দ্বীনের জ্ঞান থেকে দূরে থাকে, তাহলে তারা এই ফজীলত থেকে বঞ্চিত থেকে যাবে। সুতরাং তাদের পক্ষেও ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের জন্য কষ্ট-সাধনা করতে হবে।

অন্য স্থান আল্লাহ তা‘আলা করেন–

فَلَوۡلَا نَفَرَ مِنۡ کُلِّ فِرۡقَۃٍ مِّنۡہُمۡ طَآئِفَۃٌ لِّیَتَفَقَّہُوۡا فِی الدِّیۡنِ

“কেন তাদের প্রত্যেকটি দলের একেকটি অংশ বের হলো না, যেন তারা দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করে?” (সূরাহ তাওবা, আয়াত নং ১২২)

আল্লামা আলুসী (রহ.) এর ব্যাখ্যায় বলেন, অনেক তাফসীর বিশারদগণের মতে এখানে “বের হওয়া” থেকে জ্ঞান অর্জনের জন্য বের হওয়া উদ্দেশ্য।”

(তাফসীরে রূহুল মা‘আনী)

এই আয়াতে জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে সফর করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। যদি মহিলাদের জন্য সন্নিকটে প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জনের উপায়-উপকরণ না থাকে, তাহলে তারাও শরীয়া দিকনির্দেশনা মুতাবিক শর্তসাপেক্ষে সফর করতে পারবে।

এসব আয়াতে যদিও মহিলাদের বিষয়টা ভিন্নভাবে আলোচনায় আনা হয়নি, কিন্তু সঠিক মত অনুসারে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের এসব নির্দেশসমূহ পুরুষদের ন্যায় মহিলাদের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। এখানে স্বতন্ত্রভাবে মহিলাদের বিষয়টা উল্লেখ না করা এমনই, যেভাবে নামায, রোযা, হজ্ব ও যাকাত-এর ব্যাপারে তাদের কথা স্বতন্ত্রভাবে উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু তারা সেই হুকুমের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত।

(এ পর্যন্ত পবিত্র কুরআনের আলোকে মহিলাদের দ্বীন শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। এরপর হাদীসের আলোকে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Exit mobile version